ধানের শীষ না থাকায় হতাশ গাবতলীবাসী

বিবিধ, নির্বাচন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা ২৪.কম | 2023-08-23 22:58:20

বিএনপির দুর্গ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি বগুড়ার গাবতলীতে এবারের আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ মার্কা থাকছে না শুনে হতাশ নেপালতলী ইউনিয়নের তেরপাকি গ্রামের কৃষক জালাল উদ্দিন ও আব্দুল মান্নানের মত অনেকেই। ধানের শীষ মার্কা না থাকার পাশাপাশি নৌকা মার্কাও না থাকায় এবারের নির্বাচন জমবে না বলে মন্তব্য ভোটারদের। ০২ ডিসেম্বর মনোনয়ন পত্র বাছাই পর্বে বিএনপির সব প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল হয়ে যাওয়ার সংবাদ ইতিমধ্যে বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনের ভোটারদের কানে পৌঁছে গেছে।

তৃনমূল পর্যায়ে বিএনপির সমর্থকরা হতাশা প্রকাশ করে বলছেন ধানের শীষ-নৌকা না থাকলে নির্বাচন জমবে না। এলাকার হাট-বাজার থেকে শুরু করে ছোট চায়ের দোকানেও একটাই আলোচনা এবারের নির্বাচনে গাবতলীতে ধানের শীষও নেই নৌকাও নেই।

বড় দুই দলের কেউ না থাকাতে এই আসনে নির্বাচন আলোচনাও তেমন জমে ওঠেনি তৃনমূল পর্যায়ে। দিনের বেলা মাঠে কাজের পর খেটে খাওয়া মানুষের সন্ধ্যার পর চায়ের দোকান গুলোতে নির্বাচনী আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে ধানের শীষ বাতিল হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গটি। বগুড়া-০৭(গাবতলী-শাজাহানপুর) নির্বাচনী এলাকা ঘুরে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে উঠে এসেছে এধরনের চিত্র।

১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত এই আসনে ধানের শীষ মার্কায় নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আসনটি মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়া হয়। বগুড়ার অন্যান্য আসনে বিনা ভোটে সাংসদ নির্বাচিত হলেও এই আসনে জাপা(মঞ্জু) প্রার্থী এটিএম আমিনুল ইসলাম পিন্টুর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সাংসদ নির্বাচিত হন জাপা(এরশাদ) প্রার্থী এ্যাড, আলতাব আলী। ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ার ভোটের আগের রাতে প্রায় অর্ধশত ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এসব কেন্দ্রে ভোট বন্ধ রেখে পরের দফায় এখানে ভোটগ্রহন করা হয়। গাবতলী-শাজাহানপুর এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের ভোট অনেক বেশী। তাই এবারের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে শুনে ১০ বছর পর এলাকায় ধানের শীষের জোয়ার শুরু হয়েছিল। কিন্তু বিএনপির সব প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের খবরে ধানের শীষের সেই জোয়ার এখন ভাটায় পরিণত হয়েছে।

অন্যদিকে আওয়ামীলীগের কর্মী সমর্থকরাও মনের দিক থেকে হতাশ হয়ে পড়েছেন। ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে গেলে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হবে বলে মন্তব্য করেন নেপালতলী ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সদস্য আতাউর রহমান। গাবতলী উপজেলার জয়ভোগা, উনচুখরী, বাইগুনি গ্রামের আওয়ামীলীগের কয়েকজন কর্মী বলেন গাবতলী উপজেলা এমনিতেই বিএনপির ঘাটি। সেখানে আমরা আওয়ামীলীগের কর্মী হয়ে ভোটের সময় মানুষের কাছে ভোট চাইতে হয় লাঙল মার্কায়। ভোটাররা অনেক সময় এনিয়ে নানা ধরনের ব্যঙ্গ করে তাদেরকে।

কিন্তু এবারের নির্বাচনে ভোটের চিত্র আরও জটিল। বর্তমান সাংসদ আলতাব আলী লাঙল মার্কায় এবারও মহাজোটের প্রার্থী। তিনি গত ৫ বছরে যা করেছেন তা নিয়ে মানুষের কাছে ভোট চাইতে যাওয়া যাবে না। অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন বিভিন্ন কাজের জন্য। কাজের কাজ তো কিছুই হয়নি, তাদেরকে টাকাও ফেরত দেননি তিনি। ফলে বিক্ষুব্ধ হয়ে আছে লোকজন। ইতিমধ্যে ১৫-২০ জন পাওনাদার সাংসদ আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন পার্টির চেয়ারম্যানের কাছে।

শাজাহানপুর উপজেলার মাদলা, মাঝিড়া, চোপীনগর এলাকার কয়েকজন ভোটার জানান, তাদের গ্রামের অনেকে গত ৫ বছরে সাংসদ আলতাফকে কোনদিন দেখেননি। ২০১৪ সালের ভোটেও তিনি কোথাও ভোট চাইতে যাননি। এবার অপেক্ষায় রয়েছেন তাকে দেখার জন।

দল-মত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের মন্তব্য বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করে ধানের শীষ মার্কা ফেরত পেয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করলে জয়ের ব্যাপারে কোন চিন্তা করতে হবে না। ধানের শীষ না থাকলে নির্বাচনী আমেজে ভাটা পড়বে।

এই আসনে বিএনপি থেকে বেগম খালেদা জিয়া, উপজেলা বিএনপির সভাপতি আমিনুর রহমান তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ মিলটনকে মনোনয়ন দেয়া হয় বিএনপি থেকে। তিনজনের মধ্যে আমিনুর রহমান মনোনয়ন জমা দেননি। বাছাইপর্বে বেগম জিয়া ও মোরশেদ মিলটনের মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। আর মহাজোটের প্রার্থী রয়েছেন জাতীয় পার্টির আলতাব আলী।

এ সম্পর্কিত আরও খবর