রাবি’র ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি নিয়ে অসন্তোষ

ভর্তিযুদ্ধ, শিক্ষা

সাইফুল্লাহ সাইফ, রাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-30 04:13:31

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নতুন পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে। আর এই পদ্ধতি নিয়ে ভর্তিচ্ছু ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

নতুন নিয়মে ইউনিট ভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণে সীমাবদ্ধতা ও ভর্তি আবেদন ফরমের উচ্চমূল্য নির্ধারণের ফলে ভর্তি পরীক্ষায় আবেদন করা নিয়ে শঙ্কিত ভর্তিচ্ছুরা।

এদিকে, ভর্তি পরীক্ষার নতুন এই পদ্ধতির ‘খামখেয়ালিপনা’ উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশাসনের কড়া সামলোচনা করছেন শিক্ষার্থীরা। এ পদ্ধতির বাতিল চেয়ে টানা দু’দিন আন্দোলনও করেন তারা।

ভর্তিচ্ছু ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা বলছেন, নতুন এ নিয়মের ফলে অনেক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। ভর্তি পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা না করে প্রশাসন যে নিয়ম করেছে তা সম্পূর্ণ অযৌক্তি। তাদের দাবি দরিদ্র ও মেধাবী ভর্তিচ্ছুদের কথা মাথায় রেখে প্রশাসন যেন নতুন সিদ্ধান্ত নেয়। অন্যথায় অনেক মেধাবী ভর্তিচ্ছুর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার স্বপ্ন ভেঙে যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর পাঁচটি ইউনিট থাকলেও এ বছর তিনটি ইউনিটে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ‘এ’ ইউনিটের অধীনে কলা, আইন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ‘বি’ ইউনিটের অধীনে ব্যবসায় শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও ইনস্টিটিউট এবং ‘সি’ ইউনিটের অধীনে বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নতুন নিয়মে ভর্তিচ্ছুরা যে বিভাগ থেকে এইচএসসি পাশ করবে কেবল সে বিভাগেই পরীক্ষা দিতে পারবেন।

আরও পড়ুন: রাবির ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি পাঁচশ টাকা করার দাবি

প্রতি ইউনিটে ৩২ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবেন। নতুন নিয়মে একজন ভর্তিচ্ছু কেবল একটি ইউনিটেই পরীক্ষা দিতে পারবেন। মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষার মধ্যে ৬০ নম্বর এমসিকিউ এবং ৪০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হবে। কেবল ২০১৯ সালে এইচএসসি পাশ করা শিক্ষার্থীরাই আবেদনের সুযোগ পাবেন।

দুই ধাপে এ আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। আবেদনের প্রথম ধাপে শিক্ষার্থীদের ৫৫ টাকা দিয়ে আবেদন করতে হবে। এসএসসি ও এইচএসসির ফলের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই শেষে প্রাথমিকভাবে ৩২ হাজার শিক্ষার্থীকে মনোনীত করা হবে। আবেদনের দ্বিতীয় ধাপে মনোনীত শিক্ষার্থীরা ১ হাজার ৯৮০ টাকা দিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করবেন। দুই ধাপের আবেদনে শিক্ষার্থীদের মোট ২ হাজার ৩৫ টাকা ব্যয় করতে হবে।

কয়েকজন ভর্তিচ্ছু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অনেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাশ করে অবিজ্ঞান ইউনিটে পরীক্ষা দেবে। এতে অবিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তিচ্ছুরা পিছিয়ে পড়বে। কয়েকটি ইউনিটে পরীক্ষা দিলে যে কোনো একটি ইউনিটে চান্স পাওয়ার আশা থাকে। নতুন নিয়মে অনেক ভর্তিচ্ছুই আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুরের বাসিন্দা ও ভর্তিচ্ছু আবু সালেহ বলেন, ‘একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের জন্য ভর্তিচ্ছুদের বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ হয়ে যায়। আর এই টাকা জোগাড়ের জন্য আমাদের হিমশিম খেতে হয়। অস্বচ্ছল ভর্তিচ্ছুদের কথা বিবেচনায় রেখে ভর্তি ফরমের মূল্য নির্ধারণ করা উচিত ছিল।’

তাবাসুম নাঈমা নামের আরেক ভর্তিচ্ছু বলেন, ‘ইউনিটের সীমাবদ্ধতা ভতিচ্ছুদের মানসিকভাবে দুর্বল করে দেবে। অনেকে বিজ্ঞান বা বাণিজ্য শাখা থেকে পাশ করার পর মানবিক শাখায় ভর্তির প্রস্তুতি নিয়েছেন। নতুন নিয়মে তারা আবেদন করতে পারলেও চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।’

প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত পরীক্ষার নামে বাণিজ্য ছাড়া আর কিছুই না উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সিনিয়র অধ্যাপক বলেন, ‘ফরমের উচ্চমূল্য নির্ধারণ করে পরিকল্পিতভাবে গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতীয়মান হয়, শিক্ষার্থীর চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজেদের লাভকেই বড় করে দেখেছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি উপ-কমিটির সভাপতি ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘নতুন নিয়মে ফরমের মূল্য বাড়ানো হয়নি, বরং আগের তুলনায় কমেছে। আগে একাধিক ইউনিটে পরীক্ষা দিতে যে খরচ হতো, এখন একাধিক ইউনিটকে একীভূত করায় আগের তুলনায় অনেক কম খরচ হবে। ইউনিট কমিয়ে আনার ফলে ফরমের মূল্য বেশি মনে হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নতুন নিয়মে শিক্ষার্থীরা যে শাখা থেকে পাশ করবে কেবল সে বিভাগেই পরীক্ষা দিতে পারবেন। তবে চান্স পাওয়ার পর বিভাগ পছন্দক্রম ফরম পূরণ করার সময় ইউনিট পরিবর্তনের সুযোগ থাকছে। বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ইউনিটের (সি ইউনিট) কোনো শিক্ষার্থী চাইলে ইউনিট পরিবর্তন করে কলা বা বাণিজ্য অনুষদভুক্ত ইউনিটে (এ/বি ইউনিট) ভর্তি হতে পারবেন। এসব ইউনিটে অন্য শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু সংখ্যক সিট নির্ধারিত থাকবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর