কোরবানি ঈদ কেন্দ্রিক ভারতীয় পশু আমদানি কম!

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

জুনায়েদ শিশির, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 05:57:47

ঢাকা: মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-আজহা বা কোরবানি ঈদের বাকি মাত্র ১৮ দিন। এই ঈদে মুসলমানদের মধ্যে পশু কোরবানি নিয়ে বেশ আগ্রহ দেখা যায়। ফলে ঈদকে ঘিরে পশুর চাহিদা বেড়ে যায়। প্রতি বছরই বাংলাদেশে বাড়ছে কোরবানি দাতার সংখ্যা। মূলত দেশে পালন করা পশু দিয়ে সেই চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। ফলে প্রতিবেশী দেশগুলোথেকে পশু আমদানি করতে হয়। কিন্তু এবছর প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে পশু আমদানি কম হচ্ছে বলে দাবি করেছে মৎস্যও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের দাবি, কোরবানির ঈদের পশু যোগান দিতে প্রতিবেশি দেশের ওপর নির্ভরশিলতা কমিয়ে আনতে হবে। এ জন্যদেশের ভেতরেই পশু উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। এ বছর দেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু উৎপাদন করাহয়েছে, ফলে ভারত থেকে পশু আমাদানি কমবে।

তবে মন্ত্রণালয়ের এ দাবি মানতে নারাজ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা। বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউলইসলাম বলেন, ‘ভারতের ৫টি রাজ্য শুধু কোরবানি ঈদের জন্য পশু পালন করে থাকে। এটা বন্ধ করা সম্ভব নয়। সেটা হোকভারতের অর্থনীতি বা দুই দেশের অন্য কোনো স্বার্থে। তবে আমরা চাই দেশের কৃষক ও খামারিরা আরও বেশি গবাদিপশুলালন-পালন করুক। এতে কৃষক ও দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে।’

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত অঞ্চলের কাস্টমস চেকপোস্টের মাধ্যমেআমদানি হওয়া গবাদি পশুর সংখ্যা কমেছে। গত এপ্রিল থেকে জুন মাসে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে মোট গরু-মহিষ এসেছে৭২ হাজারের বেশি। তবে গত জুনমাসে পশু আমদানি করা হয়েছে অন্য দুই মাসের তুলনায় বেশি। যার প্রভাব দেশেরবাজারে পড়বে না বলে মনে করেন মাংস ব্যবসায়ীরা।

এনবিআর’র পরিখ্যান অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে মোট গবাদি পশু এসেছে ২৩ হাজার ৭৮১ টি। এর মধ্যে গরু ২১ হাজার ১৩৫টিএবং মহিষ ২ হাজার ৫৯০টি। মে মাসে এসেছে ২৩ হাজার ৬৫৮টি, এর মধ্যে গরু ২০ হাজার ৯১১টি এবং মহিষ ২ হাজার৭৪৭টি। জুন মাসে এসেছে ২৫ হাজার ২৪৪টি এর মধ্যে গরু ১৭ হাজার ১৯৬ টি এবং ৮ হাজার ৪৮টি মহিষ। এ হিসেবে মোটগাবাদি পশু আমদানি হয়েছে, ৭২ হাজার ৬৮৩টি। তবে ছাগল, ভ্যাড়া, উট এবং দুম্বার কোনো তথ্য ওই পরিসংখ্যানে উল্লেখনেই।

যেসব চেকপোস্ট দিয়ে সাধারণ পশু আমদানি করা হয় সেগুলো হলো- যশোর ও খুলনা অঞ্চলের নাভারণ, সোনাবাড়িয়া,ভৈরব, বসন্তপুর, কুলিয়া, সাতানী। রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলের মধ্যে কানসাট, খঞ্জনপুর, রাজবাড়ী, চারঘাট, শ্যামপুর,সুলতানগঞ্জ, ভোলাহাট এবং রংপুরের ইসলামপুর, ধরালা ব্রিজ। ময়মনসিংহের রৌমারি, সিলেটের মাঝেরগাঁও এবং ছাতক।কক্সবাজার রামু অঞ্চলে শাহপরীর দ্বীপ এবং হৃীলা এলাকা দিয়ে এসব পশু বাংলাদেশে এসেছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দাবি, এ বছর সারাদেশে ঈদ-উল-আযহায় কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা এক কোটি১৬ লাখ। এর মধ্যে গরু-মহিষ ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার এবং ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ৭১ লাখ। গতবছর এ সংখ্যা ছিল এক কোটি ৪লাখ। তবে এবছর কোরবানিযোগ্য হৃষ্টপুষ্ট গরু-মহিষের সংখ্যা প্রায় ২৯ লাখ ২০ হাজারের অধিক এবং ছাগল-ভেড়া ১৮ লাখ২৬ হাজারের বেশি। বাকিগুলো অনুৎপাদনশীল গরু-মহিষ ও ছাগল-ভেড়া।

জানা গেছে, কোরবানি উপলক্ষ্যে দেশে ইতোমধ্যে দুই হাজার ৫শ’টি পশুর হাটের ইজারা দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করেছে সিটিকর্পোরেশন, পৌরসভা  এবং ইউনিয়ন পরিষদ। আর একটু বাড়তি দাম পাওয়ার আশায় খামারি, ব্যপারী এবং কৃষরা পশুরযত্ন বাড়িয়ে দিয়েছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর