ডব্লিউটিওতে ভারতের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ

, অর্থনীতি

সেন্ট্রাল ডেস্ক ৪ | 2023-08-25 21:10:14

সম্ভাব্য বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে বিশ্বে চলমান শঙ্কায় নতুন মাত্রা যোগ করল যুক্তরাষ্ট্র। এবার ভারতের রফতানি ভর্তুকি নিয়ে দেশটির বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর)। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ভারতের এ ধরনের কর্মসূচির কারণে প্রতিযোগিতার ‘অসম’ ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে; যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মার্কিন কর্মীরা। অন্যদিকে হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১০ হাজার কোটি ডলার বাণিজ্য উদ্বৃত্ত কমাতে চাপ দেয়া হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে এশিয়ার দুই বৃহত্তম অর্থনীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণাত্মক মনোভাব আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। খবর পিটিআই, এএফপি ও রয়টার্স। এএফপির হাতে আসা মার্কিন প্রশাসনের কিছু গোপন নথিতে দেখা গেছে, মৌলিক নীতিমালা ভঙ্গকারী সদস্য দেশগুলোকে শাস্তি দেয়ার লক্ষ্যে ডব্লিউটিওতে সংস্কার আনার প্রস্তাব করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির এ পদক্ষেপ স্পষ্টতই চীনকে লক্ষ করে। কারণ ট্রাম্প প্রশাসন শুরু থেকেই বলে আসছে, চীন বাজার অর্থনীতির দেশ নয় এবং এটি বহুপক্ষীয় সংস্থা ডব্লিউটিওর সদস্য হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। ভারতের বিরুদ্ধে ডব্লিউটিওতে উত্থাপিত নালিশে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, দেশটির কমপক্ষে অর্ধডজন কর্মসূচি রয়েছে, যেগুলো  রফতানিকারকদের বিশেষ আর্থিক সুবিধা দিয়ে থাকে। প্রাপ্ত আর্থিক সুবিধার কারণেই মার্কিন কর্মী ও ম্যানুফ্যাকচারারদের ক্ষতি করে সস্তায় পণ্য বিক্রি করতে পারেন ভারতীয় রফতানিকারকরা। যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি রয়েছে ভারতের এমন কার্যক্রমগুলো হচ্ছে— মার্চেন্ডাইস এক্সপোর্টস ফ্রম ইন্ডিয়া স্কিম, এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড ইউনিটস স্কিম এবং নির্দিষ্ট কিছু খাতের জন্য নির্ধারিত স্কিম (এর মধ্যে রয়েছে ইলেকট্রনিকস হার্ডওয়্যার টেকনোলজি পার্কস স্কিম, স্পেশাল ইকোনমিক জোনস, এক্সপোর্ট প্রমোশন ক্যাপিটাল গুডস স্কিম ও ডিউটি ফ্রি ইমপোর্টস ফর এক্সপোর্টার্স প্রোগ্রাম)। ইউএসটিআরের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এসব কর্মসূচির আওতায় নির্দিষ্ট শুল্ক, কর ও ফি থেকে রফতানিকারকদের অব্যাহতি দেয় ভারত। ইস্পাতপণ্য, ফার্মাসিউটিক্যাল, কেমিক্যাল, তথ্যপ্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট পণ্য, বস্ত্র ও পোশাক খাতের রফতানিকারকরা এসব কর্মসূচি থেকে সুবিধা পেয়ে আসছেন। এদিকে ভারত সরকারের নথি থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, ভারতের এসব কর্মসূচি থেকে দেশটির কয়েক হাজার কোম্পানি বছরে ৭০০ কোটি ডলারের আর্থিক সুবিধা পাচ্ছে। ইউএসটিআর বলছে, রফতানিতে ভর্তুকি একটি নিয়মবহির্ভূত প্রতিযোগিতা সুবিধা পাইয়ে দেয়। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটহাইজার গত বুধবার বলেন,‘এ রফতানি ভর্তুকির কারণে অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন মার্কিন কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বাণিজ্য চুক্তির আওতায় প্রাপ্য অধিকারগুলো জোরালোভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে বাণিজ্য সহযোগীদের সবসময়ই কৈফিয়ত দিতে বাধ্য রাখবে ইউএসটিআর। এছাড়া ডব্লিউটিওসহ সব সংস্থার নীতিমালা বাস্তবায়ন করে নিরপেক্ষ ও পারস্পরিক বাণিজ্য অব্যাহত রাখা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির পক্ষ থেকে এমন এক সময়ে ভারত নিয়ে ঘোষণা দেয়া হলো, যখন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোকলে যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন। এ সফরে ইউএসটিআরের সঙ্গে তার বৈঠক করার কথা রয়েছে। ভারতের রফতানি নিয়ে আগাম ঘোষণায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বুধবার টুইটারে উল্লেখ করেন, ‘আমাদের দেশের বিরুদ্ধে নিয়মবহির্ভূত চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে এমন দেশগুলোর প্রতি আর অন্ধ হয়ে থাকবে না যুক্তরাষ্ট্র।’ এছাড়া বুধবার চীন থেকে আমদানিতে ৬ হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা প্রকাশের পর পরই দেশটিকে নিজেদের সঙ্গে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত কমানোর ওপর চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এক টুইট বার্তাকে ব্যাখ্যা করে হোয়াইট হাউজের এক মুখপাত্র বুধবার এ কথা জানিয়েছেন। গত বুধবার ট্রাম্প টুইটারে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ১০০ কোটি ডলার কমাতে বলা হবে চীনকে। এখন হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র বলছেন, প্রেসিডেন্ট একে ১০ হাজার কোটি ডলার বোঝাতে চেয়েছেন। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যে চীনের উদ্বৃত্ত ছিল ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক ৫৬ হাজার ৬০০ কোটি ডলার বাণিজ্য ঘাটতির দুই-তৃতীয়াংশ। মঙ্গলবার প্রকাশিত পলিটিকোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যে বছরে ৩ হাজার কোটি ডলার শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিনিধি লাইটহাইজার। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এটি আরো বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর