আওয়ামী লীগের কোন্দলে ঠাকুরগাঁওয়ে সুবিধায় ঐক্যফ্রন্ট

বিবিধ, নির্বাচন

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ ও নাহিদ রেজা | 2023-08-10 04:12:14

ঠাকুরগাঁও থেকে: উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা ঠাকুরগাঁও এর তিনটি আসন এবার ভাগ হয়ে যেতে পারে। একটিতে আওয়ামী লীগের সহজ জয়, একটিতে হাড্ডাহাড্ডি অপরটিতে পরাজয়ের শঙ্কা দেখছেন স্থানীয়রা।

ভিভিআইপি আসন ঠাকুরগাঁও-১ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারনী ফোরাম প্রেসিডিয়াম’র সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন। একাধিক দফায় তিনি এই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। ঠাঁই হয়েছিলো মন্ত্রিসভাতেও।

তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দু’জনের বাড়িই উত্তরের সীমান্ত ঘেষা এই জেলার সদরে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী একাধিক দফায় নির্বাচিত হলেও মির্জা ফখরুল ইসলাম জিতেছেন মাত্র একবার ২০০১ সালে।

এই আসনে রয়েছে আওয়ামী লীগের বিশাল ভোটব্যাংক। সঙ্গে ১ লাখ ২০ হাজার সংখ্যালুঘু ভোটার আওয়ামী লীগের নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে থাকে। আবার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এলাকা মানুষের কাছে রাজনীতিবীদের তুলনায় শিক্ষক হিসেবে অধিক পরিচিত। ভদ্র ও সজ্জন হিসেবে জানেন এলাকার লোকজন। তারও রয়েছে পারিবারিক ঐতিহ্য। এখানে আওয়ামী লীগের সহজ জয়ের সম্ভাবনা থাকলেও মির্জা ফখরুলের ব্যক্তিত্ব ও আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

ঠাকুরগাঁও-১ আসনে এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থী সমানতালে নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যান্য এলাকায় বিএনপির প্রার্থীর পোস্টার ব্যানার কম দেখা গেলেও এই আসনে দু’জনেই রয়েছেন সমান্তরালে। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, এখানে আমাদের বিশাল কর্মী বাহিনী ও স্টং সংগঠণের কারণে এতো পোস্টার ব্যানার দেখতে পারছেন। কিছু কিছু ছিঁড়ে ফেলছে তারপরও অনেক রয়ে গেছে।

বালিয়াডাঙ্গি, হরিপুর ও রাণীশংকৈল উপজেলার আংশিক নিয়ে গঠিত ঠাকুরগাঁও-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দবিরুল আলমের বিকল্প দেখছেন না কেউ। আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী ১৯৯১ সাল থেকে টানা  ৫ বারসহ মোট ৬ দফায় এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রাথী হিসেবে রয়েছে জামায়াত নেতা আব্দুল হাকিম। যিনি ২০০১ ও ২০০৮ সালেও দবিরুল ইসলামের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন।

অন্যান্যবার অল্পভোটের ব্যবধানে হারার কারণে সম্ভাবনা থাকলেও এবার তিনি মাঠে নামতে পারেন নি। গাড়ি পোড়া মামলায় এখন জেল হাজতে রয়েছেন। তারপক্ষে তেমন প্রচারণাও নেই। আবার যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে মানুষ আগের থেকে সচেতন হওয়ায় এবারও দবিরুল ইসলামের পাল্লাই ভারী দেখছেন ভোটাররা।

সবচেয়ে জটিল সমীকরণ তৈরি হয়েছে পীরগঞ্জ ও রাণীশংকৈল’র আংশিক নিয়ে গঠিত ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে। খোদ প্রার্থীরাও বুঝতে পারছে না ঠিক কার কার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে যাচ্ছে। এখানে মহাজোট আছে আবার নেই, দুটাই ঠিক। আসনটিতে বিএনপির প্রার্থীরা কখনই সুবিধা করতে পারেনি। বরাবরেই আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা, দু’বার বাম দলের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন।

আসনটি আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিয়েছে শরীকদল ওয়ার্কার্স পার্টিকে। নৌকা মার্কা নিয়ে লড়ছেন ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা বর্তমান সংসদ সদস্য ইয়াসিন আলী। ভোটের সমীকরণে সুবিধায় থাকার কথা থাকলেও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এমদাদুল হক বিদ্রোহী হওয়ায় চিত্র অনেকটা বদলে যাচ্ছে। আবার জাতীয় পার্টিরও প্রার্থী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাফিজ উদ্দিন আহমেদ কয়েকবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তারও রয়েছে ভালো একটি ভোটব্যাংক। তিনিও ভালো ভোট কাটবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে একাট্টা ঐক্যফ্রন্ট। অন্যান্য বার সফল হতে না পারলেও এবার মহাজোটের বিভক্তিতে স্বপ্ন দেখছেন ধানের ফলন ঘরে তোলার জন্য। কেউ কেউ মনে করেন, মহাজোটের ভোট তিন ভাগ হয়ে যাচ্ছে। যার সুফল পেতে পারেন বিএনপি । অর্থাৎ বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এই আসনে চর্তুমূখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে।

মহাজোটের প্রার্থী ইয়াসিন আলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, মানুষ উন্নয়নের পক্ষে ভোট দিতে প্রস্তুত। একটা গ্রুপ সমস্যা করার চেষ্টা করেছিলো। সেটা ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে। আমি আশা করছি ভালো ফলাফল হবে। তার কাছে প্রশ্ন ছিলো আপনি কোন কোন প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন? জবাবে বলেন, এটা বলাটা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিএনপির প্রার্থী ভোট পাবে, আবার জাপার প্রার্থীও শক্তিশালী। 

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এমদাদুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, এখানে আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মী আমার সঙ্গেই রয়েছে। নৌকা যাকে দেওয়া হয়েছে তার কোনো ভোট নেই। নৌকা নিলজ্জভাবে হেরে যাবে। তার পুলিং এজেন্ট দেওয়ার মতো লোক নেই। আমি মনে করছি বিএনপির প্রার্থীর সঙ্গে আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এলাকার লোকজন আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেখতে চায়। তারা চায় উন্নয়ন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জন্য তারা রাস্তাও অবরোধ করেছিলো।

এ সম্পর্কিত আরও খবর