পুঁজিবাজার ছেড়েছেন ৩ লাখ বিনিয়োগকারী

পুঁজিবাজার, অর্থনীতি

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-31 21:58:18

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশের দুই পুঁজিবাজার ছেড়েছেন প্রায় ৩ লাখ বিনিয়োগকারী। বিনিয়োগকারীদের শেয়ার সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ (সিডিবিএল) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

আস্থা ও তারল্য সংকটে খাদের কিনারায় থাকা পুঁজিবাজারের ক্ষতি থেকে রেহাই পেতে ২ লাখ ৮১ হাজার ১৯৭টি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টধারীরা বাজার ছেড়েছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিনিয়োগকারীরা।

তারা বলছেন, এর আগের কখনো এতো বিনিয়োগকারীর বিও হিসাব বন্ধ হয়নি। বাজার দ্রুত ভালো না হলে বিনিয়োগকারী আরও অনেক কমবে। বিনিয়োগকারী কমলে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর ব্যবসা কমবে। ফলে পুঁজিবাজারে লেনদেনও কম হবে, তাতে ক্ষতিগস্ত আল্টিমেটলি হবে পুঁজিবাজার।

ব্রোকারেজ হাউস কর্তৃপক্ষ বলছে, চলমান দরপতনের কারণে নতুন করে বিও অ্যাকাউন্টগুলো নবায়ন না করায় বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে কেউ বিও চার্জ দিলেই যেকোনো সময় নবায়ন করতে পারবে। নিয়ম অনুসারে একজন বিনিয়োগকারী একটি বিও হিসাব থাকতে পারবে।

সিডিবিএলের তথ্য মতে, চলতি বছরে ৩০ জুন বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা ছিলো ২৮ লাখ ৯ হাজার ৮৫০টি।  সেখান থেকে ২ লাখ ৮১ হাজার ১৯৭টি কমে ০৩ আগস্ট শনিবার পর‌্যন্ত ২৫ লাখ ২৮ হাজার ৬৫৩টিতে দাঁড়িয়েছে।

চলতি বছরের ৩০ জুন পুরুষদের বিও হিসাবের সংখ্যা ছিলো ২০ লাখ ৭৬ হাজার ৬৯৬টি। সেখান থেকে ২ লাখ ৩১হাজার ৯৮৪টি কমে শনিবার দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৪৪ হাজার ৭১২টিতে।

একই সময়ে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ৪০ হাজার ৬০৮টি। সেখান থেকে ৬৯ হাজার ৫০৬টি কমে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭১ হাজার ১০২টিতে।

সার্কিব বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, বিভিন্ন ইস্যুতে পুঁজিবাজারে দরপতন অব্যাহত থাকায় বিনিয়োগকারীরা বিও বন্ধ করে দিয়েছে। বাজার ভালো হলে আবারও ফিরবে।

তিনি বলেন, এই বিনিযোগকারীদের মধ্যে সেকেন্ডারি মার্কেটে খুব কম সংখ্যক বিনিয়োগ করেন। বেশির বিনিয়োগাকরীদের বেশির ভাগ আইপিওতে আবেদন করেন। কিন্তু আইপিওতে এখন আবেদন করেও শেয়ার না পাওয়ায় বিও বন্ধ করে দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, পুঁজিবাজার শেষ হয়ে গেছে। এখানে বিনিয়োগ করলেই লস। সুতরাং জেনে শুনে পুঁজি হারাতে চাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। তাই অনেকে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। আবার লোকসান সইতে না পেরে বিও হিসাব বন্ধ করে দিচ্ছে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেন, ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট, ব্যাংকের ঋণ নিয়ে ফেরত দেওয়া হচ্ছে  না, লুটতরাজ চলছে। পিপলস লিজিং এর অবসায়ন হচ্ছ।

এছাড়াও বিটিআরসি ও গ্রামীণফোনের দ্বন্দ্বের পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তাতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আস্থা সংকট তৈরি হয়েছে।

কথিত বিনিয়োগকারীরা মিছিল মিটিং করে বিএসইসিকে দোষারোপ করছে উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ে যারা পেছন থেকে খেলছেন, বিএসইসি এ বিষয়ে সময়মত যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। বাজারের সাম্প্রতিক পতনের বিষয়ে বিএসইসির তদন্ত কমিটি তদন্ত করছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক আলামত পাওয়া গেছে। চূড়ান্তভাবে দোষ প্রমাণিত হলে বিএসইসি কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর