বাজেটে ভর্তুকি ৪৬ হাজার কোটি টাকার বেশি

বাজেট, অর্থনীতি

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-21 16:27:11

আসছে বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, কৃষি, খাদ্য, বস্ত্র ও পাট এবং রফতানিসহ বিভিন্ন খাতের জন্য ৪৬ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা ভর্তুকি রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সক্ষমতার পাশাপাশি খাদ্য ও কৃষি খাতে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাজেটে ভর্তুকি রাখা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বার্তা২৪.কমকে বলেন, দেশের বিনিয়োগ বাড়তে প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ। জনগণের ওপর যেন চাপ না পড়ে সেজন্য বাজেটে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ, কৃষকরা যাতে কম খরচে খাদ্য উৎপাদন করতে পারেন সে জন্য কৃষি, পল্ট্রি এবং খাদ্য খাতসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য সরকার প্রতি বছর বাজেটে ভর্তুকি দিয়ে থাকে। এটা ভালো উদ্যোগ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে মোট ৪৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি রাখা হয়েছে। এর আগের বছর ভর্তুকি ছিল ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

৪৬ হাজার ৮৪২ কোটি টাকার মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৯ হাজার ৬০০ এবং জ্বালানি খাতে অর্থাৎ এলএনজি আমদানিতে রাখা হয়েছে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সবমিলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি রাখা হয়েছে ১৮ হাজার ১০০ কোটি টাকা। তবে জ্বালানি তেল আমদানিতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে (বিপিসি) কোনো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না।

তবে খাদ্য খাতে থাকছে ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ভর্তুকি। চলতি অর্থবছর ভর্তুকির পরিমাণ ছিলো ৪ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে কৃষিখাতের জন্য ৯ হাজার কোটি টাকা, তৈরি পোশাক রফতানি ৪ হাজার ৫০০ কোটি এবং পাট ও বস্ত্র খাতের জন্য ভর্তুকি রাখা হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকা।

ব্যাংক খাতে ভর্তুকি রাখা হচ্ছে দেড় হাজার কোটি টাকা। প্রবাসীদের জন্য ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এছাড়াও অনান্য খাতে ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাতে মোট ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে (২০১৯-২০ অর্থবছর) ১১তম বাজেট উপস্থাপন করবেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটাই তার প্রথম বাজেট। ‘সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের’ শীর্ষক জনতুষ্টির এই বাজেটের আকার ধরা হয়েছে— ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। যা জিডিপির ১৮ দশমিক ১ শতাংশ।

চলতি বাজেটের আকার ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। আসন্ন বাজেটে ব্যয়ের পরিমাণ বাড়ছে ৫৮ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। সে হিসেবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার থেকে নতুন বাজেট ১২ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের থেকে ২০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা বেশি।

সবশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের ঘাটতি ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। এছাড়া নতুন বাজেটে সম্ভাব্য মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা (জিডিপির ১৩.১ শতাংশ)। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) খাতে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা (জিডিপি’র ৬ দশমিক ৮ শতাংশ) ধরা হয়েছে। আসন্ন বাজেটে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

এক নজরে ৮ বাজেটে ভর্তুকি
২০১০-১১ অর্থবছরে ভর্তুকি ছিল— ১৭ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা, ২০১১-১২ অর্থবছরে— ২৮ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা, ২০১২-১৩ অর্থবছরে— ৩৩ লাখ ৫৭০ কোটি টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে— ২২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে ভর্তুকি ছিল— ২৪ হাজার ৬৯০ কোটি, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে— ১৩ হাজার ৯২০ কোটি, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে— ১৫ হাজার ৫৫০ কোটি, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে— ২০ হাজার ৯৭১ কোটি এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে— ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভর্তুকি থাকছে— ৪৬ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর