নির্বাচনী ট্রেনের যাত্রা শুরু, যাত্রী কারা?

বিবিধ, নির্বাচন

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 09:04:40

নানা জল্পনা-কল্পনা, সন্দেহ, উদ্বেগ শেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তফসিল ঘোষণার মধ্যদিয়ে একাদশ জাতীয় নির্বাচনী ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়েছে। ২৩ ডিসেম্বর সেই যাত্রার সমাপ্তি ঘটবে। কিন্তু নির্বাচনী ট্রেনের যাত্রী হচ্ছেন কারা? উত্তর জানতে আরো কয়েকদিন লাগবে।

কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুসারে, প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমার দেওয়ার শেষ সময় ১৯ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের তারিখ ২২ নভেম্বর, প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৯ নভেম্বর ও ভোটের দিন ২৩ ডিসেম্বর।

নির্বাচন মানে উৎসব, আমেজ। রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যালয়ে পদ প্রত্যাশীদের আনাগোনা, দলীয় মনোনয়ন, নির্বাচনী ইশতেহার, প্রার্থীদের প্রচারণা সব কিছুই যেন আনন্দের। ইতোমধ্যেই তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোট, জাতীয় পার্টি, যুক্তফ্রন্ট। অন্যদিকে বিএনপি, ২০ দলীয় জোট, ঐক্যফ্রন্ট নেতারা তফসিল নিয়ে অখুশি। এখন দেখার বিষয় তারা নির্বাচনী ট্রেনের যাত্রী হন কি না?

বাংলাদেশে ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত প্রথম ৪টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ক্ষমতাসীন সরকারগুলোর অধীনে। যার তিনটিই ছিলো সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকার। তবে ১৯৯১ সালের নির্বাচনটি করে সব দলের ঐকমত্যে গঠিত একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

১৯৯৬ সাল থেকে পরপর তিনটি নির্বাচন হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। ২০১১ সালে সংবিধানে সংশোধনী এনে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধানে ফিরে যায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। সে ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনেই সম্পন্ন হয়।

২০১৪ সালের সেই নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। তত্ত্ববধায়ক সরকারসহ বেশকিছু দাবিতে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট তখন ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

ঐ নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে আওয়মী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। বিরোধীজোটের কাছে ‘ওয়াকওভার’ পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফের সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। আবারো পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতার বাইরে চলে যায় বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, টানা ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে বিএনপির শক্তি এখন ক্ষয়িষ্ণু। বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রতিপক্ষকে ‘ওয়াক ওভার’ দেওয়া ছিল তাদের চরম একটি রাজনৈতিক ভুল। যার খেসারত আজো দিতে হচ্ছে দলটির নেতা-কর্মীদের।

২০১৪ সালের তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি প্রার্থীরা মনোনয়ন সংগ্রহ না করলে তখন আওয়ামী লীগের তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘কোনো ট্রেন স্টেশন ছেড়ে গেলে তাকে যেমন আবার ওই প্লাটফর্মে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়, তেমনি নতুন করে তফসিল ঘোষণা করাও সম্ভব নয়।’

পাঁচ বছর পর এবারের প্রেক্ষাপটও বিএনপি নেতা-কর্মীদের জন্য জটিল। দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এখন কারাগারে বন্দী। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও প্রায় এক দশক হল বিদেশে পলাতক, সম্প্রতি আবার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত।

হাজার হাজার দলীয় নেতা-কর্মী মামলা-মোকদ্দমায় জর্জরিত। এমন অবস্থায় ২০১৮ সালের নির্বাচনী ট্রেন এসে দাঁড়িয়েছে তাদের সামনে। যেন এক অগ্নিপরীক্ষা। দলীয় চেয়ারপার্সনকে মুক্ত না করে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত যেমন তারা নিতে পারছে না, ঠিক তেমনি আরেকবার নির্বাচন বর্জন করে ‘নির্বাচনী ট্রেন’ মিস করার খেসারত দিতে চাচ্ছেন না।

সরকারকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে গঠন করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। জোটে ড. কামাল হোসেনকে সামনে রাখা হলেওে এর মূল চালিকা শক্তি বিএনপি। তাদের ধরাণা ছিল সরকার হয়ত তাদের দাবি মেনে নিয়ে নমনীয় হবে। সে জন্য ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে দুই দফা সংলাপেও বসেন। কিন্তু ফলাফল হতাশাব্যঞ্জক। সংলাপে কিছু ইস্যুতে সরকার ছাড় দিলেও সংবিধানের বাইরে এক চুলও নড়েনি।

তাই বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের মূলদাবির একটাও পূরণ হয় নি। ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন কমিশনের কাছে তফসিল পেছানোর আবদার করলেও কমিশন তফসিল ঘোষণা করে জানিয়ে দিল যে, নির্বাচনের ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর