ঢাকা-১৭: রাজনীতির নায়কের কৌশলে মার খাচ্ছেন রূপালী পর্দার নায়ক

বিবিধ, নির্বাচন

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-21 06:17:54

বিকেল সাড়ে ৩টায় যুবলীগের কর্মীরা একটি মোটরবাইক র‌্যালী বের করে কড়াইল বস্তি এলাকায়। বস্তিতে অবস্থিত পল্লীবন্ধু এরশাদ বিদ্যালয় মাঠে মিনিট পাঁচেক থেমে নৌকা মার্কার পক্ষে স্লোগান দেয় তারা।

এ সময় স্থানীয় একজন নেতা এসে ঠাণ্ডাপানীয় অফার করেন। দোকান থেকে নিয়ে আসতে আসতে বাইক র‌্যালীটি যাত্রা শুরু করে। পেছনের দিকে যারা ছিলেন তাদের প্রত্যেকের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়। অনেকটা পড়িমড়ি করে নিতে নিতে রওয়ানা দেন অনেকে।

স্কুলমাঠ থেকে এবার বাইক হাঁকান বনানীর দিকে। বাইকের হুঁইসেলে ঢাকা পড়ে যায় তাদের মৃদু স্লোগান। সরু গলি তাদের বেপরোয়া বাইক চালানো মানুষ মুখে কিছু না বললেও চলে যাওয়ার পর নানা রকম খেদোক্তি প্রকাশ করেন। তাকের বাইকে না ছিলো নৌকা মার্কার কোনো প্রতীক। না শোনা যাচ্ছিল স্লোগান।

এর তিরিশ মিনিটের মাথায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পক্ষে একটি মিছিল বের করা হয় একই এলাকায়। জাপার পায়ে হাঁটা মিছিলে শামিল হন শতাধিক কর্মী। মিছিলের অগ্রভাগে থেকে লিফলেট বিতরণ করেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সল চিশতী। মিছিলটি গলি গলি গিয়ে বস্তিবাসীদের বাসায় বাসায় লিফলেট বিতরণ করেন। মানুষের কাছে এরশাদের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও চিত্রনায়ক ফারুকের নির্বাচনী কৌশল দেখে বুলবুল নামের এক বস্তিবাসী মন্তব্য করেন, রাজনীতির নায়কের কৌশলে কাছে মার খাচ্ছেন রূপালী পর্দার নায়ক। তিনি বলেন, ওরা যেভাবে ভয়ঙ্করভাবে বাইক চালাচ্ছে এটা মানুষ ভালোভাবে দেখছে না।

কড়াইল বস্তি এমনকি বনানী এলাকায় কোথাও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পোস্টার দেখা মেলেনি। অন্যদিকে এরশাদের সাদাকালো পোস্টার শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে। এই আসনে ২০০৮ মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন এরশাদ। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী প্রয়াত হান্নান শাহ পেয়েছিলেন ৫৬ হাজার আর এরশাদ পেয়েছিলেন ১ লাখ ২৩ হাজার ভোট।

সে কথা মনে করিয়ে দিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সল চিশতী। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর এখানে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এলাকার জনগণ তার উন্নয়নের কথা মনে রেখেছে। জনগণ এবারও তাকে বিজয়ী করবে। যেখানেই যাচ্ছি ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।

এরশাদের পক্ষে প্রচারণায় জাতীয় পার্টির নেতারা

 

এক প্রশ্নের জবাবে চিত্রনায়ক ফারুক সম্পর্কে বলেন, ওনি রূপালী পর্দার সাবেক নায়ক। আর আমার নেতা (এরশাদ) রাজনীতির মাঠের মহানায়ক। তার সঙ্গে তুলনা হয় না। রাজনীতির মহানায়কের কাছে তিনি টিকতে পারবেন না।

এই আসনের আরেকজন আলোচিত প্রার্থী হচ্ছে এক্যফ্রন্টের নেতা আন্দালিভ রহমান পার্থ। তার বাবা নাজিউর রহমান মঞ্জু জাতীয় পার্টির মহাসচিব ছিলেন। এরশাদের সঙ্গে মতপার্থক্য হলে বেরিয়ে গিয়ে পৃথক দল (বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বিজেপি) গঠন করেন। সেই দল এখন বিএনপির সঙ্গে জোটভুক্ত।

পার্থ প্রসঙ্গে ফয়সল চিশতী বলেন, তার সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না। সে বাচ্চা মানুষ।

ঐক্যফ্রন্টের এই প্রার্থীর কোনো পোস্টার বা লিফলেট চোখে পড়েনি কড়াইল বস্তি এলাকায়। এমনকি বনানী গুলশান চক্কর দিয়েও তার কোনো নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চোখে পড়েনি।

বিকেল ৫টার দিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী সাবেক সেনা কর্মকর্তা আমিনুল হক তালুকদারের পক্ষে হাতে হাতপাখা নিয়ে মিছিল হয় বস্তি এলাকায়, তারা তখন লিফলেটও বিতরণ করেন।

রাজধানীর প্রেস্টিজিয়াস আসন বলে পরিচিত ঢাকা-১৭ (গুলশান, বনানী ক্যান্টনমেন্ট ও ভাষানটেক) আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ১৩ হাজার ৯৯৮ জন।

এই আসনে অন্য যারা প্রার্থী হয়েছেন, তারা সবাই নতুন। শুধু এরশাদ এই আসনে আগেও এমপি থেকে ব্যাপক উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছেন। যে কারণে তাকে এগিয়ে রাখছেন স্থানীয়রা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর