এক সুখবরে ১০ হাজার কোটি টাকা ফিরে পেল পুঁজিবাজার

পুঁজিবাজার, অর্থনীতি

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা | 2023-08-30 17:42:49

আস্থা ও তারল্য সংকটে সূচক কমে ২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বরের অবস্থানে চলে গিয়েছিল পুঁজিবাজার। সেখান থেকে ফের আলোর ঝলকানি দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ উদ্যোগের ফলে টানা ৮ মাস দরপতনের পর দেশের পুঁজিবাজার উত্থানে ফিরছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

রবি ও সোমবার (২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর) টানা দুই দিনে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক বেড়ছে ১৫৪ পয়েন্ট। সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম ও লেনদেন। আর তাতে বিনিয়োগকারীদের হারানো মূলধন অর্থাৎ পুঁজি বেড়েছে ১০ হাজার ২৮৮ কোটি ৮৮ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।

তবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা ও আতঙ্ক কাটেনি। তারা বলছেন, হঠাৎ করে দুই-একদিন দাম বাড়লেই ইতিবাচক ধারায় ফিরছে- এটা বলা যাবে না। বরং পুঁজিবাজারে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে হবে। সব ত্রুটি-বিচ্যুতি ঠিক করতে হবে।

কারসাজি, দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, তাহলে বিনিয়োগকারীরা আশ্বস্ত হবেন বলে মনে করেন রূপালী ইনভেস্টমেন্ট সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী এম সাইফুল আকন্দ।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ঘোষণা দেন পুঁজিবাবারের স্বার্থে সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। তার নির্দেশনার প্রেক্ষিতে রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) বাজারে তারল্য সংকট কাটাতে রেপোর (পুনঃক্রয় চুক্তি) মাধ্যমে অর্থের সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন এ সংক্রান্ত এক‌টি সার্কুলার জা‌রি করেছে। এতে বলা হয়, এখন থেকে তারল্য সুবিধা গ্রহণে ইচ্ছুক ব্যাংকের একক বা একীভূত উভয় ভিত্তিতে পুঁজিবাজার বিনিয়োগ ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (২০১৮ পর্যন্ত সংশোধিত) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সংক্রান্ত সার্কুলারে বর্ণিত সর্বোচ্চ সীমার (একক ভিত্তিতে বিবেচ্য মূলধন উপাদানের ২৫ শতাংশ এবং একীভূত ভিত্তিতে বিবেচ্য মূলধন উপাদানের ৫০ শতাংশ) কম হতে হবে। তারল্য সুবিধা গ্রহণের পরও বর্ণিত বিনিয়োগ সীমা পরিপালন করতে হবে।

এই সুবিধার অধীনে প্রাপ্ত তারল্য শুধু ব্যাংকের নিজস্ব পোর্টফোলিওতে সরাসরি বিনিয়োগ অথবা সাবসিডিয়ারি কোম্পানির নিজস্ব পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট সাবসিডিয়ারি কোম্পানিকে ঋণ ‌দিতে পারবে।

প্রাপ্ত তারল্য ব্যাংকের নিজস্ব পোর্টফোলিওতে বা সাবসিডিয়ারি কোম্পানির নিজস্ব পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগের জন্য নতুনভাবে পৃথক বিও একাউন্ট খুলতে হবে। ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্য থেকে ট্রেজারি বন্ড বা বিল রেপোর মাধ্যমে এই তারল্য সুবিধা নিতে হবে।

ট্রেজারি বন্ড বা বিলের রেপো মূল্যের ৫ শতাংশ মার্জিন হিসেবে রেখে তারল্য সুবিধা প্রদেয় হবে। নগদে রেপোর অর্থ পরিশোধে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজের বাজারমূল্য আদায়যোগ্য অর্থ অপেক্ষা কম হলে তা ইতোপূর্বে গৃহীত মার্জিন থেকে সমন্বয় করা হবে এবং সমন্বয়ের জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হলে ব্যাংক তা দিতে বাধ্য থাকবে।

প্রাথমিকভাবে রেপোর মেয়াদ ২৮ দিন হলেও তহবিল ব্যবহারের সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে তা সর্বোচ্চ ৬ মাস পর্যন্ত ঘূর্ণায়মান রাখা যাবে। এরূপ রেপোর জন্য কোনো অকশনের প্রয়োজন হবে না এবং সুদের হার হবে ৬ শতাংশ।

এর ফলে গত দুই দিনে ডিএসইর প্রধান সূচক ৪ হাজার ৮৩৬ পয়েন্ট থেকে ১৫৪ পয়েন্ট বেড়ে সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ৫ হাজার পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন ৩শ’ কোটি টাকার গড় থেকে বেড়ে ৫শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গ্রামীণফোনসহ বড় মূলধনী কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে। আর তাতে বাজার মূলধন ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৯১৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। একই অবস্থা দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)।

সার্বিক বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন,পুঁজিবাজারের এখন প্রধান সমস্যা তারল্য সংকট। বাংলাদেশ ব্যাংক তারল্য সংকট নিরসনে যে উদ্যোগ নিয়েছে তাকে স্বাগত জানাই। তবে পুঁজিবাজারের স্বার্থে এমন পদক্ষেপ বাংলাদেশ ব্যাংককে সব সময় ধরে রাখতে হবে।

এখন ভালো শেয়ার কেনার উপযুক্ত সময় মন্তব্য করে সাধারণ বিমা ও জীবন বিমা কর্পোরেশন, সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংককে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আহ্বান জানান রকিবুর রহমান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর