কুড়িগ্রামে জাপার ‍দুর্গে ভাগ বসাতে চায় বিএনপি

বিবিধ, নির্বাচন

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | 2023-09-01 16:38:45

কুড়িগ্রাম থেকে: ব্রহ্মপুত্র বিধৌত কুড়িগ্রামের ৪টি আসনকে জাতীয় পার্টির ঘাঁটি বলা হয়ে থাকে। কারণ ১৯৮৬ সালের পর থেকে এসব আসনে ব্যতিক্রম ছাড়া ঘুরে ফিরে জাতীয় পার্টি তথা লাঙ্গলের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়ে এসেছে।

এসব আসনে জাতীয় পার্টির পর পরেই রয়েছে আওয়ামী লীগের জনসমর্থন। আর একেবারে তলানিতে রয়েছে বিএনপির সমর্থন। শুধুমাত্র কুড়িগ্রাম-১ আসনে বিএনপির প্রার্থীরা মোটামুটি ভোটের লড়াইয়ে থেকেছে। অন্যান্য আসনে বেশিরভাগ নির্বাচনে জামানত খুইয়ে লজ্জাজনক পরাজয় বরণ করতে হয়েছে।

তবে এবারের প্রেক্ষাপট অনেকটা বদলে গেছে। প্রত্যেকবার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা কুড়িগ্রাম-১ (ভুরঙ্গামারী, নাগেশ্বরী) আসনে এবার জয়ের স্বপ্ন দেখছে বিএনপি। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শিল্পপতি সাইফুর রহমান রানা। ২০০১ সালে জাতীয় প্রার্থীর কাছে মাত্র ২ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন। ওই নির্বাচনে ভোট পেয়েছিলেন ৮৭ হাজার।

২০০৮ সালে আবার মহাজোট গঠিত হলে ওই নির্বাচনে তার বিএনপি প্রার্থীর ভোট বেড়ে ৯২ হাজার হয়। কিন্তু মহাজোটের কল্যাণে তার প্রতিদ্বন্দ্বির ভোট দুই লাখ ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু এবার এই আসনটি উন্মুক্ত রাখা হয়েছে মহাজোট থেকে। অর্থাৎ জাতীয় পার্টি প্রার্থী লাঙ্গল নিয়ে ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা নিয়ে লড়ছেন।

জাতীয় পার্টি তাদের টানা ৪ বারের এমপি একেএম মোস্তাফিজুর রহমানকে (মোস্তাক) এবারও মনোনয়ন দিয়েছে। অতীত রেকর্ড তাকে এগিয়ে রাখলেও জাপার সাংগঠনিক দু্র্বলতা, ভোটের পরে এলাকায় সময় না দেওয়া বিএনপির প্রার্থীর জন্য শাপেবর হয়ে উঠতে পারে। আবার কেউ কেউ আওয়ামী লীগের ব্যাপক উন্নয়ন, ঘরে ঘরে চাকরি প্রদানের কারণে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন। তিন প্রার্থীই ভোটের মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। জমজমাট বলতে যা বুঝায় সবই রয়েছে এখানে।

কুড়িগ্রাম-২ (সদর, রাজারহাট, ফুলবাড়ি) আসনে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কোনো প্রার্থী নেই। দুই দলেই ছেড়ে দিয়েছে শরীকদের। দু’ই সাবেক আওয়ামী লীগার এখানে ভাড়াটিয়া প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন। যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা না দেখে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ ছেড়ে একজন এরশাদের লাঙ্গলের মুঠো, আরেকজন গণফোরামে যোগ দিয়ে ধানের শীষ নিয়ে মাঠে রয়েছেন। গণফোরাম প্রার্থী আমসাআ আমিন ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আর লাঙ্গলের প্রার্থী পনির উদ্দিন আহমেদ ছিলেন জেলার সিনিয়র-সহসভাপতি।

প্রধান দুই দলের প্রার্থী না হলেও তাদের আর্শিবাদপুষ্ট হওয়ায় এই দু’জনের মধ্যে এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সীমাবদ্ধ থাকার সম্ভাবনা দেখছেন কুড়িগ্রামের বাসিন্দারা। সদর, রাজারহাট ও ফুলবাড়ি নিয়ে গঠিত এই আসনে উভয় দলের প্রার্থীদের জমজমাট ক্যাম্পেইন দেখা গেছে। রাস্তার উপর পোস্টার ব্যানারের মাইকিংয়ে সহাবস্থান লক্ষ্যনীয়।

কুড়িগ্রাম-৩ (চিলমারী ও উলিপুরের আংশিক) নিয়ে গঠিত এ আসনে শুধু ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়। ১৯৮৬ সালের পর থেকে বর্তমান পর‌্যন্ত সব সময় জাপার প্রার্থীরা ঘুরেফিরে এমপি নির্বাচিত হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি শুধু একবার ২০০১ সালে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যায়। এরপর বেশিরভাগ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা জামানত খুইয়েছেন।

এই আসনটিতেও মহাজোট হয়নি। উন্মুক্ত থাকায় আওয়ামী লীগ ও জাপার প্রার্থীরা নিজ দলের মার্কা নিয়ে লড়ছেন। এখানে জাপার প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান এমপি ডা. আক্কাস আলী সরকার, আওয়ামী লীগের এমএ মতিন ও বিএনপির তাসভীর উল ইসলাম।

এই আসনে জাপার প্রার্থীকে অনেকে এগিয়ে রাখতে চাইছেন। তবে এখানেও জাপার সাংগঠনিক দুর্বলতা ও আওয়ামী লীগের মাঠে থাকার সুযোগে বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

কুড়িগ্রাম-৪ (রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী আংশিক, উলিপুর আংশিক) নিয়ে গঠিত এই আসনটির মতো আর কোনো আসন এতো বেশি ভাঙ্গা-গড়ার কবলে পড়েনি। ১৯৮৬ সালের পর শুধু ২০০৮ সাল ছাড়া প্রত্যেক নির্বাচনে জিতেছে জাপা। আর ২০০৮ সালে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ প্রার্থী।

বিএনপি কখনই সুবিধা করতে পারেনি। বিএনপির চেয়ে জামায়াতের ভোট কিছুটা বেশি ধরা হয়। যে কারণে এই আসনটি ২০০১ সাল থেকে প্রতিবারেই জামায়াতকে ছেড়ে দিয়ে যাচ্ছে। এবারও জামায়াতের প্রার্থীই জোটের লড়াইয়ে রয়েছে।

উন্মুক্ত এই আসনে জাপা ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা লড়ছে দলীয় প্রতীকে। এখানে জাপার প্রার্থী হয়েছেন আশরাফ উদ দৌলা, আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছেন জাকির হোসেন। যিনি ২০০৮ সালে জাপার প্রার্থীকে পরাজিত করে বিজয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হন।

ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন জামায়াত নেতা আজিজুর রহমান। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন গণজাগরন মঞ্চের আলোচিত নেতা ইমরান এইচ সরকার ও ট্রথ পার্টির চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক গোলাম হাবীব দুলাল নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। আসনটিতে ত্রি কিংবা চর্তুমুখী লড়াইয়ের আঁচ করছেন অনেকে।

জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুর রহমান রানা বার্তা২৪.কমকে বলেন, যা দেখছি তাতে পুরোপুরি হতাশ আমরা। তবে যদি সুষ্ঠু ভোট হয়, আর মানুষ ভোট দিতে পারে তাহলে চারটি আসনেই ঐক্যফ্রন্ট জিতবে। তবে মনে হয় না আমাদের জিততে দিবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর