প্রচার শুরু, রাজশাহীতে মহাজোট-ঐক্যফ্রন্টের শক্ত লড়াইয়ের আভাস

বিবিধ, নির্বাচন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-02 22:48:41

নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়ে গেছে। সোমবার (২ ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিক প্রতীক বরাদ্দ। সেই সময় পর্যন্ত তর যেনো সইছে না নেতাকর্মীদের। সকাল থেকেই শুরু করেছে পোস্টার টাঙানোর কাজ। সব মিলিয়ে পুরো রাজশাহীজুড়ে প্রচারণার সাজসাজ রব পড়েছে। আর এ প্রচারণার শুরুতেই রাজশাহীর সবকটি আসনে এবার মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে শক্ত লড়াইয়ের আভাস মিলছে।

ইতিমধ্যে প্রচারণার সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছে রাজশাহীর ৬টি আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। দলীয় কোন্দলও মিটিয়ে ফেলেছেন তারা।

এবার শুরুতেই রাজশাহীর সবকটি আসনে মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে শক্ত লড়াই হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে আগে থেকেই মাঠ গুছিয়ে রাখায় এখানে সব আসনে সুবিধায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে ১০ বছর পর মাঠে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খেতে হতে পারে বিএনপি। কারণ রাজশাহী বিএনপির মনোনয়ন প্রাপ্তরা গত ১০ বছর ধরে ছিলেন এলাকা ছাড়া। এখনো অনেকে নিজ এলাকার মাটি ছুঁতে পারেন নি। এ অবস্থায় মাঠে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খেতে হতে পারে বিএনপির প্রার্থীদের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজশাহী আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটে যাওয়ায় প্রার্থীরা রয়েছেন ফুরফুরে। সব নেতাকর্মী ও প্রার্থীরা নৌকাকে বিজয়ী করতে শপথও নিয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপির কোন্দল এখনো জিইয়ে থাকায় শুরুতেই হোচট খেতে পারেন তাদের প্রার্থীরা। তবে এখনো পর্যন্ত রাজশাহীর ভোটের মাঠ গোছানো রয়েছে আওয়ামী লীগের।

সোমবার আনুষ্ঠানিক প্রতীক বরাদ্দের আগেই মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ এলাকায় প্রচারণায় নেমে গেছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে শোভা পাচ্ছে প্রার্থীদের পোস্টার।

রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে সবচেয়ে শক্ত লড়াই হবে এবার। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে লড়াই হবে বিএনপির ব্যারিস্টার আমিনুল হকের। প্রায় ১৭ বছর পর এ আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন ব্যারিস্টার আমিনুল হক। আর ১০ বছর ধরে এটি ধরে রেখেছেন আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক চৌধুরী। ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ওমর ফারুক চৌধুরী শক্ত অবস্থানে রয়েছেন এখানে। অন্যদিকে জঙ্গি মদদদানের অভিযোগ রয়েছে ব্যারিস্টার আমিনুলের বিরুদ্ধে। ১/১১ এর পর থেকে এলাকা থেকে লাপাত্তা ছিলেন তিনি। এবারেও মনোনয়ন বাতিল হলেও শেষ পর্যন্ত আপিলে টিকে যাওয়ায় লড়াইয়ে নেমেছেন তিনি।

ফারুক চৌধুরী বলেন, আজ তিনি আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করলেও তার মাঠ গোছানো রয়েছে। তিনি বলেন, তার উন্নয়নের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন একজন জঙ্গী মদদদাতা। বর্তমান প্রজন্ম সেটা জেনে উন্নয়নের পক্ষে নৌকায় বেছে নিবে।

রাজশাহী-২ (সদর) আসনে এবার ১০ বছর পর মুখোমুখি লড়াই হবে ১৪ দলের প্রার্থী বর্তমান এমপি ফজলে হোসেন বাদশার সঙ্গে বিএনপির মিজানুর রহমান মিনুর। এখানে দুই প্রার্থীই শক্ত। তবে গেল সিটি নির্বাচনের প্রভাবে রাজশাহী সদরের বাতাস বাদশার দিকেই ভর করেছেন। বাদশাও সিটি নির্বাচনে মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের প্রাপ্ত ভোট হিসেব করেই সক্রিয় রয়েছেন মাঠে। তবে মিন্ওু বিএনপির শক্ত প্রার্থী।

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুরে) আসনে বর্তমান এমপি আয়েন উদ্দিন গত ৫ বছর ধরে সক্রিয় রয়েছেন। এবারো তিনি মনোনয়ন পেয়ে মাঠে রয়েছেন সক্রিয়। তবে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন। নির্বাচনী এলাকায় ‘বহিরাগত’ হিসেবে পরিচিত তিনি। এখানেও শক্ত লড়াই হতে পারে দুই প্রার্থীর মধ্যে।

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছেন বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের প্রকৌশলী এনামুল হক। এ আসনে এবার বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক আমলা আবু হেনা। ২০০৮ সালের আগে তিনি এলাকার এমপি ছিলেন। তার আমলেই বাগমারায় জঙ্গী উত্থান ঘটে। গত ১০ বছর বাগমারার মাটি ছুঁয়ে দেখেন নি তিনি। তার রাজনীতি রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেল কেন্দ্রিক।

রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে এবার নতুন প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে চমক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার এ আসনে চিকিৎসক নেতা ডা. মনসুর রহমান মাঝি হয়েছেন নৌকার। শুরু থেকে এ আসনে মনোনয়ন নিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হলেও এখন সব নেতারা মনসুর রহমানের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। বর্তমান এমপি কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও এলাকায় এসে মনসুর রহমানের প্রতি একাত্ত্বতা প্রকাশ করেছেন। নৌকার পক্ষেই কাজ শুরু করেছেন। এ আসনে এবার নাটকীয়ভাবে শেষ পর্যন্ত বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফা। গত ১০ বছরের বেশী সময় ধরে এলাকায় অনুপস্থিত নাদিম। নাদিম মোস্তফা ওই আসনের জনপ্রিয় বিএনপির নেতা।

রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে বর্তমান এমপি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম শুরু থেকেই নৌকার পক্ষে ঝড় তুলেছেন। এ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী একাধিক নাশকতার মামালার আসামি বর্তমানে কারাবন্দি আবু সাঈদ চাঁদ। শাহরিয়ার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পরীক্ষিত বাস্তবায়নে এলাকার মানুষ এবার দলমত নির্বিশেষে নৌকার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। দলীয় সব সংকটও কেটে গেছে। লোকাল নেতা হিসেবে তৃণমুল বিএনপিতে চাঁদের জনপ্রিয়তা আছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছে।

শাহরিয়ার আলম বলেন, ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে না এসে সারাদেশে অগ্নিসন্ত্রাসের যে ধ্বংসলীলা চালিয়েছিলো মানুষ এখনও তা ভুলেনি। বিএনপি-জামায়াত বারবার দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে উন্নয়নে বাধাগ্রস্থ করার চেষ্টা করেছে। মানুষ আর রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে ধ্বংসযোগ্য চায়না। তারা চায় দেশের উন্নয়ন। আর দেশের উন্নয়ন করতে হলে আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে তিনি পরীক্ষিত। তাই তার অবস্থান শক্ত বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। শাহরিয়ার আলম জানান, তার মাঠ সাজানো রয়েছে। আজ বাঘার শাহদৌল্লাহর মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে তিনি নির্বাচনী প্রচার শুরু করবেন।

তৃণমুল ভোটাররা জানান পরপর দুইবার নির্বাচিত হয়ে এলাকায় নানামুখি উন্নয়ন করার কারণে শাহরিয়ারের পাল্লা অগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী।

এ সম্পর্কিত আরও খবর