কালো টাকা বিনিয়োগের সুবিধা চায় সিএসই

বাজেট, অর্থনীতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-25 22:38:23

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ফ্ল্যাট বা জমি কেনা এবং ইকোনমিক জোনের মতো পুঁজিবাজারেও বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগসহ আট দফা দাবি তুলে ধরেছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)।

রোরবার (১৬ জুন) সিএসইর ঢাকার কার্যালয়ে আয়োজিত প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি তুলে ধরেন সিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. গোলাম ফারুক। সিএসইর কোম্পানি সচিব রাজিব শাহা, উপ-মহাব্যবস্থাপক হাসনাইন বারীসহ অনেকে এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

গোলাম ফারুক বলেন, পাচার রোধ ও বিনিয়োগের স্বার্থে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনা প্রশ্নে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দেওয়া সাপেক্ষে পুঁজিবাজারেও বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ করছি। প্রস্তাবিত বাজেট পুঁজিবাজার বান্ধব। এতে যেসব প্র্রণোদনা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন হলে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। প্রস্তাবিত বাজেটে ভালো কোম্পানির মাধ্যমে রুগ্ন কোম্পানিগুলোকে একত্রীকরণ-অধিভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এটি পুঁজিবাজারের জন্য একটি ভালো প্রস্তাব।

ঘোষিত বাজেটে নগদ লভ্যাংশের পরিবর্তে বোনাস লভ্যাংশের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে রিটেইন আর্নিংস বা রিজার্ভ যদি পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি হয়, তবে বাড়তি রিজার্ভের ওপর ১৫ শতাংশ হারে করের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা কোম্পানিগুলোকে নগদ লভ্যাংশ দিতে উৎসাহিত করবে। এছাড়া বিনিয়োগ উৎসাহিত করার জন্য লভ্যাংশ আয়ের দ্বৈত কর তুলে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও মনে করেন তিনি।

গোলাম ফারুক বলেন, পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন এবং গুণগত সম্প্রসারণের জন্য সিএসই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে সরকারের কাছে সাতটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছিল। এর মধ্যে করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা প্রস্তাবটি আংশিকভাবে গ্রহণ করা হয়েছে। সিএসইর বাকি প্রস্তাবনাগুলো পুনর্বিবেচনার জন্য সিএসইর পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

প্রস্তাবনাগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বিদ্যমান কর হার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ হলে ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে, যা পুঁজিবাজারকে সমৃদ্ধ করবে এবং স্বচ্ছ করপোরেট রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ও বাড়বে। নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আয় তিন বছর করমুক্ত রাখা হলে অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হবে। তাতে পুঁজিবাজারে গুণগত মানসম্পন্ন শেয়ারের যোগান বাড়বে। যা বাজারে লেনদেন বৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা আনতে ভূমিকা পালন করবে। প্রস্তাবিত বাজেটে এসএমই কোম্পানিগুলোর করমুক্ত আয়সীমার জন্য বার্ষিক লেনদেন ৩৬ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৫০ লাখ টাকা করা হয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জের নতুন প্রবর্তিত এসএমই বোর্ড বাস্তবায়ন, একটি মানসম্মত করপোরেট কাঠামো এবং রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর জন্য এসএমই কোম্পানিগুলোকে তিন বছর শূন্য হার কর নির্ধারণ করা প্রয়োজন। ঘোষিত প্রস্তাবিত বাজেটে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ আয়কে করমুক্ত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আমাদের প্রস্তাবিত সীমায় (এক লাখ টাকা) উন্নীত করার অনুরোধ করছি। দেশের অর্থনীতির আকার এবং ব্যাংকিং খাতের অস্থিরতার প্রেক্ষিতে একটি শক্তিশালী বন্ড মার্কেট তৈরির লক্ষ্যে সব ধরনের বন্ড থেকে প্রাপ্ত আয়কে করমুক্ত রাখা এবং জিরো কুপন বন্ড থেকে প্রাপ্ত আয়ের করমুক্ত সুবিধা ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব করদাতাকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব পুনরায় বিবেচনার আহ্বান করছি। ২০১৩ সালের অর্থ আইন অনুযায়ী ৫৩ বিবিবি ধারা থেকে বন্ড ডিলিট করা হয়। কিন্তু অন্যান্য আইনে সিকিউরিটিজের সংজ্ঞায় বন্ড অন্তর্ভুক্ত থাকায় বন্ড লেনদেনের ওপর ০.০৫ শতাংশ হারে উৎসে কর কাটা হয়। একটি শক্তিশালী এবং পৃথক বন্ড মার্কেট গঠনের লক্ষ্যে স্পষ্টভাবে ওই ধারা থেকে বন্ড লেনদেনেকে অব্যাহতি রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছি। এডিবি ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে সম্পাদিত ঋণ চুক্তির শর্ত হিসেবে প্রণীত ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইন দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছি।

 



বক্তব্য রাখছেন সিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. গোলাম ফারুক, ছবি: বার্তা২৪.কম

 

ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে সরকারও আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে। বর্তমানে সিএসই ক্রমহ্রাসমান হারে আয়কর দিচ্ছে। যা এই অর্থবছরে শেষ হবে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, এক্সচেঞ্জ ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইন ২০১৩ এর বিধান অনুযায়ী মোট ইস্যুকৃত শেয়ারের শতকরা ২৫ ভাগ কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে বিক্রি করতে হবে। সিএসই এখনো আইন অনুযায়ী কৌশলগত বিনিয়োগকারী নির্ধারণ করতে পারেনি। কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে শেয়ার বিক্রির জন্য সিএসইকে পাঁচ বছরে জন্য কর অব্যাহতির সুবিধা দেওয়া হলে ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী কৌশলগত বিনিয়োগকারী পেতে সহায়ক হবে এবং একই সঙ্গে তুলনামূলক ছোট এক্সচেঞ্জ হিসেবে দেশের শেয়ারবাজারে যথাযথ ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে। স্টক ব্রোকারদের উৎসে কর কাটার হার পুনরায় নির্ধারণের জন্য বার বার অনুরোধ সত্ত্বেও এই হার পূর্ববর্তী ০.০৫ শতাংশ বহাল রাখা হয়েছে।

গোলাম ফারুক বলেন, অধিকাংশ ব্রোকারেজ হাউজ বর্তমানে লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়া সত্ত্বেও এগুলো থেকে ক্রমবর্ধমান হারে কর আদায় আয়করের মৌলিক নীতিরও পরিপন্থী বলে আমরা মনে করি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে স্টক ব্রোকারদের উৎসে কর কাটার হার ২০০৬ সালে চালু করা হারের অর্থাৎ ০.০১৫ শতাংশ। যা পুনরায় নির্ধারণের জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর