পুঁজিবাজারে ফের মহাধস, বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ

পুঁজিবাজার, অর্থনীতি

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-26 01:57:27

‘এখন থেকে পুঁজিবাজার ভালো হবে’— গত সোমবার অর্থমন্ত্রীর আশ্বাসের পর থেকে আবারও শুরু হয়েছে টানা দরপতন। ‘মার্কেট আরও পড়বে, এখন বিনিয়োগ করলেই ক্ষতি’—এমন আতঙ্কে বিনিয়োগকারী শূন্য হয়ে পড়েছে ব্রোকারেজ হাউজ। ফলে ব্রোকারেজ হাউজ, স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে এখন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শুধু পুঁজি হারানোর আর্তনাদ!

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) আগারগাঁওয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে টানা পাঁচ ঘণ্টা বৈঠক করেন। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের সমস্যা চিহ্নিত করেছি, আমরা সুশাসন ও সকল ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করব। পুঁজিবাজারে কেউ কারসাজি কিংবা দুর্নীতি করে পার পাবে না।

বাজার ভালো হবে অর্থমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর দেশের দুই পুঁজিবাজারেই টানা তিনদিন দরপতন হয়েছে। তাতে কমেছে সূচক, লেনদেন ও বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম। ফলে তিন কার্যদিবসেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বিনিয়োগকারীদের পুঁজি অর্থাৎ মূলধন কমেছে ২ হাজার ৪৬৩কোটি ৬০ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। একই অবস্থা চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জও (সিএসই)।

ডিএসইর তথ্য মতে, চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে পুঁজিবাজারে দরপতন শুরু হয়। যা চলছে টানা আট মাস ধরে। এই দরপতন ২০১০ সালের ধসের চেয়ে বড় ধসে পরিণত হয়েছে। আর তাতে ডিএসইর বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কমেছে ৫০ হাজার ৮৪৫কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। একইভাবে সিএসইর বিনিয়োগকারীদেরও পুঁজি কমেছে। সারা দেশে ২৫ লাখ ৬০ হাজার বিনিয়াগকারী পুঁজি হারিয়েছেন।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগকারীরা ব্রোকারেজ হাউজে আসছেন না, শেয়ার ব্যবসাও ছেড়ে দিচ্ছেন। পুঁজিবাজারের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিনিয়োগকারীরা সামাজে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডেও লিপ্ত হচ্ছেন। এর মধ্যে এক শ্রেণির মানুষ মতিঝিলসহ সারাদেশে চুরি, ছিনতাইয়ে নেমেছেন। অন্যদিকে লাভের আশায় ‘জুয়ার আসর’ কিংবা ‘ক্যাসিনোতে’ অর্থ ইনভেস্ট করছেন।

নাম না প্রকাশে শর্তে লঙ্কাবাংলা সিকিউরিজিটের কর্মকর্তা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ২০১০ সালে অনেক শেয়ারের কারসাজি হয়েছিল। এখন হচ্ছে-আইটেম ওয়াইজ কারসাজি। এই চক্রের বিচার হচ্ছে না। ফলে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ কারণে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। এটা দ্রুত বন্ধ না করতে পারলে পুঁজিবাজারই থাকবে না।

ডিএসইর একজন পরিচালক বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, গত আট মাস ধরে বাজারে ৪শ’ কোটি টাকার নিচে লেনদেন হচ্ছে। ফলে ব্যবসা সংকটে ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে চলছে ছাঁটাই, খরচ কমাতে বন্ধ করা হচ্ছে শাখা অফিসও। এই অবস্থা আর কিছুদিন চলতে থাকলে পুঁজিবাজারই থাকবে না।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান উর রশিদ চৌধুরী বলেন, পুঁজিবাজারে চলছে আস্থা ও তারল্য সংকট। আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে-বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের কারণে।

তিনি বলেন, গত ৯ বছরে ৯০ কোম্পানিকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেয় কমিশন। যার বেশির ভাগই ভুয়া, জাল ও অতিরঞ্জিত কোম্পানি। দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে এসব কোম্পানিকে অনুমোদন দিয়ে অর্থপাচার হয়েছে। তাই কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত বাজার ভালো হবে না। বাজার স্বার্থে দ্রুত পদত্যাগ করা দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এখন পুঁজিবাজারে দেশি-বিদেশি ভালো কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করতে হবে। সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এ কারণে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বর্তমানে যেমন বিটিআরসি ও গ্রামীণফোনের দ্বন্দ্ব রয়েছে। এগুলো দ্রুত সমাধান করতে হবে।

ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, খারাপ কোম্পানির আইপিওর অনুমোদন, ব্যাংকিং খাতের নাজুক অবস্থা এবং নন-ব্যাংকিং খাতের দুরাবস্থার প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে।

অধ্যাপক আবু আহমদে বলেন, সরকারি রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়হীতার কারণে গ্রামীণফোন এবং বিটিআরসি দ্বন্দ্বের সঙ্গে যোগ হয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে নিয়ে যাবে এমন সিদ্ধান্ত। আর তাতে পুঁজিবাজারে ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর