পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ, ৩২ চাকরিজীবীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে ইসি

, নির্বাচন

স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2024-01-11 15:24:48

সদ্য শেষ হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের আগে বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা ও প্রচারণা সভায় থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্তত ৩২ জন সরকারি চাকরিজীবীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

সারাদেশে নির্বাচন হওয়া ২৯৯ আসনের মধ্য ১৩টি আসনে এসব চাকরিজীবী পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানোর ঘটনায় ভোটের আগে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি তাদের তলব করে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। সেই সময়কার তদন্ত প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনে পাঠানোর পর পর্যালোচনা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। 

এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। ওই আইনে অপরাধভেদে বিভাগীয় মামলা, তিরস্কার, পদাবনতি, চাকরিচ্যুতসহ বিভিন্ন ধরনের সাজার বিধান রয়েছে। 

এই ৩২ কর্মকর্তা ছাড়াও বিভিন্ন সংসদীয় আসনের সরকারি চাকরিজীবিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেছে। এসব অভিযোগের তদন্ত প্রক্রিয়া চলামান রয়েছে। তাদের মধ্য দেখা যায় নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সরকারদলীয় সংসদ-সদস্য মো. নজরুল ইসলাম বাবুর স্ত্রী ডা. সায়মা আফরোজ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিত চন্দ ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের যুগ্মসচিব একেএমজি কিবরিয়ার নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়া সরকারি চাকরিবিধির লঙ্ঘন কি না, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিতে যাচ্ছে ইসি। ইসি সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, সরকারি কয়েকজন চাকরিজীবী চাকরিবিধি লঙ্ঘন করার ঘটনায় কমিশন ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। তবে কতজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা এ মুহূর্তে বলতে পারছি না।

ইসি সূত্রে জানা যায়, যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তারা ঢাকা-১৮, গাজীপুর-৩, নারায়ণগঞ্জ-২, ঠাকুরগাঁও-২, নাটোর-৪, সিরাজগঞ্জ-৫, যশোর-৫, কুমিল্লা-২ ও ১১, বরিশাল-৫, পাবনা-৩, নেত্রকোনা-১ ও বগুড়া-২ নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালিয়েছেন। এর আগে নির্বাচনী প্রচার চলাবস্থায় কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় ইসি। 

নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়া বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি হামিদুল আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তিনি বগুড়া-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাজাদী আলম ওরফে লিপির পক্ষে প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন। 

এছাড়া যশোর-৫ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী স্বপন ভট্টাচার্য্যরে পক্ষে সরাসরি প্রচার চালানোয় মুক্তেশ্বরী ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মো. মামুনর আর রশিদ ও ঢাকুরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ তাপস কুমার কুন্ডুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এছাড়া ঢাকার নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়ে ঢাকা-১৮ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালানোর ঘটনায় অন্তত তিনজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

গাজীপুর-৩ আসনে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী রুমানা আলী। নতুন মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছেন তিনি। এ প্রার্থীর পক্ষে ৫ ডিসেম্বর প্রচার চালানোর দায়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার সহকারী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা শওকত আলী মৃধার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে ইসি। 

কুমিল্লা-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিমা আহমাদের পক্ষে প্রচারে অংশ নেওয়ায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। 

এবারের নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলে ১ হাজার ৯৬৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তারমধ্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২২২টি আসন পেয়ে নিরুঙ্কুষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। স্বতন্ত্র প্রার্থী ৪৩৭ মধ্য ৬২ জন প্রার্থী নির্বাচিত হয়। আর জাতীয় পার্টি থেকে ১১ জন। বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টি ১ জন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ থেকে একজন। কল্যান পার্টি থেকে একজন নির্বাচিত হয়েছেন। এবারের নির্বাচনে ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসি কাজী হাবিবুল আওয়াল। 

এ সম্পর্কিত আরও খবর