দলীয় কোন্দল পাত্তা পাবে না: শম্ভু এমপি

বিবিধ, নির্বাচন

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-11 09:58:41

বরগুনা থেকে: এবার নির্বাচিত হতে পারলে বরগুনা-১ আসনকে দারিদ্রমুক্ত ঘোষণা করতে চান আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের টিকেটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জনপ্রিয় এই রাজনীতিবিদ। এবারের নির্বাচনেও জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

তবে তার জয়ের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে দলীয় কোন্দল। জেলা আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশের সঙ্গে তার দা-কুমড়া সম্পর্ক। কিছুদিন আগে তাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করার ঘটনাও ঘটে। তবে এসব বিষয়কে পাত্তা দিচ্ছেন না উপকূলীয় আসনের নির্বাচিত এই এমপি।

আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু না হলেও কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন শম্ভু। আমতলী, তালতলী ও বরগুনা সদরে কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করেন। অন্যদিকে কৃষকরা সোনালী ধান সংগ্রহে মাঠে নামতে শুরু করেছে।

শনিবার (৮ ডিসেম্বর) রাতে তার নিজ বাসভবনে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, যারা প্রকৃত আওয়ামী লীগ করেন তারা কখনই নৌকার বাইরে যেতে পারবে না। আওয়ামী লীগ বড় দল এখানে মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক থাকবে এটাও যেমন স্বাভাবিক। আবার একজন নির্বাচন করবে এটাও স্বাভাবিক। কিন্তু ভোটের মাঠে তার প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি না। নেত্রী বলে দিয়েছেন সবাইকে একযোগে কাজ করার জন্য। এখন আর আমাদের মাঝে ভেদাভেদ নেই। আবার বিচ্ছিন্নভাবে দু’একজন যদি অভিমান করেও থাকে তাতে ভোটের ফলে খুব একটা তারতম্য হবে না।

এই আসনের লোকের ভালোবাসাই আমার শক্তি। তারা যেমন আমাকে ভালো জানে, তেমনি আমিও তাদের ভালোবাসি। এখানে দলমত আলাদা থাকতে পারে কিন্তু কেউ আমার সম্পর্কে খারাপ বলতে পারবে না। বিএনপি করা লোকটি হয়তো আমাকে ভোট দেবে না তার দলীয় আদর্শের কারণে। কিন্তু সেও আমার সম্পর্কে খারাপ বলতে পারবে না। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, হ্যাঁ কেউ কেউ আড়ালে-আবডালে আমার বিরুদ্ধে নানা রকম অপপ্রচার করে। মনে রাখবেন, তাদের অনৈতিক আবদার গ্রহণ করিনি জন্য তারা আমার ওপর অসন্তুষ্ট। অসৎ লোক সব সময় ব্যর্থতাই দেখবে।

টিআর কাবিখা-কাবিটা নিয়ে অনিয়ম প্রসঙ্গে বলেন, যারা এসব প্রশ্ন তুলছে তাদের কাছে জিজ্ঞেস করেন তারা এটার সুবিধা নিয়েছে কি-না! দলের লোকজন একটু-আধটু সুবিধা নিয়েই থাকেন। আমি কিন্তু ১০ কোটি টাকার মানহানি মামলা করেছি সৎসাহস আছে বলে। আমি চ্যালেঞ্জ করছি কেউ একটি অনিয়ম দেখাক।

তিনি বলেন, আমি এই অঞ্চলের ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। ১৯৯১ সালে এখানে ৬১ শতাংশ লোক ছিলো দারিদ্রসীমার নিচে। এখন কিন্তু মাত্র ২০ শতাংশ লোক দারিদ্রসীমার নীচে বাস করছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে আমার হাত ধরে। এই অঞ্চলকে শিল্পসমৃদ্ধ অঞ্চলে পরিণতি করতে অনেকগুলো কাজ শুরু করেছি। আগামীতে এখানে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন স্থাপন করা হবে। তালতলীতে জাহাজ নির্মাণ শিল্প, থাই ফিটিংসের কারখানা স্থাপিত হচ্ছে। শিল্প কারখানার চালিকা শক্তি বিদ্যুতের কেন্দ্র স্থাপনের কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে। পোর্ট টু পোর্ট (মংলা-ভোমরা- পায়রা-বেনাপোল-চট্টগ্রাম) কানেকটিভিটি গড়ে তোলা হচ্ছে। আমাদের দেশে পুর্ব-পশ্চিমে কোনো সড়ক নেই। উপকূলীয় মহাসড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে অনেকগুলো সেতু নির্মিত হয়েছে। ভোলা পর্যন্ত যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। ভোলার তেতুলীয়া নদীতে ব্রীজ নির্মাণ করা গেলেই চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এই সড়ক হয়ে গেলে এই অঞ্চলের চিত্র বদলে যাবে।

এই অঞ্চল এখন কৃষিতে সারপ্লাস। আমরা নতুন করে খালখনন কর্মসূচি নিয়েছি। এতে অনেক জমি সেচের আওতায় চলে আসবে। এতে কৃষির সার্বিক উন্নতি হবে। আমার বিশ্বাস এই অঞ্চলের লোক নৌকাকে ভালোবাসে। তারা আমার সঙ্গেই থাকবে। আমার এলাকার লোকজন অনেক ভালো, তাদেরকে ভুল বোঝানো কঠিন। তার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সব সময়। এই আসনের আরেকটি বিউটি হচ্ছে এখানে কোনো সাম্প্রদায়িকতা নেই। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ঐক্যফ্রন্টের মতিন তালুকদার প্রসঙ্গে বলেন, তিনিও শক্তিশালী প্রার্থী। তার কিছু এলাকায় ভোট রয়েছে। তবে আমার কাছে টিকতে পারবেন না।

বরগুনা সদর-আমতলী ও তালতলী থানা নিয়ে গঠিত বরগুনা-১ আসনে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে নানা রকম মত। কেউ কেউ বলেছেন, তিনি এবার সে অর্থে তেমন উন্নয়ন করেননি। তবে দিমু কই। অর্থাৎ বিএনপি যাকে দিয়েছে তাকেও তারা পছন্দ করতে পারছেন না।

কি নিয়ে দলীয় কোন্দল?
ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর দোষই দিয়েছেন অনেক কর্মীরা। তারা বলেছেন, ২০১৫ সালে পৌরসভা নির্বাচনে বরগুনা পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হন যুবলীগ নেতা কামরুল ইসলাম মহারাজ। তখন গোপনে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন শম্ভু। ভোটের দিনে মহারাজকে লক্ষ্যকরে গুলি ছোড়ে পুলিশ। এ ঘটনায় শম্ভুকেই দায়ী করা হয়। এই কারণে মুখ দেখা দেখিও বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে জেলা আওয়ামী সহ-সভাপতি সাবেক এমপি এই অঞ্চলের অবিসংবাদিত নেতা দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গেও নানা কারণে টানাপোড়েন চলছে। জেলা পরিষদের নির্বাচিত এই চেয়ারম্যানকে এই অঞ্চলের আওয়ামী লীগ কর্মীরা অভিভাবক মনে করেন। তিনি বরগুনার একমাত্র নেতা যিনি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালে প্রতিবাদ করতে গিয়ে গ্রেফতার হন। ২০০১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হলে বিএনপি তাকে দলে টানার জন্য অনেক প্রলোভন দেয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রতি অগাধ ভালোবাসার টানে তিনি দল ছাড়েননি। সৎ ও নির্ভিক এই নেতার সঙ্গে ব্যবধান সৃষ্টিকে আওয়ামী লীগ কর্মীরা ভালোচোখে দেখছেন না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর