নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন এরশাদ পুত্র!

বিবিধ, নির্বাচন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 23:50:34

এবার নির্বাচনী মাঠে এরশাদ পরিবারের একাধিক নতুন মুখকে দেখা যেতে পারে। ছেলে রাহগির আল মাহি এরশাদ সাদকে (সাদ এরশাদ) প্রার্থী করার জোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

এর বাইরে নতুন মুখ হিসেবে এবার নির্বাচনী মাঠে সরব রয়েছেন ভাতিজা (মামাতো ভাইয়ের ছেলে) পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এরশাদের ব্যক্তিগত সহকারি মেজর (অব.) খালেদ আক্তার, ভাগিনা (মেরিনা রহমানের ছেলে) আদেলুর রহমান আদেল।

মেজর খালেদ আক্তারের বিষয়ে নিশ্চিত হলেও অন্য দু’জনের বিষয়ে এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। মেজর খালেদ আক্তার নির্বাচন করবেন লালমনিরহাট-১ (হাতিবান্ধা-পাটগ্রাম) আসন থেকে। ওই আসনে বর্তমানে আওয়ামী লীগের এমপি রয়েছেন মোতাহার হোসেন।

খালেদ আক্তার বার্তা২৪.কমকে বলেন, হ্যাঁ আমি এবারই প্রথম নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছি। স্যারও গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছেন। আমি আশা করছি, জাতীয় পার্টির হারানো এই আসনটি পুনরুদ্ধার করতে পারবো। এখানে লাঙ্গলের বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। আর বর্তমান এমপির নানা অনিয়ম দুর্নীতির কারণে মানুষ তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

নির্বাচিত হতে পারলে সীমান্তবর্তী এই আসনকে মাদকমুক্ত একটি সুন্দর সমাজ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন খালেদ আখতার।

ভাগিনা ব্যাংকার আদেলুর রহমান আদেল নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ব্যাপক নির্বাচনী পোস্টার শোভা পাচ্ছে তার নির্বাচনী এলাকা ও পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। ওই আসনে ২০০৮ ও ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টির এমপি শওকত চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছেন। এবার তাকে মনোনয়ন না দেওয়ার বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যদিকে ছেলে সাদের বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন খোদ রওশন এরশাদ। তাকে কুড়িগ্রাম-২ ( সদর-ফুলবাড়ি-রাজারহাট) আসন থেকে প্রার্থী করার বিষয়ে প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন বলে রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠ সূত্র নিশ্চিত করেছেন। তবে এই প্রস্তাবের বিষয়ে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ হ্যাঁ কিংবা না কোনোটাই বলেননি।

রওশন এরশাদ পুত্র সাদ এরশাদ দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়ায় প্রবাস জীবনযাপন করছেন। মাঝে-মধ্যে বাংলাদেশে আসলেও তাকে রাজনীতিতে দেখা যায়নি। কিংবা কোনো সভা-সমাবেশে দেখা যায়নি। সর্বশেষ তাকে দেখা যায় ২০১৫ সালে হোটেল ওয়েস্টিনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে। সেদিন এরশাদ ওই অনুষ্ঠানে এরশাদ মুখ ফসকে তার একমাত্র পুত্র এরিখ বলে উল্লেখ করলে নিরবে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন সাদ।

রওশন এরশাদের ছেলে সাদ দেশে এলেও স্ত্রীসহ মায়ের গুলশানের বাসাতেই ওঠেন। বাবার সঙ্গে দেখা করতে গেলেও সেখানে কখনই থাকেন না। তার মায়ের একান্ত ইচ্ছা ভবিষ্যতে জাতীয় পার্টির হাল ধরুক সাদ।

নতুন তিন মুখের বাইরে এরশাদের বোন মেরিনা রহমানকেও প্রার্থী করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে মা মেরিনা রহমান প্রার্থী হলে আদেলুর রহমানের আর সম্ভাবনা থাকছে না। মেরিনা রহমান বেশ কয়েকবার সংরক্ষিত আসনে এমপি মনোনিত হয়ে আসছেন।

এছাড়া নিয়মিত একাদশে অর্থাৎ আগে থেকেই পরিবারের যারা প্রার্থী রয়েছেন তারা এবারও থাকছেন। এরমধ্যে এরশাদ নিজে রংপুর-৩ (সদর) ও ঢাকা-১৭ (ক্যান্টমেন্ট, গুলশান, বনানী ও ভাষানটেক) আসনে প্রার্থী হবেন।

রওশন এরশাদ এবার নির্বাচন করবেন তার বাবার বাড়ি ময়মনসিংহ-৪ আসন থেকে। ২০১৪ সালেও তিনি এই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ভাই জিএম কাদের লালমনিরহাট-৩ (সদর) থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর পার্টির সিনিয়র নেতা এরশাদের ভাগ্নি জামাই জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু নির্বাচন করবেন চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকে। যদিও তিনি আত্মীয়তার চেয়ে পার্টির পরিচয়েই বড়। ২০০৮ ও ২০১৪ সালে তিনি ওই আসন থেকে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়ে আসেন।

বিগত সময়ে নির্বাচন করলেও এবার শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন ভাতিজা (বড় ভাইয়ের ছেলে) আসিফ শাহরিয়ার। এর আগে গঙ্গাচড়া আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই আসনে প্রেসিডিয়াম সদস্য মসিউর রহমান রাঙা থাকায় শাহরিয়ারের প্রার্থীতা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

তবে মসিউর রহমান রাঙাকে যদি লালমনিরহাট-২ (কালিগঞ্জ-আদিতমারি) আসনে প্রার্থী করা যায় সে ক্ষেত্রে শাহরিয়ার রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনে প্রার্থী করা হতে পারে। এক্ষেত্রে জটিলতা হচ্ছে ওই আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্য রয়েছেন। তাকে বসিয়ে রেখে আসনটি ছাড়তে চাইছে না আওয়ামী লীগ।

আবার মসিউর রহমান রাঙার পক্ষ থেকে আপত্তি রয়েছে। সে কারণে শেষ পর্যন্ত শাহরিয়ারকে উপনির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হতে পারে। এরশাদ যদি দু’টি আসনে জেতেন তবে রংপুর ছেড়ে দিলে তখন হয়তো শাহরিয়ারের কপাল খুলতে পারে।

এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এরশাদের প্রেস ও পলিটিক্যাল সেক্রেটারী সুনীল শুভ রায় বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্যারের (এরশাদের) তিনভাই একসঙ্গে এমপি ছিলেন, যখন তিনি ক্ষমতার বাইরে। অর্থাৎ নিজ যোগ্যতায় তারা এমপি হয়েছিলেন। এবারও অনেকেই মনোনয়ন চাচ্ছেন। মনোনয়ন চাওয়া কোনো দোষের না, তবে পার্লামেন্টারি বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে।

সাদের প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে তার কোনো তথ্য জানা নেই। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, পার্টির কোনো ফোরামে সে সদস্য থাকলেও থাকতে পারে। এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর