খায়রুলের দুর্নীতি ও অর্থ পাচারে তদন্তে নেমেছে দুদক

পুঁজিবাজার, অর্থনীতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-09-01 04:09:54

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারসহ দুর্নীতির তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো- গত আট বছরে প্রায় ৮৮ কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে অর্ধশত নিম্নমানের কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানির বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে মিথ্যা তথ্য দিয়ে উচ্চ আয় দেখানো আইপিও অনুমোদন দেন খায়রুল হোসেন। তার বিনিময়ে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার করেন।

আরও বলা হয়, ওইসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের সূচক পতন শুরু করে। এছাড়া ওইসব কোম্পানির পূর্ববর্তী আয়ের রিপোর্টগুলো বানোয়াট বলেও অভিযোগ ওঠে।

দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ চৌধুরীকে অভিযোগ তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতেই তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

অভিযোগে বলা হয়, কমিশনের চেয়ারম্যান ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মিলে প্রশ্নবিদ্ধ কোম্পানিগুলোর আইপিও অনুমোদন দেয়। এর মধ্যে উচ্চ প্রিমিয়ামে অনেক কোম্পানিকে অনুমোদন দিয়েছে। তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) কমতে শুরু করে।

এ বিষয়ে দুদকের পরিচালক (মানিলন্ডারিং) গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, কমিশনের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে দুর্বল কোম্পানির শেয়ার অনুমোদন দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ ও টাকা পাচারের অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি এসব কোম্পানির অনুমোদনের ফলে গত ৩ মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রদান সূচক ডিএসইএক্স আরও ৬০০ পয়েন্ট কমেছে। আর তাতে বিনিয়োগকারীদের বাজার মূলধন অর্থাৎ পুঁজি কমেছে ৩০ হাজার কোটি টাকা।

এদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে মূল সূচকের অব্যাহত পতনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ করছেন। বিক্ষোভ চলাকালীন তারা জানান, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন। তাই তার পদত্যাগ চান তারা।

বিনিয়োগকারীরা জানান, পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার পরিবর্তে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোম্পানিগুলোকে অনৈতিকভাবে প্লেসমেন্ট বাণিজ্যে সহযোগিতা করে। বাজারে শেয়ার কারসাজিকারীদের উৎসাহিত করে। তাতে পুঁজিবাজারে আস্থা ও তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান উর রশিদ চৌধুরী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘বিএসইসির চেয়ারম্যান বিনিয়োগকারীদের জন্য নয়, ইস্যুয়ার কোম্পানি এবং স্টক ব্রোকারদের পক্ষে কাজ করছেন। আমরা তার পদত্যাগ দাবি করেছি।’

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ডিসেম্বরে পুঁজিবাজার ধসের পর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বিএসইসি পুনর্গঠন করে। এরই অংশ হিসেবে ২০১১ সালের মে মাসে তিন বছর মেয়াদে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন।

পরের বছরই খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশনের মূল আইন সংশোধনের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠায়। তাতে কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের মেয়াদ সর্বোচ্চ চার বছর করা হয়।

তবে একই ব্যক্তির দুই মেয়াদের বেশি নিয়োগ না পাওয়ার বিষয়টি বহাল রাখা হয়। ২০১২ সালে সংসদে এ আইন সংশোধন হয়। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল তৃতীয়বারের মতো ২ বছরের জন্য বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান ড. খায়রুল হোসেন। এর আগে গত ১৩ মে দ্বিতীয়বারের মেয়াদ শেষ হয়।

 

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর