সবচেয়ে চাপে আছে সামষ্টিক অর্থনীতি: সিপিডি

বাজেট, অর্থনীতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-30 08:07:51

যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি চাপের মধ্যে আছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)।

মঙ্গলবার (১১ জুন) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘জাতীয় অর্থনীতির পর্যালোচনা ও আসন্ন বাজেট প্রসঙ্গ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে এ অভিমত তুলে ধরেন সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা, অর্থনীতির একটি শক্তি ছিল। সেই শক্তিতে চিড় ধরেছে। সেই শক্তিতে দুর্বলতা দেখা দিয়েছে। এর অনুষঙ্গ হলো কর আহরণে অপারগতা, এখন বাংলাদেশের উন্নয়নের একটা অমোচনীয় প্রতিবন্ধকতায় পরিণত হয়েছে। এটা যদি অতিক্রম না করা যায়, তাহলে বাংলাদেশের উন্নয়নের যে অভিলাষ, তার জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করার সুযোগ কম হবে এবং অন্য উৎস থেকে যদি আমরা বিনিয়োগ করার চেষ্টা করি, তাহলে সামষ্টিক অর্থনীতির দুর্বলতা আরও প্রকট হবে।

এ সময় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের চিত্রের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ বছর অর্ধেক এডিপি বাস্তবায়ন হচ্ছে মাত্র তিন মাসে। এটা যে কি এডিপি হবে সেটা আর ব্যাখা করার প্রয়োজন পড়ে না।

বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ পরিস্থিতিকে সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়ার আরেকটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন সিপিডির বিশেষ এই ফেলো। তিনি বলেন, আমার রেমিটেন্স ভালো, রফতানিও ভালো। তারপরও বৈদেশিক লেনদেনের ঘাটতি বাড়ছে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ আছে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান। যা কয়েক মাস আগেও ছিল আট মাসের সমান।

সরকার যেটা করছে- ডলার বিক্রি করে টাকাকে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করছে। টাকাকে আর স্থিতিশীল পর্যায়ে রাখার যৌক্তিকতা নেই। টাকার প্রতিযোগিতা সক্ষমতা চালু রাখতে হলে বাংলাদেশের টাকাকে এখন নিচে নামিয়ে আনতে হবে। এটা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করেন দেবপ্রিয়।

তিনি বলেন, সরকার মনে করছে, টাকা সস্তা করলে আমদানি ব্যয় বাড়বে। এতে মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব পড়বে। আমরা মনে করি, মূল্যস্ফীতির এখন যে অবস্থান আছে, এ হার যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে আছে। সেহেতু টাকাকে একটু অবমূল্যায়ন করা হলে তা সহ্য করার শক্তি অর্থনীতির আছে। কিন্তু অন্য সময় মূল্যস্ফিতি যদি বেড়ে যায়, তাহলে এটা করা জটিল হয়ে পড়বে। সুতরাং টাকার মান পুনরায় নির্ধারণ অবশ্যই প্রয়োজনীয়।

ব্যাংক খাতের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে যত কম বলা যায় ততই ভালো। গত তিন-চার বছর ধরে এ বিষয়ে বলতে বলতে এমন একটা অবস্থায় এসেছি যে অবশেষে ব্যাংক খাতের সঙ্কট সবাই উপলব্ধি করছে। কিন্তু প্রতিক্রিয়ার দিক থেকে আমরা তার প্রতিফল দেখি না। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর যে কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে, সবক’টি পদক্ষেপ ব্যাংক খাতের জন্য আরও ক্ষতিকর হয়েছে।

এ সময় কার্ডধারী সব কৃষককে পাঁচ হাজার টাকা করে প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি কৃষকদের প্রতি অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। শিল্প ও কৃষির মধ্যে যে বাণিজ্য স্বত্ব থাকে, এই বাণিজ্য স্বত্ব কৃষকের বিপরীতে গেছে। এটা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে বাংলাদেশে কৃষকদের টিকে থাকা খুবই কঠিন হবে। তাই কৃষকের বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।

তিনি বলেন, কোনো খাতে এমন অব্যবস্থাপনা নেই, যতগুলো কৃষকের সঙ্গে করা হয়েছে। সিডিপির পক্ষ থেকে আমরা বলেছি, কৃষক অবশ্যই একটা আর্থিক ভর্তুকি দাবি করতে পারে বাংলাদেশ সরকারের কাছে। কার্ডধারী সব কৃষককে ব্যাংকের মধ্যমে পাঁচ হাজার টাকা করে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত। এতে নয় হাজার কোটি টাকার মতো লাগবে।

কালো টাকা সাদা করা অর্থাৎ টাকা বৈধ করার সুযোগ দেওয়া উচিত হবে না উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলে আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের ব্যত্যয় ঘটবে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছে-ঘুষ, অনুপার্জিত আয়, কালো টাকা, পেশি শক্তির মাধ্যমে উপার্জন করা অর্থ সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা হবে।

মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিপিডির পক্ষ থেকে ১০টি সুপারিশ তুলো ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে-

এক. রাজস্ব আহরণের সুনির্দিষ্ট কর্ম পরিকল্পনা।

দুই. সরকারি ব্যয় সুশৃঙ্খলভাবে করা, যাতে অবচয় না হয়।

তিন. করছাড়ের হিসাব সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

চার. সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সমন্বয় করা এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে।

পাঁচ. কার্ডধারী সব কৃষককে পাঁচ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়ত দিতে হবে।

ছয়. ব্যাংক কমিশন গঠন করতে হবে। সুদের হার বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর ছেড়ে দিতে হবে।

সাত. পুঁজিবাজার সংস্কারের ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিতে হবে।

আট. সরকারি প্রতিষ্ঠান অডিট করে সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে।

নয়. সামাজিক খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

এবং ১০. টাকার মান অবনমন করতে হবে।

সিপিডির ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সঞ্চলনায় সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিনিয়র রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর