আ’লীগ মনোনয়ন দিলে নির্বাচনে লড়বেন লতিফ সিদ্দিকী

বিবিধ, নির্বাচন

কামরুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 23:55:55

আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিলে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতি) আসনে দলের পক্ষে নির্বাচনে লড়তে চান সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। হজ্ব-তাবলিগ জামাত ও প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে তাঁকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ ঘটনার জের ধরে সংসদ সদস্যপদ ও মন্ত্রিত্ব হারান এই বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা।

সূত্র জানায়, কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা বর্তমান সাংসদের কোনো কর্মসূচিতে যান না। আবার উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচিতেও সাংসদকে দেখা যায় না। এ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ছাত্রলীগের নেতারাও লতিফ সিদ্দিকীর অনুসারী।

গুলশানের বাসভবনে লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার প্রথমে তিনি গণমাধ্যমকে কোনো বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি জানান, কিছু গণমাধ্যমে তাঁর খণ্ডিত বক্তব্য প্রকাশিত হয়। এক পর্যায়ে তিনি অনানুষ্ঠানিকভাবেই কথা বলতে রাজি হন।

নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা জানতে চাইলে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘নেত্রী (শেখ হাসিনা) চাইলে নির্বাচনে যাব, তবে পাবলিক যদি সবকটি ভোটও আমাকে দিতে রাজি হয়, তারপরও আমি স্বতন্ত্র দাঁড়াব না। তাহলে এটি নিজের জন্য হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, আমি নিজের জন্য কিছু করতে চাই না। যতেষ্ঠ বয়স হয়েছে, এখন নিজের কিছু করতে গেলে নিজেকে ঘৃণিত মনে হবে। যে কয়টা দিন বেঁচে আছি, সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চাই।’

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে নিউইয়র্ক সফরের সময় সেখানকার এক হোটেলে টাঙ্গাইল সমিতির অনুষ্ঠানে হজ্ব, তাবলিগ, সাংবাদিক ও প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে মন্তব্য করে দেশজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েন লতিফ সিদ্দিকী।

সে সময় এসব বক্তব্যের প্রতিবাদে সারাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে ২২টি মামলা হয়। এ মামলায় তাঁকে জেলেও যেতে হয়। দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ায় তাঁর সংসদ সদস্যপদ থাকবে কিনা তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে হাজির হয়ে লতিফ সিদ্দিকী কমিশনকে বলেন, তিনি নিজেই পদত্যাগ করবেন। তাই শুনানির আর প্রয়োজন নেই।

ঐদিন নির্বাচন কমিশন থেকে বেরিয়ে লতিফ সিদ্দিকী বলেছিলেন, ‘যেহেতু আমার নেত্রী চান না আমি সংসদে থাকি তাই আমি নিজেই পদত্যাগ করব।’ সেই সময় হজ্ব ও তাবলিগ জামাত নিয়ে তাঁর মন্তব্য খণ্ডিতভাবে এসেছে বলেও দাবি করেছিলেন বহিষ্কৃত এই আওয়ামী লীগ নেতা।

কালিহাতীতে নিজের অবস্থানের বর্ণনা দিয়ে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘এলাকায় আমার পজিশন ভালো, আমার জীবনেও এতো ভালো পজিশন কালিহাতিতে ছিলো না। আমাকে নিয়ে বিতর্ক ছিলো অনেক। আমাকে শুধু একেবারে সাধারণ মানুষ ভোট দিত।’

কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো: মোজহারুল ইসলাম তালুকার বলেন, ‘বর্তমান এমপি (হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী) বাদে দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেবে তাঁর জন্যই আমরা মাঠে নামব।’

লতিফ সিদ্দিকী সম্পর্কে জানতে চাইলে মোজহারুল ইসলাম বলেন, ‘তিনি আমাদের বড় নেতা। দল তাঁকে মনোনয়ন দিলে আমরা তাঁর হয়ে কাজ করব।’

এদিকে লতিফ সিদ্দিকী তাঁর সহধর্মিনী লায়লা সিদ্দিকীকে মনোনয়ন দিলে সেটির বিরোধিতা করবেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘বেগম সাহেবকে (লায়লা সিদ্দিকী) মনোনয়ন দিলেও আমি এর বিরোধিতা করব। কেননা তিনি রাজনীতি করার লোক নন। তিনি আরাম আয়েশের লোক।’

লতিফ সিদ্দিকীর ছোট ভাই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ নেওয়া নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে কাদের সিদ্দিকীর কিছু কথা বলা ঠিক হয়নি বলে মনে করেন সাবেক এই সাংসদ।

টাঙ্গাইলের এই সংসদীয় আসনের বর্তমান সাংসদ হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী ২০১৬ সালে উপ-নির্বাচনে জয়ী হন। উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের অভিযোগ, নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সোহেল হাজারী তাদেরকে উপেক্ষা করে জামায়াত-রাজাকারের বংশধরদের কাছে টানেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: আনছার আলী বলেন, ‘কালিহাতী আওয়ামী লীগ লতিফ সিদ্দিকীর হাতে গড়া। দল তাকে মনোনয়ন দিলে স্বতস্ফূর্তভাবে তাঁর হয়ে কাজ করব।’

আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে কালিহাতীতে লতিফ সিদ্দিকী প্রথম সাংসদ নির্বাচিত হন ১৯৯৬ সালে। তারপরে ২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় নির্বাচনেও নৌকা প্রতীকে জয়লাভ করেন তিনি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তাঁকে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।

২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে লতিফ সিদ্দিকী আবারও সাংসদ নির্বাচিত হন। এবার তিনি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। কিন্তু দেড় বছরের মাথায় দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরে পদত্যাগ করেন লতিফ সিদ্দিকী।

এ সম্পর্কিত আরও খবর