অস্তিত্বের সংকটে ব্রোকারেজ হাউজ, বন্ধ হচ্ছে শাখা অফিস

পুঁজিবাজার, অর্থনীতি

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-22 12:45:31

পুঁজিবাজারে আস্থা ও তারল্যের অভাবে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে ব্রোকারেজ হাউজগুলো। গত ছয় মাস ধরে পুঁজিবাজারে দরপতন চলছে। এই দরপতনে বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ব্রোকারেজ হাউজগুলো। চলমান দরপতনে ছোট হাউজের চেয়ে বড় ব্রোকারেজ হাউজগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, এই ক্ষতি সইতে না পেরে চলতি বছরে অন্তত ৫০টি ব্রোকারেজ হাউজের শাখা অফিস বন্ধ হয়েছে। আগামী এক মাসে আরও অন্তত ৮-১০টি শাখা অফিস বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব ব্রোকারেজ হাউজের কর্মচারীদের ছাঁটাই করা হয়েছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে ডিএসই’র পুরনো এক সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, লেনদেনের দিক থেকে ডিএসইতে আমার হাউজ ১০০টির মধ্যে রয়েছে। সোয়ান টেক্স অফিস ছাড়াও আরও দুটি অফিস রয়েছে আমার। আমি অক্টোবর থেকে একটি অফিস ছেড়ে দিচ্ছি।

তিনি বলেন, এতদিন খিচ খেয়ে (জেদ করে) পড়েছিলাম একটি আশায়, পুঁজিবাজার ভালো হবে। কিন্তু এখন দেখছি ঠিক উল্টো।

দিনে দেড় কোটি টাকার লেনদেন হওয়া দরকার ব্যখ্যা দিয়ে ডিএসই’র ওই সদস্য বলেন, প্রতিদিন ২ লাখ ৩০ হাজার টাকার আয় দরকার ব্রোকারেজ হাউজে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে। কিন্তু দিনে আয় হচ্ছে মাত্র ৬০ হাজার টাকা।

বাজার ভালো হবে প্রত্যাশায় গত ৬ মাস ধরে আমি কোম্পানি থেকে কোন বেতন নিচ্ছি না। বরং নিজের এফডিআর ভেঙে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও অফিসের খরচ বহন করছি। লোকসান দিয়ে আর চালাতে পারছি না। তাই বেশকিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ছাঁটাই করে দিয়েছি। অফিস বন্ধের নোটিশও দিয়েছি।

প্রায় একই কথা বলেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের একজন প্রভাবশালী নেতা। বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে তিনি বলেন, ২০১০ সালের ধসের পরও আমরা লাভে ছিলাম। কিন্তু চলমান ধসের ফলে এখন ফকির হয়ে গেছি। লাভ তো দূরের কথা হাউজ চালানোর পয়সা পাচ্ছি না।

তিনি বলেন, তাই ঈদের পর ধানমন্ডি ও উত্তরা অফিস বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মতিঝিলের অফিসটি রাখব, ক্লায়েন্ট সেবা কমিয়ে দেব। আস্তে আস্তে অন্যদিকে চলে যাব। এই মার্কেটে থাকা যাবে না।

লেনদেনের শীর্ষে থাকা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির এমডি মো. ছায়েদুর রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় সার্বিকভাবে লেনদেন কম হচ্ছে। ফলে ছোট-বড় সব ব্রোকারেজ হাউজগুলো সমপরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তিনি বলেন, ধরুন একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিদিন টার্নওভার ৩০ কোটি টাকা দরকার সেখানে ১৫-২০ কোটি টাকা হচ্ছে। অর্থাৎ অর্ধেক কম হচ্ছে। সে যেমনভাবে চলছে, ঠিক সেইভাবে যে প্রতিষ্ঠানের দিনে কোটি টাকা লেনদেন দরকার তার হচ্ছে ৫০ -৬০ লাখ টাকা, সেই প্রতিষ্ঠানটিও একইভাবে চলছে। ফলে তারল্য সংকটে ব্রোকারেজ হাউজগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে আমি আশা করি দ্রুত বাজারে সমস্যার সমাধান হবে, পুঁজিবাজার ভালো হবে।

বর্তমানে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইতে ২৫০টি ব্রোকারেজ হাউজ রয়েছে। তাতে প্রায় ২৮ লাখ বিনিয়োগকারী শেয়ার কেনা-বেচা করেন। আর সেই শেয়ার কেনা-বেচা থেকে প্রাপ্ত কমিশনের দিয়ে ব্রোকারেজ হাউজগুলো চলে।

ডিএসইর তথ্যমতে, ডিএসই-তে প্রতিদিন অন্তত ১ হাজার কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হওয়া দরকার। তাহলে ডিএসই খরচ মিটিয়ে লাভের মুখ দেখতে পারবে। কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকেই ৩-৪শ’ কোটি টাকার গড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে ডিএসই’র লেনদেন। ফলে লাভ তো দূরের কথা খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর