ঢাকা-৯: ‘অভিজ্ঞ’ সাবেরকে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছেন ‘পরিশ্রমী’ আফরোজা

বিবিধ, নির্বাচন

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 01:21:21

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি মাত্র ৩ দিন। এবারের ভোটের পরিবেশ আগের চেয়ে তুলনামূলক ভিন্ন। আগের নির্বাচনগুলোর প্রচারণায় যেমন পাল্টাপাল্টি সহিংসতা ও রক্তপাত ঘটতো এবার সেসব অনেক কম। ঢাকা-৯ আসনও এর ব্যতিক্রম নয়।

রাজধানীর সবুজবাগ, খিলগাঁও ও মুগদা থানা নিয়ে ঢাকা-৯। মোট ভোটার ৪ লাখ ২৫ হাজার ৫৮২ জন। প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন ৭ জন প্রার্থী। তারা হলেন- বিএনপি’র ধানের শীষের প্রার্থী আফরোজা আব্বাস, ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টি’র (এনপিপি) আম মার্কার প্রার্থী মাহফুজা আক্তার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাত পাখার প্রার্থী মোহাম্মদ মানিক মিয়া, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) টেলিভিশন মার্কায় প্রার্থী মোহাম্মদ শফি উল্লাহ চৌধুরী, মুসলিম লীগের হারিকেন মার্কার প্রার্থী মো. আ. মোতালেব, জাকের পার্টির গোলাপ ফুলের প্রার্থী মো. হুমায়ন কবীর ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী সাবের হোসেন চৌধুরী।

জানা গেছে, ২০০৮ সালে আসন পুনর্বিন্যাসের আগে ঢাকা-৮ ও ঢাকা-৯ এক সঙ্গে ঢাকা-৬ নামে পরিচিত ছিল। এখানে (বর্তমান ঢাকা-৯) ১৯৯৬ সাল থেকে প্রতিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ছিলেন সাবের হোসেন চৌধুরী। এর মধ্যে ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে তিনি জয়লাভ করেন। এবারো তিনি প্রার্থী। ভোটের মাঠে তার অভিজ্ঞতা ২২ বছর, সে তুলনায় জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস নবাগত। প্রচার-প্রাচারণায় যদিও সাবের হোসেন এগিয়ে তারপরও ভোট সুষ্ঠু হলে আফরোজা চমক দেখাতে পারেন বলে মনে করেন স্থানীয় ভোটাররা।

বৃহস্পতিবার (২৭ ডিসেম্বর) খিলগাঁও ও মুগদা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তাঘাট, বাসা-বাড়ি, দোকানপাটে নৌকার পোস্টারে ছেয়ে গেছে। দুয়েক জায়গায় হাতপাখার পোস্টার দেখা গেলেও চোখে পড়েনি ধানের শীষের পোস্টার বা ব্যানার।

জানা গেছে, সাবের হোসেনের দুই দশকের বেশি সময় ধরে নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। বিপরীতে আফরোজা বিপুল উদ্যম নিয়ে তার প্রচারণা চালিয়েছেন হামলা ও মামলা উপেক্ষা করে। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মাঠে সক্রিয় ছিলেন বেশি। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় পথসভা, মতবিনিময় সভা, শোভাযাত্রা, গণসংযোগ করেছেন। তবে সাবের হোসেন সবার আগে ভোটারদের হাতে ভোটার স্লিপ পৌঁছেছেন। ভোটারদের কাছে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে লিফলেটও বিতরণ করেছেন তিনি।

গত ১২ ডিসেম্বর গণসংযোগে নেমে হামলার মুখে পড়েন আফরোজা আব্বাস। এ পর্যন্ত তার গণসংযোগে ৪ বার হামলা হয়েছে। তবু তিনি প্রচার বন্ধ করেননি। সর্বশেষ ২৩ ডিসেম্বর মানিকনগর এলাকায় হামলার শিকার হন। পরবর্তীতে তার কর্মীরা বাঁশ ও লাঠিসোটা নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় মিছিল করলে সাবের হোসেন সেটা নিয়ে কমিশনে আপত্তিও জানান।

বৃহস্পতিবার দুপুরে খিঁলগাঁও মডেল কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মলয় কুমাড় সরকারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘অন্যান্য আসনে স্থানীয় সাংসদকে নিয়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নানা অভিযোগ থাকলেও ঢাকা-৯ আসনে চিত্র একেবারেই ভিন্ন। এখানে আওয়ামী লীগের মধ্যে তেমন গ্রুপিং নেই। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে সারেব হোসেন এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে আস্থা অর্জন করেছেন। পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবেও তার খ্যাতি আছে, তার ব্যক্তি ইমেজ ভালো।’

ঠিক এমন সময় স্কুলের সামনে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের হাজারো নেতা-কর্মীকে সাবের হোসেনের প্রচারণা চালাতে দেখা গেলো।

অন্যদিকে, আফরোজা আব্বাসের স্বামী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসও ঢাকা-৮ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মির্জা আব্বাস কারাগারে থাকায় আফরোজা আব্বাসই মূল প্রচারণা চালান। সে সময় তিনি প্ররিশ্রমী মনোভাব দেখিয়েছেন। তার পরিশ্রম ও গোছানো পরিকল্পনা সেসময় ভোটারদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী গোলাম মাওলা বলেন, ‘আফরোজা আব্বাসকে আমরা চিনি তার স্বামীর কারণে। তিনি যদিও নতুন তবে এ এলাকায় বিএনপির সমর্থকরা তাকে ভোটে সহায়তা করবে। ভোট সুষ্ঠু হলে তিনি সাবের হোসেনকে চ্যালেঞ্জ দিতে পারেন।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর