ঈদের আগেই বাড়ছে পেঁয়াজের দাম

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-22 17:27:38

ঢাকা: ঈদ ঘনিয়ে আসলেই বাংলাদেশে বাড়তে শুরু করে নিত্যপণ্যের মূল্য। ইতিমধ্যে বাজারে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। রাজধানীর কয়েকটি খুচরা ও পাইকারি বাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে। শুক্রবার (২৭ জুলাই) ঢাকার বাজারে প্রতিকেজি মানভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং আমদানি পেঁয়াজের প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায়। এদিন বাজারে ফার্মের ডিম ও ব্রয়লারের মুরগীর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি হালি ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৬ টাকায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগী ১৪০ টাকা থেকে বেড়ে ১৪৫ থেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাড়তে শুরু করে পেঁয়াজের বাজার। এসময়ে ২৫ থেকে ৪০ টাকা দরের প্রতি কেজি (আমদানি ও দেশি) পেঁয়াজের বাজার ৩০ থেকে ৫০ টাকায় পৌছে। পরবর্তীতে মাসের মাঝামাঝি সময়ে এর মূল্য আরও ৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৫৫ টাকায় পৌঁছায়। বর্তমানে এর প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

দাম বাড়ার বিষয়ে শাহজাহানপুর, মালিবাগ বাজার, শান্তিনগর, রামপুরা, ফকিরাপুল বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের (রোজার) পর থেকেই পেঁয়াজের বাজার বাড়তির দিকে। কয়েক সপ্তাহ থেকে পাইকারি বাজারে ক্রমানয়ে বাড়ছে মূল্য। কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, বন্দর ও আমদানি সমস্যা। এর সঙ্গে আড়ৎ মালিকরা অতিরিক্ত পরিবহন খরচের অভিযোগে দাম বাড়াচ্ছেন। যার ফলে বাড়তি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি পেঁয়াজের বাজার আরও বাড়তে পারে। 

শুক্রবার রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আমদানি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা, গত মাসে বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, যা গত মাসেছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে।

সরকারি বিপনন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে গত বছরের একি সময়ের তুলনায় চলতি সময়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৭৬ দশমিক ৯২ শতাংশ, আর আমদানি পেঁয়াজর দাম বেড়েছে ৭০ দশমিক ২১ শতাংশ। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় এবং আমদানি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে, ২২ থেকে ২৫ টাকা।

কাওরান বাজার, শ্যাম বাজার পেঁয়াজ, রসুন ও আদার আমদানি ও দেশি মসলা ব্যবসায়ীরা বার্তা২৪.কমকে জানান, খুচরা ও পাইকারি বাজারের সঙ্গে কোন মিল নাই। দাম বাড়ার বিষয়ে মিডিয়াকে দায়ি করছেন অনেক ব্যবসায়ী। তাদের মতে, বাজারে কোন পণ্যের সঙ্কট নেই। ঈদেও হবেনা। পাইকারি ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়তই লোকসান দিচ্ছেন। আমাদানি পর্যায়ে পর্যাপ্ত মসলা পণ্য আসছে। বাজার বৃদ্ধির কোন সম্ভাবনা নাই।

শ্যামবাজরের মোসার্স সিকদার এন্ড সন্স এর পরিচালক মো. আকাত আলী মোল্লা বার্তা২৪.কমকে জানান, শুক্রবার পাইকারি বাজারে (৫০ কেজি বস্তা হিসেবে) প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়, আমদানি ২৩ থেকে ২৭ টাকা, আদা (চায়না) প্রতি কেজি ৭৫ টাকা, রসুন দেশি প্রতি কেজি ২৫, ৩০ এবং ৩৫ টাকার মধ্যে রয়েছে। আমদানি রসুন ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পাইকারি ও খুচরা বাজারে এ দায় চাপানো নিত্যপণ্যের বাজারের বিষয়ে ভোক্তারা অতিষ্ট সব সময়। তারা বলছেন, গত কয়েক বছর থেকে রোজা বা কোরবানির ঈদের কাছাকাছি সময়ে দাম বাড়ার প্রবণতা তেমন একটা দেখা না গেলেও নির্ধারিত উৎসবের চার বা পাঁচ সপ্তাহ পূর্বেই বেড়ে যায় বেশিরভাগ পণ্যের দাম। যার ফলে উৎসব কেন্দ্রীক দাম বাড়ছেনা বলে দাবি করে কর্তৃপক্ষ।

বাজার পরিস্থিতির বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বর্তমানে পেঁয়াজের বাজার আবার অস্থিতিশীল হতে শুরু করেছে। এখন দাম বাড়র কোন যৌক্তিকতা নেই। তবে আমদানি পর্যায়ে সমস্যা থাকতে পারে, তার মানে কেজি প্রতি ৫ টাকা ১০ টাকা বাড়বে তা ঠিক নয়। পণ্যের বাজারের মূল্য বৃদ্ধি ও নিয়েন্ত্রণের বিষয়ে সরকার যতক্ষণ ভোক্তাদের সঠিক তথ্য, অর্থাৎ উৎপাদন ও চাহিদার তথ্য দিতে না পারবে এবং চাহিদা পরিমান উৎপাদন করতে না পারবে, সেই সময় পর্যন্ত অসাধু ব্যবসায়ীরা এর সুবিধা নিতেই থাকবে। এটা কখনোই কাম্য নয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর