সততার অভাবে শতভাগ বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না

, অর্থনীতি

জুনায়েদ শিশির, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-28 20:04:33

ঢাকা: বৃহস্পতিবার (৭ জুন) জাতীয় সংসদে বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। নির্বাচনের বছর হওয়ায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভর করবে বাজেট বাস্তবায়ন। তবে বাজেট বাস্তবায়নে আমাদের সততার অভাব রয়েছে বলেও জানিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। সোমবার বার্তা২৪.কম’র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আসন্ন বাজেটের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনাকালে তিনি এ কথা বলেন।

এম এ মান্নান বলেন, ‘যেহেতু নির্বাচনি বছর তাই ভোটের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরাদেশের রাস্তা-ঘাট সংস্কার, দরিদ্র ও অসহায় মানুষের কল্যাণে বাজেট বরাদ্দের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আমি মনে করি, বাজেট ঘাটতি কোনো সমস্যা না, তবে তা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে না পারাটা সমস্যার। কারণ, জাতিগতভাবে আমরা সৎ না। এটা শুধু সরকারের সমস্যা না,  বরং এটা আমাদের জাতিগত সমস্যা। তাই শতভাগ বাজেট বাস্তবায়নে সরকার ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের মানসিকতা পরিবর্তন করা জরুরি। যদিও প্রতিবছর বাজেটের ৯৪-৯৫ ভাগ বাস্তবায়ন করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে যেকোনো সরকারের বাড়তি চিন্তা থাকে, আমাদেরও রয়েছে। প্রতি বাজেটে আমরা সাধারণ মানুষের কল্যাণের বিষয়টি বিবেচনা করি। বিশেষ করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গরীব, নিম্ন আয়ের ও অসহায় মানুষের স্বাস্থ্য,আয় ও কর্মসংস্থান সমস্যার সমাধান করা, শ্রমিকদের জন্য বাড়তি কল্যাণ করা এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য বাড়তি সুবিধা সৃষ্টি করা হয়।’

অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের বছর আমরা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করি। সবকিছু হিসাব করে আমরা সার্বিককল্যাণের পথে অগ্রসর হই। এক্ষেত্রে কোনো কোনো সময় বরাদ্দ অর্থের কম বা বেশি খরচ হয়ে যায়। যা ইচ্ছাকৃত নয়। তবে আমরা যারা রজনীতি করি, তারা তো ভোটের রাজনীতি করি। নির্বাচন নিকটে চলে এসেছে, এবার নৌকায় উঠবো। তাই শেষ মুহুর্তে মানুষকে কী দেবো, সে চিন্তা করতে হচ্ছে।’

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘দোকানদার ক্রেতাকে বিদায় দেওয়ার সময় সালাম দিয়ে বলেন, ভাই আবার আসবেন। আমরাও সেভাবে ভোটারদের কাছে ভোট চাইবো, এটা অন্যায় কিছু না বরং এটাই নিয়ম। পৃথিবীর সব দেশেই এটা হয়। এ ক্ষেত্রে আমরা দরিদ্র বা সাধারণ মানুষের কল্যাণমূলক ভাতা বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

বাজেট ঘাটতির বিষয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কৌশলগত কারণে বাজেটে ঘাটতি রাখা হয়। ১৯৭২ সালের বাজেটের তুলনায় এখন আমাদের বাজেট এক হাজারগুণ বেড়েছে। এক্ষেত্রে আমি বলবো, উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় আমরা প্রথমপর্যায়ে আছি। ইউরোপ-জাপানের সঙ্গে আমাদের তুলনা করলে হবে না। কারণ তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এর বেশি হলে তাদের হার্টে সমস্যা হবে। সে হিসেবে আমাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা অনেক। তাই আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বাড়তি বিনিয়োগের দরকার। সেটা জেনেই আমরা ঘাটতি বাজেট করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘চাপে থাকতে পৃথিবীর সব দেশই কমবেশি ঘাটতি বাজেট করে। আমরা জানি, ঘাটতির পুরোটা হয়তো মেটানো যাবে না। সেজন্য ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শাতংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। অনেক দেশে ঘাটতির পরিমাণ ১০ বা ১২ শতাংশ। আমাদের ৫ শতাংশ কখনও অতিক্রম করেনি, এবারও করবো না।’

অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গত ৪৫ বছর ধরে আমরা বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিচ্ছি। অনেকে মনে করেন এসব সাহায্যের টাকা। কিন্তু আমি জানি এসব ঋণের টাকা, যা নিয়মিত পরিশোধ করা হচ্ছে। বাজেটের একটি বড় অংশ ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়। গত ৪৫ বছরে বাংলাদেশ একটা সুদের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়নি। ফলে বুঝা যাচ্ছে আমাদের অর্থনীতি ভালো্।’

নির্বাচনি বছরে রাজস্ব আহরণে নতুন কৌশলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অর্থমন্ত্রীর আলোচনা থেকে জেনেছি, এবারের বাজেটে করপোরেট ট্যাক্স কমানো হবে। যা হবে খুবই বড় উদ্যোগ। তাছাড়া প্রতি বছরের মতোই এ বছরও বাজেট কাঠামো অভিন্ন থাকবে। তবে বাজেটের ক্ষেত্র একটু প্রসারিত হতে পারে। কারণ মানুষের আয়-ব্যয় ও চাহিদা বাড়ছে। তাছাড়া এবারের বাজেটে বয়স্কদের আয় করমুক্ত সীমা কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে।’

সারাদেশের রাস্তাঘাট সংস্কারের বিষয়ে এম এ মান্নান বলেন, ‘মন্ত্রীসভার এক আলোচনায় শুনেছি, সারাদেশে অনেক রাস্তাঘাট তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রাকৃতিক কারণে অনেকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা নতুন করে সংস্কার করা জরুরি। তবে অনেক সময় আমরা কমদামে বেশি রাস্তা তৈরি করতে চাই, এ জন্য মান ঠিক রাখা সম্ভব হয় না। এছাড়া পরিবহন সংখ্যাও বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে ওভারলোডের কারণে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ করবে।

অনেক রাস্তায় কাজ শুরু হলেও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা না থাকায় অনেক রাস্তায় উন্নয়ন কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে আগামী নভেম্বরের মধ্যে যাতে এসব রাস্তা সংস্কার শেষ করা যায় সেজন্য এবারের বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর