পাবনা-৫: নৌকায় স্বস্তি, বেকায়দায় ধানের শীষ

বিবিধ, নির্বাচন

আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪ | 2023-09-01 11:09:59

পাবনা-৫ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই। দ্বন্দ্ব ভুলে সব নেতারা এক কাতারে দাঁড়িয়ে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে দু’বারের সাংসদ, জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক গোলাম ফারুক খোন্দকার প্রিন্সের জন্য ভোট চাইছেন।

এদিকে বেকায়দা অবস্থানে রয়েছেন বিএনপি। যদিও এ আসনে বিএনপির নিজস্ব কোন প্রার্থী নেই। দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমূল বিশ্বাস দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন পেলেও ধানের শীষের প্রতীকে নির্বাচনে মাঠে আছেন জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা ইকবাল হোসাইন।

নীরবে গণসংযোগ ও প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন জাতীয় পার্টি (লাঙল) প্রার্থী আব্দুল কাদের খান কদর। জেলা জাতীয় পার্টির সম্পাদক কদর বলেন, ভোটার সচেতন, তরুণ ভোটাররা তরুণ প্রার্থী দেখেই ভোট দেবেন। সেই লক্ষ্যেই এ আসনে লাঙ্গলের বিকল্প নেই।

এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী গোলাম ফারুক খোন্দকার প্রিন্স। নৌকার এবারের টিকিটও তিনি পেয়েছেন। আর প্রকাশ্যে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে দলটি শিমূল বিশ্বাসকে দাবী করলেও একাধিক বিকল্প প্রার্থী ছিল ভেতরে ভেতরে। অবশেষে সকল জল্পনা কল্পনা শেষে ঐক্যজোটের প্রার্থী হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নেতা অধ্যক্ষ মাওলানা ইকবাল হোসাইনকে দেয়া হয়েছে ধানের শীষ প্রতীক। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নেতা অধ্যক্ষ মাওলানা ইকবাল হোসাইনকে দেওয়ায় উভয় দলের মধ্যে বিরাজ করছে নিরুত্তাপ কোন্দল।

বিশ্বস্ত একটি সূত্র দাবী করছে, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে অংশ নেয়া জামায়াতে ইসলামীর এই নেতাকে খোদ জামায়াতের নেতাকর্মীরাই ভালো ভাবে দেখছেন না। অন্যদিকে নিজ দলীয় প্রার্থী না পাওয়ায় এ আসনের বিএনপি’র রাজনীতির সাথে জড়িতরা হতাশ ও উদ্বেগের মধ্যেই অবস্থান করছেন।

পাবনা সদর আসনটি বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি পেলেও পরপর দুবার আওয়ামী লীগের টিকিটে বর্তমান সাংসদ গোলাম ফারুক প্রিন্স নির্বাচিত হওয়ায় ভোটারের দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। বিএনপি’র নিজস্ব প্রার্থী না থাকা আর জামায়াতে ইসলামীর রোষানলের মধ্যে প্রার্থিতা নেওয়ায় এক ধরণের বিরূপ প্রভাব পড়েছে ২০ দলীয় ঐক্যফ্রন্ট শিবিরে।

বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, বিএনপি প্রার্থী পায়নি এ আসনে। জামায়াতে ইসলামীর যে নেতাকে দেয়া হয়েছে, তাকে নিয়ে খোদ জামায়াতে ইসলামী গোসা। তারা বলেন, পৌর নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন এমনকি জাতীয় নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হয়ে থাকেন। দলের বাইরে গিয়ে এ ধরণের প্রার্থিতার কারণেই ইমেজগত ভাবে ইকবাল হোসাইন বিএনপির কাছে গভীরভাবে পৌছাতে পারেননি।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, পাবনার সার্বিক উন্নয়নে বর্তমান সাংসদের বিকল্প নেই। দু মেয়াদের এই সাংসদ ইতোমধ্যে পুরো জেলায় দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, দ্বন্দ্ব নিরসন, সাংগঠনিক ভীত মজবুত, দূরদর্শী সাংগঠনিক তৎপরতাসহ ক্লিন ইমেজের কারণেই এ আসনে থেকে তিনি আবারও সাংসদ নির্বাচিত হয়ে জনমানুষের কল্যাণ আর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবেন এমন প্রত্যাশা রয়েছে তার কাছে।

একাধিক সাধারণ নারী পুরুষ ভোটারের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, সৎ, যোগ্য ও জনদরদী হিসেবে বর্তমান সাংসদের বিকল্প দেখছি না। টাকা ছাড়া চাকুরী, কথা দিয়ে কথা রাখা, মানুষের সমস্যা শুনে সঠিক ও যুগোপযোগী সমাধান দেয়া, উন্নয়নের ঝুলি খুলে কাজ করায় এক্ষেত্রে তার বিকল্প হতে পারে না।

এ আসনে প্রচার প্রচারণায় বর্তমান সাংসদের যান্ত্রিক প্রচারণার পাশাপাশি শহর, গ্রাম, পাড়া মহল্লা, রাস্তা ঘাটে ঝুলছে ছবিযুক্ত পোষ্টার। কাকডাকা ভোরে বের হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত যাচ্ছেন ভোটারের বাড়ি বাড়ি। সাক্ষাত, কুশল বিনিময় ও নৌকা প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করছেন। দিচ্ছেন উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি।   

এদিকে, ধানের শীষের পাড়া মহল্লায় স্বল্প পরিসরে শব্দ যন্ত্রে প্রচারণা থাকলেও চোখে পড়ার মতো পোস্টারের দেখা মেলেনি। তবে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র দাবী করছে, বিএনপির ধানের শীষের প্রতীকের প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর নেতা ও তার অনুসারীরা ভিন্ন পথে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ফজরের নামাজের পর মোড়ে মোড়ে, পাড়া মহল্লায় জটলা করে ভোট চাইছেন। মহিলা কর্মীরা তালিম ও ইসলামের দাওয়াতের নামে শহর ও পাড়া মহল্লায় লিফলেট দিচ্ছেন ও ধানের শীষের ভোট চাইছেন। অথচ এই তালিমের মহিলারা ‘ইয়ানত’ জামায়াতে ইসলামীর মাসিক চাঁদা আদায় করে জামায়াতে ইসলামীর দাঁড়িপাল্লার জন্য ভোট চেয়েছেন। যা এখন উল্টে ধানের শীষের ভোট চাইছেন। 

কূটকৌশলী, স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি, যুদ্ধাপরাধের দায়ে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীর নেতাকে ভোট না দিতে ইতোমধ্যে পাবনায় নাগরিক সমাজের ব্যানারে ৫১ সদস্যের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মাঠে নেমেছেন। স্বাধীনতা ও জাতীয় পতাকার মান অক্ষুণ্ণ রাখতে, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকারকে আবারও ক্ষমতায় আনতে তারা এক যোগে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর জন্য ভোট চাইছেন।

পাবনা নাগরিক সমাজের আহবায়ক, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধি আব্দুল মতীন খান বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আবারও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে হবে। আর আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে ভোট দিতে এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় রাজাকার খ্যাত দলের প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ার আহবান জানিয়ে আমরা সাধারণ ভোটারদের কাছে যাচ্ছি। নৌকা প্রতীকের জন্য ভোট চাইছি।

বর্তমানে পাবনা পৌরসভা ও সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই আসনে মোট ভোট রয়েছে ৪ লাখ ২৫ হাজার ১০ জন এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১৪ হাজার ৪৫০ এবং মহিলা ভোটার ২ লাখ ১০ হাজার ৫৬০ জন।   

উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুলকে পরাজিত করেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা আব্দুস সুবহান। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ থেকে বিএনপিতে যোগ দিয়ে রফিকুল ইসলাম বকুল পরাজিত করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) এ কে খন্দকারকে। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওয়াজিউদ্দিন খানকে পরাজিত করেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা আব্দুস সুবহান। ২০০৮ সালে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা আব্দুস সুবহানকে পরাজিত করে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের সে সময়ের উদিয়মান তরুণ প্রার্থী গোলাম ফারুক খোন্দকার প্রিন্স। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গোলাম ফারুক খোন্দকার প্রিন্স আবারও এমপি নির্বাচিত হন। 

এ সম্পর্কিত আরও খবর