পাবনা-৪: অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ধানের শীষের অবস্থা নাজুক

বিবিধ, নির্বাচন

আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 10:21:00

পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনে নির্বাচন করছেন ধানের শীষের প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব। কিন্তু দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকায় তার প্রাচারণায় নামেননি সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য সিরাজুল ইসলাম সরদারসহ তার সমর্থিত নেতাকর্মীরা।

ফলে সিরাজুল ইসলামের সমর্থিত ঈশ্বরদী উপজেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত এবং পৌর কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় বিএনপি থেকে জেলা কমিটিকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার হাবিবুর রহমান তোতা বলেন, ‘গত বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় বিএনপির সহদফতর সম্পাদক মো. মুনির হোসেন স্বাক্ষরিত একটি চিঠি আমাদের হাতে এসেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণার পরও ধানের শীষের পক্ষে মাঠে না নামা এবং উল্টো প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখায় সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বিরক্ত। অতীতেও এখানে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে পাবনা ৪ আসনটি আমাদের থাকা শর্তেও হারাতে হয়েছে। এর পুনরাবৃত্তি হোক সেটা কেউ চায় না।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ধানের শীষের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব তৃণমূল নেতাদের নির্বাচনের মাঠে নামানোর চেষ্টা করে নিষ্ফল হয়ে জেলা কমিটির স্মরণাপন্ন হন। জেলা বিএনপি বৃহস্পতিবার (২০ ডিসেম্বর) উপজেলা ও পৌর বিএনপির পাঁচজন করে নেতা নিয়ে সমঝোতার জন্য পাবনায় বৈঠক করেন। এ সময় উপজেলা ও পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বৈঠকে জেলা কমিটি তৃণমূলের নেতাদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণের অনুরোধ জানায়। শুধুমাত্র উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন বিশ্বাস ছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সিরাজুল ইসলাম সরদারসহ তার সমর্থিত নেতারা হাবিবের ধানের শীষের প্রচারণায় অংশ নিতে রাজি হননি।

তিনি আরও জানান, কারণ বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সিরাজুল ইসলাম সরদারকে মনোনয়ন না দেওয়ায় চরমভাবে হতাশ হন। এখানে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের সিংহভাগ নেতাকর্মীই সিরাজ সরদারের মনোনয়নে একাট্টা ছিলেন।

সূত্রে জানা গেছে, সিরাজুল ইসলাম সরদার ও হাবিবুর রহমান হাবিবের মধ্যে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব প্রায় দীর্ঘদিনের। এ দ্বন্দ্ব নিরশন না হওয়ায় প্রার্থিতা নিয়ে ধানের শীষের অবস্থা এখনো পর্যন্ত নাজুক। এ কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার কাজে হাবিব বিভিন্ন স্থানে দলীয় সভা করে মানঅভিমান ভাঙ্গানোর চেষ্টায় আছেন।

অভ্যন্তরীণ এ দ্বন্দ্বের কারণে বিগত চারবার আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে বলে মনে করেন বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী।

এদিকে চলতি বছরের গত ২৭ নভেম্বর ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু ঢাকায় র‌্যাবের হাতে সাপের বিষসহ গ্রেপ্তার হওয়ার পর দলীয় গ্রুপিং মুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়ার নেতার অভাব দেখা দিয়েছে।

ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র মোখলেছুর রহমান বাবলু বলেন, ‘যেকোনো ভাবে সকল ভেদাভেদ ভুলে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে যে তিনটি পক্ষ আছে, তারা এখনো মাঠে নামেনি। এ পরিস্থিতিতে জেলা কমিটির উদ্যোগও ব্যর্থ হওয়ার পর কেন্দ্র থেকে কমিটি বিলুপ্তর মতো সিন্ধান্ত এসেছে।’

উল্লেখ্য, স্বৈরাচার পতনের পর ১৯৯১ সালে তদানীন্তন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাবিবকে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সিরাজ সরদার বিজয়ী হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ হাবিবকে মনোনয়ন না দিয়ে শামসুর রহমান শরীফকে মনোনয়ন দিলে হাবিব বিএনপিতে যোগ দেন। তিনি বিএনপিতে যোগ দিলেও ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৯ সালে নির্বাচনে সিরাজ সরদারকেই ধানের শীষের মনোনয়ন দেয়া হয়। ২০০১ সালে হাবিবুর রহমান হাবিব বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে কুড়াল প্রতীকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে হেরে যান। তবে ১৯৯৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পরপর চারবার বিএনপি প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে বর্তমান ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ সংসদ সদস্য নির্বাজিত হয়েছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর