কিশোরগঞ্জ-১ আসনে সৈয়দ আশরাফের বেদনার্ত অনুপস্থিতি

বিবিধ, নির্বাচন

ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 01:21:19

তাঁর অনুপস্থিতি বড় বেশি চোখে পড়েছে। তাঁর না-থাকার ঘটনাটি মানুষের বেদনাকে বাড়িয়েছে বহুগুণ। বার বার মনে হয়েছে তাঁর কথা। জেল হত্যা দিবসে সৈয়দ আশরাফের বেদনার্ত অনুপস্থিতি সবাইকে স্পর্শ করেছে।

অথচ প্রতিটি ৩ নভেম্বর তাঁকে দেখা যায়। কষ্টের পাহাড় বুকে নিয়ে তিনি থাকেন জেল হত্যা দিবসের প্রতিটি অনুষ্ঠানে। বনানী গোরস্তানে কিংবা ঢাকা কেন্দ্রিক কারাগারের সেই প্রকোষ্ঠের সামনে, যেখানে বর্বর ঘাতকের দল নির্মমভাবে হত্যা করেছিল তাঁর পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জাতীয় চার নেতাকে।

এ বছর জেল হত্যা দিবসে স্বদেশ থেকে সুদূরে ব্যাংককের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছিলেন সকল আয়োজনের আড়ালে। শারীরিক কারণে উপস্থিত থাকতে পারেন নি এই ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা। না ঢাকায়, না ময়মনসিংহে, না কিশোরগঞ্জের যশোদল ইউনিয়নের বীরদামপাড়া গ্রামে পিতার জন্মভিটায়, কোথাও তিনি থাকতে পারেন নি।

মানুষের অনুসন্ধিৎসু চোখ বার বার খুঁজেছে জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুলের রক্ত ও রাজনীতির উত্তরাধিকার সৈয়দ আশরাফকে। খুঁজেছে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের এই কাণ্ডারীকে। পিতা সৈয়দ নজরুল যেভাবে বঙ্গবন্ধুর অনুসরণের ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত, তেমনি বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার একনিষ্ঠ অনুসারী সৈয়দ আশরাফকে মানুষ বার বার খুঁজে পেতে চেয়েছে।

আসন্ন নির্বাচনের ডামাডোলে নিজের কিশোরগঞ্জ-১ আসনে সৈয়দ আশরাফ ছিলেন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। সবাই তাঁর কথা, তাঁর শারীরিক অবস্থার কথা জানতে চেয়েছে। সবার মুখেই ছিল একটি প্রশ্ন, 'তিনি কবে আসবেন? এসে নির্বাচনে অংশ নেবেন?'

সৈয়দ আশরাফের আসনে তাঁর অবর্তমানে যারা নির্বাচনের প্রত্যাশায় কাজ করছেন, তাদের সকলেই চান, তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন সবার মাঝে। বস্তুত সকলেই কাজ করছেন সৈয়দ আশরাফের কথা মাথায় রেখে।

কিশোরগঞ্জের রাজনৈতিক সূত্রগুলো বার্তা২৪.কমকে জানায়, সৈয়দ আশরাফের উত্তরসুরী হতে অনেকেই কাজ করছেন। কারণ, রাজনীতি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এতে শূন্যতার কোনও সুযোগ নেই। নির্বাচন সৈয়দ আশরাফ করলেও রাজনীতি করছেন দলের অনেক নেতা, যারা প্রয়োজনের সময় নৌকার হাল ধরে ভোটের মাঠে নামার যোগ্যতা রাখেন।

মাঠ পর্যায়ে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা ও সৈয়দ আশরাফের চাচাতো ভাই সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম কিশোরগঞ্জে সৈয়দ পরিবাররের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব করছেন। সৈয়দ আশরাফের আপন ভাইদের কেউ একজনও প্রয়োজনে স্থানীয় রাজনীতির মাঠে আবির্ভূত হতে পারেন।

তাছাড়া রাষ্ট্রপতির মেজো ছেলে রাসেল আহমেদ তুহিন নৌকা ও উন্নয়নের পক্ষে ব্যাপক জনসংযোগ করায় তার প্রার্থীতাও সামনে চলে এসেছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ূন, কিশোরগঞ্জ সদর উত্তরাঞ্চলের একজন আইনজীবী নেতা ও সদর দক্ষিণাঞ্চলের একজন কলেজ শিক্ষক নেতা আগে থেকেই তৃণমূলে কাজ করছেন। সৈয়দ আশরাফ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে এদের কেউ একজন নৌকার মাঝি হয়ে ভোটের নদি পাড়ি দিতে পারেন।

তবে, সৈয়দ আশরাফের দীর্ঘ অসুস্থতা ও অনুপস্থিতিতে তাঁর সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ভালোবাসা প্রসঙ্গই এখন প্রধান। নতুন প্রার্থীর চেয়ে অনুপস্থিত সৈয়দ আশরাফকে নিয়েই সবাই চিন্তিত। অনেকে এমনও বলেছেন যে, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কেবিনেট মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম মেম্বার হিসাবে বহাল তবিয়ত। তিনি অফিসিয়ালি সংসদ থেকে চিকিৎসার্থে স্বাভাবিক ছুটিতে। এ অবস্থায় জল্পনা-কল্পনাভিত্তিক তিনি যদি এমপি নির্বাচন করতে না পারেন, তাহলে যে বা যারা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে কৌশলী ভাষায় তিনি সুস্থ হয়ে আসুন, নির্বাচন করুন বা করবেন ইত্যাদি বলে নিজকে বিমোচক প্রার্থী হিসেবে প্রচারণায় লিপ্ত তা যৌক্তিক নয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা ক্ষোভের ভাষায় প্রশ্ন করেন, 'সৈয়দ আশরাফের প্রতি মমত্ব ও সম্মান প্রকাশের পাশাপাশি আনন্দময় শারীরিক ভাষায় ছবির পোজ দিয়ে বিকল্পে প্রার্থী দাবিদারের সমর্থনে প্রচার মাধ্যমে নৌকায় ভোট প্রার্থনা চিকিৎসাধীন নেতার প্রতি কোন ধরনের ভালোবাসা?'

কিশোরগঞ্জ-১ আসনে সৈয়দ আশরাফের বেদনার্ত অনুপস্থিতি বিরাট বড় রাজনৈতিক ফ্যাক্টর হয়ে আছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। নতুন কোনও প্রার্থীকে মাঠে জায়গা পেতে হলে এ বাস্তবতা বুঝেই অগ্রসর হতে হবে বলেও মন্তব্য করেন স্থানীয় রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর