বায়রা লাইফে অবৈধ উদ্যোক্তা-পরিচালক

ব্যাংক বীমা, অর্থনীতি

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-22 14:53:02

দুই শতাংশ শেয়ার ধারণ না করেই নিয়ম বহির্ভূতভাবে উদ্যোক্তা-পরিচালক পদে বহাল থাকার পাশাপাশি লাইফ ফান্ডের বিনিয়োগেও অনিয়ম করছে বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।

বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এছাড়া হাজার হাজার বিমা দাবি পরিশোধ না করা এবং শেয়ারহোল্ডারদের টাকা লোপাট করছে কোম্পানিটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিমা আইন ২০১৩ অনুসারে বিমা কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের নূন্যতম দুই শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। বায়রা লাইফের মোট শেয়ার সংখ্যা ১৮ লাখ ২১ হাজার ৬০০টি। আর সেখানে কোম্পানির ছয়জন পরিচালকের দুই শতাংশ শেয়ার নেই।

এদের মধ্যে পরিচালক মীর মারফত উল্লাহর এক দশমিক ২৪ শতাংশ, ফজলে আকবর চৌধুরীর এক দশমিক ৫৯ শতাংশ, আবুল বারাকাত ভুঁইয়ার এক দশমিক ৫৬ শতাংশ, অলিউল্লাহর দশমিক ৫৯ শতাংশ, সিরাজ মিয়ার দশমিক ১১ শতাংশ এবং নাছির উদ্দিনের এক দশমকি ৫৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

শুধু তাই নয়, ১২ জন উদ্যোক্তা-পরিচালকের জায়গায় অবৈধভাবে ১৮ জন পরিচালক হিসেবে বহাল রয়েছেন। অর্থাৎ ছয়জন শেয়ার গ্রহীতা পরিচালকের জায়গায় উদ্যোক্তা-পরিচালক রয়েছেন। এছাড়াও দু’জন নিরপেক্ষ পরিচালক এবং চারজন উপদেষ্টা পরিচালক রয়েছেন। অথচ বিমা আইন ২০১০ এর ৭৬ ধারার অনুসারে পর্ষদে মোট ২০ জন পরিচালক থাকার বিধান রয়েছে। অর্থাৎ বিমা আইন লঙ্ঘন হয়েছে।

আরও পড়ুন: ৬৬২৭ গ্রাহকের বীমা দাবি পরিশোধ করছে না বায়রা লাইফ

মূলধন ও শেয়ার ধারণ বিধিমালা ২০১৬ এর উপবিধি তিন অনুযায়ী কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধনের ৪০ ধাপ নিবন্ধনের দিন থেকে পরবর্তী তিন বছর পর‌্যন্ত জনসাধারণের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু কোম্পানিটি ২০০০ সালে বিমা ব্যবসার নিবন্ধন দেওয়ার পর থেকে এখনও পরিশোধিত মূলধন বাড়ায়নি। এছাড়া তিন বছরের মধ্যে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজারে আসার বিধান রয়েছে, কিন্তু আসেনি। জরিমানাও দিচ্ছে না।

বিমা আইনের ১৯৩৮ এর ২৭ ধারা এবং বিমা বিধিমালা ১৯৫৮ এর বিধির ১০ এ অনুসারে লাইফ ফান্ডের ৩০ শতাংশ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু কোম্পানিটি বিনিয়োগ করছে ৩০ শতাংশের নিচে। বিমা আইন ও বিধিমালা মানছে না। শুধু তাই নয়, বিমা বিধিমালা ১৯৫৮ এর ১০এ বিধান অনুসারে সরকারি সিকিউরিটিজ ব্যতীত অন্যান্য খাতে ৭০ শতাংশ বিনিয়োগ করার বিধান থাকলেও তা পূরণ করা হয়নি। যা বিমা আইন ও বিধিমালার সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। এতে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা পর্ষদ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বলে প্রতিয়মাণ হয়।

বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের পরিচলনা পর্ষদ, ছবি: সংগৃহীত


সার্বিক বিষয়ে আইডিআরএ’র সদস্য বোরহান উদ্দিন আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, কোম্পানিটির বিরুদ্ধে বিমা দাবি পূরণ না করা, অবৈধভাবে পরিচালক পদে থাকাসহ বেশ কিছু বিষয়ে অনিয়মের বেশকিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে। আমরা কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

মোবাইল ফোনে বায়রা লাইফের ভারপ্রাপ্ত এমডি ওমর ফারুক ভূইয়ার সঙ্গে একাধিকরার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে কোম্পানির চেয়ারম্যান মো. আবুল বাশার বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমাদের কিছু সমস্যা হয়েছে। এগুলোর সমাধানের চেষ্টা চলছে।

আরও পড়ুন: গ্রাহকের ৫০ কোটি টাকা লোপাট করেছে বায়রা লাইফ

উল্লেখ্য, সব কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকার পরও নোয়াখালীর ছয় হাজার ৬২৭ জন গ্রাহকদের বিমা দাবি পরিশোধ করছে না বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। টাকার অংকে যার পরিমাণ ২২ কোটি সাত লাখ টাকা। উল্টো অবৈধ ব্যয় দেখিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের ৪৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকাও লোপাট করেছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। গ্রাহকদের এ টাকায় চেয়ারম্যান ও মুখ্য নির্বাহীসহ কর্মকর্তারা দামি ‘লেক্সাস গাড়ি’ ব্যবহারসহ বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর