রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ প্রার্থীদের

বিবিধ, নির্বাচন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কক্সবাজার, বার্তা ২৪.কম | 2023-08-10 02:56:02

হামলা, মামলা, গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া ও ভাঙচুরসহ নানান অভিযোগের ঝুড়ি নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হন কক্সবাজারের চারটি আসনের প্রার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।

সভার শুরুর কিছুক্ষণ পরই পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ জানান চারটি আসনের বিএনপি ও আওয়ামী লীগসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী এবং তাদের প্রতিনিধিরা।

কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের ২৩ দলীয় জোটের প্রার্থী লুৎফর রহমান কাজল অভিযোগ করে বলেন, রামুতে আমাকে কোন অফিস করতে দেওয়া হয়নি। নির্বাচনী প্রচারগাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়েছে। আমাদের ওপর হামলা করে উল্টো আমাদেরকে মামলা দেওয়া হয়েছে। এরকম মামলার সংখ্যা ১১ টি। এসব মামলায় বিএনপির সাড়ে ৩ শ লোকজনকে আসামী করা হয়েছে। এসব ঘটনার পর সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করাও মুশকিল।

একই আসনের মহাজোটের প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, বিপরীত প্রার্থীর লোকজন আমার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নাজেহাল ও মারধর করছেন। বিএনপির প্রার্থীর লোকজন খুবই উত্তেজিত অবস্থায় আছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপির প্রার্থী সবাইকে লাঠি হাতে নিতে বললেন। তাদের এত উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণেই তার সমর্থকরা উত্তেজিত অবস্থায় রয়েছে। যদি তিনি এমন বক্তব্য না লিখতেন তাহলে বিষয়টি মুখোমুখি হত না। আমার এক নেতার মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দুইটি নির্বাচনী কার্যালয় পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আমার বিপক্ষে এত অভিযোগ দেয়াও ঠিক না। আমি ঘটনাস্থলে নেই তবুও অভিযোগ করা হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে। নির্বাচনে আমার দিক থেকে কোন বাধা নেই।

কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের ২৩ দলীয় জোটের প্রার্থী হাসিনা আহমেদের প্রতিনিধি ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামীম আরা স্বপ্না বলেন, গণসংযোগকালে গুলিবর্ষণ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় আহত বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের হাসপাতালে দেখার পর হাসিনা আহমেদ থানায় গেলে সেখানে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। ওই সময় থানাতেই দুই রাউন্ড গুলিবর্ষণ করা হয়। ডুলাহাজারায় গণসংযোগকালে হাসিনা আহমেদের উপর আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন হামলা চালায়। এসময় ৩৫ জনের মত আমাদের নেতাকর্মী সমর্থক আহত হয়। এছাড়াও অনেক জায়গায় ফাঁকা গুলিবর্ষণ করার ঘটনা ঘটেছে।

একই আসনে মহাজোটের প্রার্থী জাফর আলমের প্রতিনিধি মো. নুরুল আবছার বলেন, তিনি (হাসিনা আহমেদ) থানার ভেতর থেকে নিজেই বের হননি। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তৈরির জন্যই তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে যাননি।

কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) মহাজোটের প্রার্থী শাহিন আক্তারের পক্ষে তার স্বামী ও সাবেক আলোচিত সাংসদ আব্দুর রহমান বদি বলেন, বিএনপির প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী গতকালকেও একটি গাড়ী ভাঙচুর করেছে। এরআগেও গাড়ী ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বারবার অনুরোধ করেছি যাতে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিএনপির প্রার্থীর কারণে যেকোনো মুহূর্তে অঘটন ঘটার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তাই আমি অনুরোধ করছি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অতীতেও তিনি এরকম ঘটনা ঘটিয়েছেন। নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে এসব পরিকল্পনাকারীদের বিরুদ্ধে আপনারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

একই আসনে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ওনার (বদি) দেওয়া বক্তব্যটাকে তদন্ত করে আপনি এ্যাকশনে যান জেলা প্রশাসক মহোদয়। আমরা মিথ্যের আশ্রয় নেই না। আপনার সংস্থার মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত করে দেখেন।

তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ একজন প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করছে। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে একজন প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ার জন্য তারা বেশ ভূমিকা পালন করছে। আমাদের ভোট না দেওয়ার জন্য তারা ভোটারদেরকে আহবান করছে। আমি এধরণের নজির কখনো দেখিনি। বিভিন্ন জায়গায় মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে।

এছাড়াও আরও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা সভায় হামলা, ভাঙচুর, পোষ্টার ছিঁড়ে ফেলাসহ নানান অভিযোগ করেন।

সভায় রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে কক্সবাজারের নির্বাচনী পরিস্থিতি অনেক ভাল। আচরণবিধি লঙ্ঘন হলেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে ইতিমধ্যে মাঠে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। আপনাদের অভিযোগগুলো বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর