বইমেলায় বিকাশ

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-30 22:49:46

টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গ্রন্থমেলার প্রবেশপথ থেকে একটু এগুলেই দেশের অন্যতম মোবাইল ব্যাংকিং সেবা- বিকাশের কাস্টমার সার্ভিস বুথ। বুথের আশেপাশে কয়েকটি বেঞ্চ পাতানো। কয়েকহাত দূরে মেলায় আগত পাঠক-লেখক-দর্শনার্থীদের জন্য বিনামূল্যে কফি ও পানি পানের ব্যবস্থা।

বুথ ঘিরে পাঠক-গ্রাহক। কেউ অ্যাকাউন্ট খুলছেন, তো কেউ ক্যাশআউট-ইন সার্ভিস নিচ্ছেন। কারো হয়ত বই কিনতে গিয়ে পেমেন্টে সমস্যা হয়েছে-তারা সমাধান নিচ্ছেন। বিকাশের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরাও গ্রাহকদের সেবায় ব্যস্ত।

বিকাশের স্টলে মেলায় আসা দর্শনার্থীদের ভিড়/ছবি:সুমন শেখ

ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকাল সাড়ে তিনটা। বইমেলার প্রবেশপথ খুলে দেওয়া সঙ্গে সঙ্গে বইপ্রেমীদের আগমনে ভরে উঠতে থাকে মেলা প্রাঙ্গণ। একগ্লাস পানি পান করতে, তখন আমার নজর বিকাশে পানির ফিল্টারের দিকে।

এর মধ্যে ১২/১৩ বছরের এক কিশোরী পেছন থেকে জিজ্ঞেস করল, ‘বিকাশে বই দান করে কোথায়?- তার সঙ্গে হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধানো এক পঁয়ত্রিশর্ধ্বো পুরুষ। পরে জানা গেল তার বাবা। আমি কথা বলার আগেই বিকাশের মেলায় নিয়োগ দেওয়া তরুণ এক নারী কর্মী বললেন, ‘এদিকে আসেন’।

বিকাশের বই ডোনেট কর্মসূচি/ছবি: সুমন শেখ

প্রযুক্তা পারমিতা নামের অষ্টম শ্রেণিতে পড়া সেই কিশোরী বিকাশের বই অনুদান কেন্দ্রে আবুল হাসানে শিক্ষণীয় একটি জোকসের বই দান করলেন।

পরে বিকাশের এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বহু প্রাণের এই মিলনমেলায় বিকাশ শুধু ১০ শতাংশ ক্যাশব্যাক, তাৎক্ষণিক অ্যাকাউন্ট খোলা ও কাশইন-আউট সেবা দিচ্ছেন না, বইমেলার বিকাশের সবচেয়ে প্রশংসনীয় উদ্যোগ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সম্পৃক্ত করে প্রথমবারের মতো বই প্রদান কর্মসূচি নিয়েছে।

স্টলে বিকাশের সেবা নিচ্ছেন গ্রাহক/ ছবি: সুমন শেখ

শুধু নিজেরাই এ উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত থেকে ক্ষান্ত হয়নি, বইমেলায় আগত পাঠক-লেখক-দর্শনার্থীদেরও সম্পৃক্ত করেছে। এর জন্য কাস্টমার বুথের পাশাপাশি মেলা প্রাঙ্গণে রয়েছে ৪টি বই অনুদান কেন্দ্র। এর মধ্যে তিনটি সোহরাওয়ার্দীতে আর একটি বাংলা একাডেমিতে। সেখানে বইমেলায় আসা পাঠকরা ঘরে পড়া হয়ে গেছে এমন পুরনো বই যারা বই কিনতে পারেন না, সেই সব সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য দান করে যাচ্ছেন। আবার অনেক বই কেনার মধ্যে একটি নতুন বই কিনে বিকাশের অনুদান কেন্দ্রে দিয়ে যাচ্ছেন। এর প্রমাণ পাওয়া গেল বিকাশের বই অনুদান কেন্দ্রে সাজানো আলমারিগুলোর বই দেখে।

বিকাশ সূত্রে জানা যায়, বিকাশের পক্ষ থেকে এ বছর ৫ হাজার বই বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ৩টি স্কুলসহ ২০টি স্কুলের ৯ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থীর মাঝে এই বই বিতরণ করা হবে। মেলা প্রাঙ্গণে বিকাশের বই সংগ্রহ কেন্দ্রে পাঠকদের কাছ থেকে পাওয়া বইগুলো সুবিধাবঞ্চিত এইসব শিশুদের হাতে তুলে দেয়া হবে।

বার্তা২৪.কম এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মেলায় আসা দর্শনার্থী/ছবি: সুমন শেখ

এছাড়াও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুল, কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঠাগার, বৃদ্ধাশ্রম লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বই দেবে বিকাশ।

বিকাশের কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ২০১৫ সাল থেকে বাংলা একাডেমি বইমেলার সার্বিক আয়োজনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আছে বিকাশ। এবার বইমেলার পৃষ্ঠপোষক বিকাশ। এরই মধ্যে ৯০ ভাগ প্রকাশনীতে বিকাশে পেমেন্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্যাশব্যাক, অ্যাকাউন্ট খোলা ছাড়াও এবার বিকাশ বই ডোনেট কর্মসূচির উদ্যোগ নিয়েছে।

মেলায় আসা ক্রেতা-দর্শনার্থীদের সেবা দিতে প্রস্তুত বিকাশের প্রতিনিধিরা/ছবি: সুমন শেখ 

তিনি বলেন, মানুষের মননের উৎকর্ষ সাধনে বইয়ের কোন বিকল্প নেই। শিশুদের ক্ষেত্রে বই পড়ার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ গড়ার বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ। বইমেলায় বই অনুদানের বিষয়টি এবারেই প্রথম। এই উদ্যোগের মাধ্যমে মেলায় আসা পাঠকদের কাছ থেকে যত বেশি বই সংগ্রহ করব, সারাদেশের বিভিন্ন স্কুলের সুবিধাবঞ্চিত শিশুসহ নানান বয়সের পাঠকদের কাছে এই বই পৌঁছে দেব।

বিকাশের এই উদ্যোগে সামিল অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশনের শিক্ষা উন্নয়ন বিভাগের সহকারী কর্মকর্তা নাভিদ আনজাম হাসান বার্তা২৪.কম বলেন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য আমরা যে স্কুল চালাই, সেখানে সেই অর্থে লাইব্রেরি নেই। তাই ওদের জন্য বই দেয়ার বিকাশের এই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আমরা বিকাশের কাছ থেকে যত বই পাব, বইগুলো আমাদের পরিচালিত স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করব।

এ সম্পর্কিত আরও খবর