পাবনা-৪: নতুন মুখের সম্ভাবনায় আ.লীগ, বিএনপিতে একক প্রার্থী

বিবিধ, নির্বাচন

আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-10 16:54:45

আওয়ামী লীগে নতুন প্রার্থীর সুর আর বিএনপিতে একক প্রার্থী এমন খবরেই সরব পাবনা-৪ নির্বাচনী এলাকা। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয়পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা স্ব স্ব দল থেকে মনোনয়ন পেতে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। সরকারের উন্নয়ন মূলক কর্মকাণ্ড জনসম্মুখে তুলে ধরাসহ আলাদা আলাদা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন নানা রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান হাবিব ও জামায়াতের মাওলানা নাসির উদ্দিনকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির সিরাজুল ইসলাম সরদার। ১৯৯৬ সালে আসনটি দখল করে আওয়ামী লীগের শামসুর রহমান শরীফ ডিলু। সেবার বিএনপির সিরাজুল ইসলাম সরদার ও জামায়াতের মাওলানা নাসির উদ্দিনকে পরাজিত করেন তিনি। এরপর একাধারে ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে সংসদ নির্বাচিত হন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ। ২০১৪ সালে অবশ্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, শামসুর রহমান শরীফ ডিলু চারবার সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পেছনে বিএনপির গ্রুপিংকেই দায়ী করছেন প্রবীণ রাজনীতিবিদরা। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী তুখোড় ছাত্রনেতা ও ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব যোগ দেন বিএনপিতে। হাবিবের যোগদানের পর বিএনপি হাবিব-সিরাজ দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে যায়। ২০০১ সালে সিরাজ সরদার মনোনয়ন পেলে বিদ্রোহী প্রার্থী হন হাবিব। সেইবার হাবিব-সিরাজের দ্বন্দ্বে গোল দেয় আওয়ামী লীগের শরীফ ডিলু। ২০০৮ সালেও দল থেকে মনোনয়ন পান সিরাজ। এবার হাবিব মাঠে বিদ্রোহী না হলেও ভোটে বিদ্রোহী হয়ে দাঁড়ায় সিরাজের বিরুদ্ধে। তাতেই বাজিমাত ডিলুর। তবে বর্তমানে সিরাজের চাইতে হাবিব এলাকায় নিজের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রমাণ করার চেষ্টায় অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন বলে আলোচনা রয়েছে।

এ আসন থেকে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান এমপি ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত বলে দাবি করছে তার সমর্থিত নেতাকর্মীরা। তারা বলছে, মনোনয়ন চাওয়া ও জয়ী হওয়ার মতো শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই তার। তবে নতুন করে নির্বাচনী মাঠে সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এএসএম নজরুল ইসলাম রবির। এই আসনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে ইতোমধ্যে এলাকায় ব্যাপক সভা-সমাবেশ, মিছিল, মিটিং, সরকারের উন্নয়ন বার্তা জানান দেয়াসহ নির্বাচনমুখী নানা প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

তবে এ বিষয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। তাদের অভিযোগ, মন্ত্রী হবার পর ঈশ্বরদীতে নিজ দলের মধ্যে বিভক্তি তৈরির পেছনে তার ভূমিকা রয়েছে। পরিবার কেন্দ্রিক রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন, দলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করতে পারেননি। সর্বশেষ নিজ জামাতা ও ছেলের মধ্যে বিভাজন, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা নিয়ে তুমুল বিতর্ক ওঠে নিজ দলের মধ্যেই। এছাড়া তার বয়স হয়েছে। তাই এবারের নির্বাচনে নতুন নেতৃত্ব দেখতে চায় ঈশ্বরদী আওয়ামী লীগ ও সাধারণ মানুষ।

এই সুযোগ পেতে নৌকার প্রার্থী হতে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য পাঞ্জাব আলী বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম লিটন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রবিউল আলম বুদু, মন্ত্রীর জামাই ও ঈশ্বরদী পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টু।

অপরদিকে এবার মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম সরদার। কিন্তু নেতাকর্মীরা তার ওপর হতাশ, দীর্ঘদিন ধরে তিনি মাঠের বাইরে আছেন বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে। আন্দোলন সংগ্রামে কিছুটা পিছিয়ে তিনি। তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবের সমর্থকদের দাবি, এবার মনোনয়ন পাবেন তিনি। এ ব্যাপারে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে সবুজ সংকেতও পেয়েছেন বলে তারা দাবি করছেন।

এলাকার সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীরা জানান, হাবিব মনোনয়ন পেলে বিএনপি আসনটি পুনরুদ্ধার করতে পারে। এছাড়া ঈশ্বরদী উপজেলা বিএনপি সভাপতি শামসুদ্দিন আহমেদ মালিথা, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র মকলেছুর রহমান বাবলু, বিএনপি নেতা ও শিল্পপতি আকরাম আলী খান সঞ্জু, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু ও বিএনপি নারী নেত্রী ললিতা গুলশান মিতা মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।

এদিকে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন জামায়াতের মাওলানা নাসির উদ্দিন। পরবর্তী ২০০১ ও ২০০৮ সালে জোটকে ছাড় দিয়ে এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি। জামায়াতের দাবি, জয়ী হওয়ার মতো ভোট ব্যাংক থাকতেও জোটের স্বার্থে দুইবার আসনটি ছেড়ে দিয়েছিল বিএনপিকে। কিন্তু বিএনপির ঘরোয়া দ্বন্দ্বে মাসুল গুনতে হয়েছে জামায়াত ও জোটকে। তাই এবার আসনটি ফিরে পেতে চায় তারা। সেই লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে প্রচারণা চালাচ্ছে জামায়াত। মাঠ পর্যায়ে ভালো পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা থাকায় এখানে জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডল প্রার্থী হতে চাইবেন। সর্বশেষ গত উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যানের পদে প্রার্থী দিয়েছিল জামায়াত। এছাড়া এ আসনের অপর উপজেলা আটঘরিয়ায় চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছিল জামায়াত। অন্যদিকে উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হায়দার আলীর নাম শোনা যাচ্ছে।

এ আসনে জয় পেতে বিএনপির কোন্দল গ্রুপিং মেটানোর কোনো বিকল্প নেই। দ্বন্দ্ব শেষ করে একক প্রার্থী দিলে বিএনপি আসনটি পুনরায় নিজেদের দখলে নিতে পারবে। তা না হলে বরাবরের মতো আসন হারাতে হবে বিএনপিকে। সে হিসেবে সিরাজ সরদার ইতিপূর্বে যেহেতু প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়েছেন, তাই এবার হাবিবুর রহমান হাবিবকে প্রার্থী হিসেবে একবার পরীক্ষা করা যেতেই পারে। এমনটি মনে করছেন বিএনপির অনেকেই।

আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বয়সের কারণে শামসুর রহমান শরীফ ডিলুকে প্রার্থী দেখতে চান না দলের মধ্যে একটি বড় অংশ। কারণ তিনি তিনবার এমপি হয়েছেন, একবার মন্ত্রী হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে রয়েছেন। আর কী তার চাওয়ার আছে? তাই নতুন নেতৃত্ব দেখতে চান নেতাকর্মীরা-এমন জোর আলোচনা রয়েছে। এমন সমীকরণে বর্তমান সাংসদ ডিলুর পরই নজরুল ইসলাম রবি ও পাঞ্জাব বিশ্বাস নৌকার নতুন প্রার্থী হতে পারেন। আর তাতেই লড়াই জমবে আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর