১৬ দিনে বিনিয়োগকারীদের ৫৩ হাজার কোটি টাকার পুঁজি হাওয়া

পুঁজিবাজার, অর্থনীতি

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-30 20:49:07

চলতি বছরের ৩০ জুন গ্রামীণফোন লিমেটেডের প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৩৬৫ টাকা। গত ২২ জুলাই কোম্পানির সেই শেয়ার কেনা-বেচা হয়েছে ৩২২ টাকা ৫০ পয়সায়। অর্থাৎ ১৬ কার্যদিবসে গ্রামীণফোনের প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ৪২ দশমিক ৫০ টাকা।

একইভাবে ৩০ জুন স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ২৬৪ টাকা। গত ২২ জুলাই (সোমবার) কোম্পানির শেয়ার কেনা-বেচা হয়েছে ২৪৭ টাকা ৬০ পয়সা। অর্থাৎ এই কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে ১৬ দশমিক ৪০ টাকা।

অথচ এই দু’টি কোম্পানির মধ্যে গ্রামীণফোন (জিপি) হচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানি। কোম্পানির ‘এ’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে। কোম্পানির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য ভালো। প্রতিবছর ভালো লভ্যাংশ দিচ্ছে। তারপরও কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে আশঙ্কাজনক হারে।

একইভাবে দেশি কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতি বছর ভালো লভ্যাংশ দিচ্ছে স্কয়ার ফার্মা। কোম্পানির রিজার্ভ রয়েছে। দেশি কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবেচেয়ে ভালো কোম্পানি হচ্ছে স্কয়ার ফার্মার শেয়ার। তারপরও কোনো কারণ ছাড়াই সেই কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে ১৭ টাকা। যা ২০১০ সালের ধসেও ঘটেনি।

ফলে ভালো কোম্পানির পাশাপাশি খারাপ কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কমায় চলতি অর্থবছরে প্রথম ১৬ কার্যদিবসের দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কমেছে ২৬ হাজার ৮৫৯ কোটি ৪৯ লাখ ৭১ হাজার টাকা। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ও বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কমেছে ২৬ হাজার ১৪৫ কোটি ৫৪ লাখ ৩ হাজার টাকা।

সব মিলে নতুন অর্থবছরে দেশের দুই পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগারীদের পুঁজি হাওয়া হয়েছে ৫৩ হাজার কোটি টাকা। এই সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ৪৫৫ পয়েন্ট। আর সিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ১ হাজার ৪১৮ পয়েন্ট। পাশাপাশি কমেছে লেনদেন ও বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।

চলমান এই দরপতনে বিনিয়োগকারীরা ব্রোকারেজ হাউজ ছেড়ে মতিঝিলের রাস্তা নেমে আসতে শুরু করেছেন। তারা ১৬ কার্যদিবসের মধ্যে দরপতনের প্রতিবাদে ১১ কার্যদিবস মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। পুঁজিবাজারকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীকে গত বৃহস্পতিবার ১৫ দফার স্মারকলিপি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, আগামী ঈদের পর প্রধানমন্ত্রী বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে দেখা করবেন।

নতুন এই দরপতনে ২৮ লাখ বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি ব্রোকারেজ হাউজগুলো অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। নাম না প্রকাশের শর্তে ডিএসইর একজন সদস্য বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ব্যবসা সঙ্কটে ব্রোকারেজ হাউজ টিকিয়ে রাখাই সম্ভব হচ্ছে না।

পুঁজিবাজারে চরম সঙ্কটে নতুন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কিংবা অর্থ মন্ত্রণালয়। ফলে দরপতন আরও হবে এমন শঙ্কায় চরমভাবে হতাশ বিনিয়োগকারীরা বলে মনে করেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর