উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে ‘ভোট’কে চূড়ান্ত লড়াই মানছে আ.লীগ

বিবিধ, নির্বাচন

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসেপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 18:56:28

আর কয়েক ঘণ্টা পর শুরু হচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। সারাদেশের ২৯৯টি আসনে রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একযোগে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ভোটগ্রহণ হবে। এবার মোট ভোটার ১০ কোটি ৪২ লাখ। এই ভোটের মাধ্যমেই নির্ধারণ হবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। ভোট যুদ্ধে দল ও প্রার্থীদের জয়-পরাজয় দেখার প্রতীক্ষায় পুরো জাতি।

টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অনেকটাই নির্ভার। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশবাসী এবারও তাদের ভোট দেবে বলে মনে করেন দলটির শীর্ষনেতারা। তাই  এই ‘ভোট’কে চূড়ান্ত লড়াই হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীনরা। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে, দেশের উন্নয়নের সুফল সুষমভাবে ছড়িয়ে দিয়ে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন তারা।

আওয়ামী লীগের পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য তুলনামূলক অনুকূল পরিবেশে হচ্ছে। টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সুবিধা তারা পাচ্ছে। গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগের উন্নয়নের চিত্রকে তুলে ধরে এবার তারা ভোটাদের কাছে গেছে। ভোটারদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়াও পেয়েছেন তারা। 

তাদের মতে, এবারের নির্বাচনে বিজয়ী হলে জামায়াত-শিবিরের অপরাজনীতির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন সম্ভব হবে। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এবারই প্রথম অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচন ছিল বিএনপিবিহীন, অনেকটা একতরফা ও নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ১০ বছর পর ভোটের লড়াইয়ে মুখোমুখী হচ্ছে নৌকা ও ধানের শীষ।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই শীতের হিম হাওয়ায় নির্বাচনের উত্তাপ ছড়াতে থাকে। নানা নাটকীয়তা, সংশয় ও উৎকণ্ঠা দূর করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল। সবদলের অংশগ্রহণেই হতে চলেছে নির্বাচন।

গত নভেম্বরের শেষ থেকে দলগুলো প্রার্থী বাছাই, মনোনয়নপ্রত্র গ্রহণ, দাখিল, যাচাই-বাছাই, প্রত্যাহার ও সর্বশেষ প্রতীক বরাদ্দ করা হয়। ১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় প্রার্থীদের একটানা প্রচারণা। দেশের বেশির ভাগ আসনে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থীদের ছিল একচেটিয়া প্রচারণা। তবে বিএনপি ও ঐক্যফন্টের প্রার্থীরা ‘কৌশলী প্রচরণা’ চালিয়েছেন। কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা সমান ভাবেই প্রচারণা চালিয়েছেন। গত ১৮ দিনের প্রচার লড়াইয়েও আভাস মিলেছে, ‘কেহ কারে নাহি ছাড়ে, সমানে সমান।’

নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেশের কমপক্ষে ২ শতাধিক আসনে হামলা, মামলা ও বাধার সম্মুখীন হয়েছেন সরকারবিরোধী জোটের প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাও আক্রান্ত হয়েছেন অনেকগুলো আসনে। আওয়ামী লীগ কর্মীদের ওপর হামলা, নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগসহ হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।

দেশের বিভিন্ন জেলা ও সংসদীয় আসন সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলেও তথাকথিত ‘উৎসবমুখর’ হচ্ছে না এবারের নির্বাচন। উৎসবের আমেজ শুধু সরকারি দলের প্রার্থীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বিরোধী জোটের প্রার্থীরা অনেকটা শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশে নীরবে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন। অনেক আসনে ধানের শীষের পোস্টারও সাঁটাতে পারেননি ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীরা। বিপরীতে সারাদেশ ছেয়ে গেছে নৌকার নির্বাচনী পোস্টারে। শহরের অলি-গলি, পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জে পর্যন্ত সর্বত্র ভাসছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী গান ‘জয় বাংলা, জিতবে এবার নৌকা’।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়াবার নির্বাচন। এই নির্বাচন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাত থেকে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষার নির্বাচন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হলে বাংলাদেশ সাম্রাজ্যবাদীদের দখলে চলে যাবে। শায়েখ রহমান বাংলা ভাইদের মতো মানুষ দেশের জনগণের ওপর আবারো নির্যাতন চালাবে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে ভোট বিপ্লব হবে দুর্নীতি ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে। যারা সন্ত্রাস দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চায় তাদেরকে বাংলাদেশের মানুষ ভোট দেবে না।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর