পর্যবেক্ষকদের ‘ভুলে’ পরীক্ষা শুরু হলো দেরিতে, দাবির মুখে পুনরায় পরীক্ষা

, শিক্ষা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো | 2024-02-15 15:55:57

চট্টগ্রামে এসএসসি পরীক্ষার প্রথমদিনে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির শিকার হয়েছে ৪০ জন পরীক্ষার্থী। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের একটি কক্ষে আধাঘণ্টা দেরিতে প্রশ্নপত্র দেওয়া হলেও উত্তরপত্র নিয়ে নেওয়া হয় ঠিক সময়েই। এর ফলে ওই শিক্ষার্থীরা সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। পরে এ নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা বিষয়টি প্রধান শিক্ষককে জানালে তিনি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের আধাঘণ্টা সময় বাড়িয়ে দিয়ে পুনরায় পরীক্ষা নেন। দায়িত্ব অবহেলা করায় ওই কক্ষে দায়িত্ব পালন করা দুজন পর্যবেক্ষককে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) এসএসসি পরীক্ষার প্রথমদিন বাংলা প্রথম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরুর প্রথমেই শিক্ষার্থীদের বহুনির্বাচনী উত্তরপত্র দেওয়া হয়। এটির জন্য ৩০ মিনিট সময় বরাদ্দ ছিল। বহুনির্বাচনী পরীক্ষা শেষ হতেই পরে সৃজনশীল বা রচনামূলক পরীক্ষা হয়। দুটি পরীক্ষার মাঝখানে কোনো বিরতি না থাকলেও কলেজিয়েট স্কুলের ওই কক্ষে দুজন পর্যবেক্ষক বহুনির্বাচনী পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীদের রচনামূলক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সরবরাহ করেননি। এভাবে এক-দু মিনিট করে গড়িয়ে যায় ৩২ মিনিট। শিক্ষার্থীরা বারবার তাদের কাছে জানতে চাইলেও তারা চুপ থাকেন। পরে পাশের আরেকটি কক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে দেখে বেলা ১১টা ২ মিনিটে শিক্ষার্থীদের রচনামূলক প্রশ্নপত্র সরবরাহ করলেও আবার ঠিক বেলা ১টায় উত্তরপত্র নিয়ে ফেলেন। আধাঘণ্টা দেরিতে পরীক্ষা শুরু হলেও ঠিক সময়ে নিয়ে ফেলায় অনেক শিক্ষার্থীই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি।

পরে পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি তাদের অভিভাবকদের জানালে সবাই চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলামের দপ্তরে যান। প্রধান শিক্ষক ওই কক্ষে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করা একই স্কুলের শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ এবং আলকরণ নূর আহমদ সিটি কর্পোরেশন উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল করিমকে ডেকে পাঠান। তখন ওই দুই পর্যবেক্ষক আধাঘণ্টা দেরিতে রচনামূলকের প্রশ্নপত্র সরবরাহ করার বিষয়টি স্বীকার করেন। এরপর প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের আধাঘণ্টা সময় বাড়িয়ে দিয়ে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

জানতে চাইলে কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমার কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে ১ হাজার ৩১৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১ হাজার ৩০৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। এত পরীক্ষার্থীর মধ্যেও অন্য কোনো কক্ষে সমস্যা হয়নি। শুধু একটি কক্ষে দুই পর্যবেক্ষকের ভুলে ৪০ জন পরীক্ষার্থীকে দেরিতে প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়। আমি বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন যাতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে সেই উদ্যোগ নিই। তাদের আধাঘণ্টা সময় বাড়িয়ে দিই। তারা ঠিকঠাকভাবে পরীক্ষা শেষ করেন।’

দুই পর্যবেক্ষকের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ঠিক সময়ে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করেছি, ঠিক সময়ে বেলও বাজানো হয়েছে। একই বেলে যদি পুরো কেন্দ্র চলে তাহলে একটি কক্ষে কেন সমস্যা হবে? ওই দুই শিক্ষককে তাৎক্ষণিকভাবে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাব দেওয়ার পরপরই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কেন দেরিতে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করেছেন সেটি জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ এবং রেজাউল করিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা মনে করেছি রচনামূলক প্রশ্নপত্র দেওয়ার আগে ঘণ্টা দেওয়া হবে। সেটির জন্য আমরা অপেক্ষা করছিলাম। ঘণ্টা কেন পড়ছে না সেটি জানতে পাশের রুমে গিয়ে দেখি পরীক্ষা চলছে। তখন আমরা প্রশ্নপত্র দিয়ে দিই। আমরা জানতাম না যে মাঝখানে ঘণ্টা দেওয়া হয় না। এই কারণে প্রশ্নপত্র দিতে একটু দেরি হয়ে যায়।’

পুনরায় ৩০ মিনিট সময় বাড়িয়ে দেওয়া হলেও এমন অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। তাদের অবস্থা দেখে অভিভাবকদের কেউ কেউ কান্নাকাটি করতে থাকেন।

আকতার হোসেন নামের একজন অভিভাবক বলেন, ‘এটা শিক্ষার্থীদের প্রথম পরীক্ষা ছিল। প্রথম দিনেই তারা এমন অপ্রীতিকর পরিস্থিতির শিকার হলো, যেটার আঘাত বাকি পরীক্ষাগুলোতেও পড়তে পারে। প্রধান শিক্ষক মহোদয় যথেষ্ট আন্তরিকতা দেখিয়েছেন। পুরো ভুলটা মূলত দুই পর্যবেক্ষকের। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’

ওই কক্ষে হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ২০ জন এবং মেরন সান স্কুলের ২০ জন শিক্ষার্থী ছিল। অভিভাবকেরা জানিয়েছেন পরেরবার পরীক্ষা নেওয়ার সময় ৩৯ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। বাকি একজন চলে গিয়েছিল। তবে প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন সব শিক্ষার্থীই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।

 

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর