রওশনে ঐক্যবদ্ধ আ’লীগ, ভোটারদের দ্বারে বিএনপি

বিবিধ, নির্বাচন

উবায়দুল হক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪ | 2023-08-27 15:57:23

জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ গতবারের মত এবারও মহাজোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসন থেকে। নির্বাচনে তাকে জিতিয়ে আনার জন্য তিনি নির্ভর করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর। এমনকি দলটির নেতাকর্মীদের ওপরই সমস্ত দায়-দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি।

গত ১০ ডিসেম্বর বেগম রওশন এরশাদ ময়মনসিংহ সফর করেন। এরপর বেশ কয়েক দফায় তিনি জেলা, মহানগর, কোতোয়ালী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বসেন। প্রতিটি সভাতেই তাকে বিজয়ী করে আনার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রতি আহবান জানান।

সম্প্রতি জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদেরকে নিয়ে করা এক বৈঠকে রওশন বলেন, নির্বাচন করার জন্য অনেক টাকা-পয়সা প্রয়োজন, আমার সেই টাকা নেই। আমার ‘দুই সন্তান’ জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি আমিনুল হক শামীম এবং মহানগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত-উর-রহমান শান্ত আমার নির্বাচনী ব্যয়ভার বহন করবে।

এরপর নগরীর সিটি কলেজিয়েট স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগ ও জাপার সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে করা এক যৌথ প্রতিনিধি সভায় আ’লীগ নেতাদের উদ্দেশ্যে রওশন বলেন, আমাকে জেতানোর দায়িত্বটা আপনাদের। অর্থাৎ রওশন এবার ভোটের মাঠে নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দিতে পুরোপুরি নির্ভর করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর।

আর আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও ঐক্যবদ্ধভাবে তাকে বিজয়ী করার অঙ্গীকার করেছেন। তাতেই নির্বাচনে রওশনকে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটিতে বিজয়ী করতে আটঘাট বেধে মাঠে নেমেও পড়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। একইসঙ্গে দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো প্রতিদিনই সভা, খণ্ড-খণ্ড মিছিল ও ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনাসহ বিভিন্নভাবে রওশনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এদিকে, এগিয়ে আসা নির্বাচনকে ঘিরে বসে নেই বিএনপির প্রার্থী-সমর্থকরা। আসনটি নিজেদের দখলে নিতে জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ। স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম এ নেতাকে ঘিরে নির্বাচনী হাওয়ায় দুলতে শুরু করেছে ধানের শীষ।

ওয়াহাব আকন্দ ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। প্রায় একযুগ যাবত ময়মনসিংহের বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রাম বলতেই আকন্দ পরিবার। আর এই আকন্দ পরিবারের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছেন আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ। এই পরিবারের ‘টপ টু বটম’ প্রায় সবাই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। দীর্ঘদিন যাবত তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দাবি ছিল ওয়াহাব আকন্দকে এ সদর আসনে প্রার্থী করা হোক। অবশেষে বিএনপির হাই কমান্ড এ বিষয়টি নজর দিয়েছে এবং তাদের পছন্দের প্রার্থী হিসেবে তারা ওয়াহাব আকন্দকেই বেছে নিয়েছে।

এতে করে মাঠের নেতাকর্মীরা অনেক বেশী মাত্রায় খুশি। তারা নিজেদের অবস্থান থেকেই ওয়াহাব আকন্দকে বিজয়ী করে আনতে আধা-জল খেয়ে মাঠে নেমে পড়েছে। আর ওয়াহাব আকন্দের রাজনৈতিক জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন হচ্ছে এ আসনে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন। ফলে তার এ শ্রেষ্ঠ অর্জনটিকে স্বরনালী করে রাখতে তিনি দিন-রাত একাকার করে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।

ধানের শীষের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য ও নগর বিএনপির সাংগঠনিক সদস্য একেএম মাহবুবুল আলম জানান, গত এক সপ্তাহে ওয়াহাব আকন্দ দেড় লক্ষাধিক ভোটারের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন এবং নির্বাচনের বাকি দিনগুলোর মধ্যে কমপক্ষে আরও সাড়ে ৩ লক্ষ ভোটারের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।

দলটির কর্মী-সমর্থকরা জানান, ওয়াহাব আকন্দের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা। তিনি জাতীয় নেতা কিন্তু তার চেয়ে ওয়াহাব আকন্দের নিজ দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক ধরণের নাড়ীর সম্পর্ক রয়েছে। এতে করেই তিনি ভোটের মাঠে সাড়া ফেলতে সক্ষম হবেন।

অপরদিকে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা বলছেন, বেগম রওশন এরশাদের নির্বাচনী প্রচারণার স্টাইল একটু ভিন্ন রকম। যেহেতু তিনি একজন জাতীয় নেতা কাজেই তাকে জিতিয়ে আনতে তার পক্ষে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা কোমর বেধেই মাঠে রয়েছেন। বেগম রওশন বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ময়মনসিংহ বিভাগ বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে এখানকার উন্নয়নের প্রশ্নে আরও বেশী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন। তাই তরুণসহ সব বয়সী ভোটারদের ‘গুড বুকেই’ রয়েছেন তিনি। 

এ সম্পর্কিত আরও খবর