কাট-অব প্রাইসের নিচে ৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম

পুঁজিবাজার, অর্থনীতি

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম | 2023-09-01 17:50:17

অতিরঞ্জিত করে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলনকারী ছয়টি কোম্পানির হাজার হাজার বিনিয়োগকারী সর্বস্বান্ত হতে চলেছেন।

কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ও ইস্যু ম্যানেজারের পরিকল্পনা অনুসারে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তৈরি করা প্রসপেক্টাস দিয়ে টাকা তুলে নেওয়া কোম্পানিগুলো হচ্ছে- আমান কটন ফাইবারর্স, একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, এমজে এল বাংলাদেশ লিমিটেড, বসুন্ধরা পেপার মিলস, এম আই সিমেন্ট ও আরকে সিরামিক লিমিটেড।

এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম এখন কাট-অব প্রাইসের নিচে অবস্থান করছে। অর্থাৎ পুঁজিবাজারে আসার সময় কোম্পানিগুলো যে দামে শেয়ার বিক্রি করে টাকা উত্তোলনে করে টাকা তুলে নিয়েছে এখন সেই দামের নিচে।

এছাড়াও কাট-অব প্রাইসের কাছাকাছি চলে এসেছে আমরা নেটওয়ার্সক লিমিটেডের শেয়ারের দামও। বার্তা২৪.কমের অনুসন্ধানে এই চিত্র উঠে এসেছে।

অনুসন্ধ্যানে দেখা যায়, ২০১০ সাল থেকে ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত মোট আটটি কোম্পানি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এর মধ্যে ছয়টি কোম্পানির শেয়ারের দাম কাট-অব প্রাইসের নিচে চলে এসেছে। যা শতাংশের হিসেব ৭৫ শতাংশ।

তালিকাভুক্ত হওয়ার পরপরই এই করুণ পরিণতির পেছনের কারণ পুঁজিবাজারে আসার সময় কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে ব্রোকারেজ হাউজ, কোম্পানি ও মার্চেন্ট ব্যাংকাররা। সম্প্রতি দুটি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িত থাকায় অর্ধশত প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়েছে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আইনি দুর্বলতা ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণে কারসাজি চক্র সুযোগ নিচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। প্রতিবেদকের কাছে এসব স্বীকারও করেছেন কোম্পানির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। বিষয়টি এখন ‘ওপেন সিক্রেট’ বলে জানিয়েছেন তারা।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের প্রথম দিকে ৪০ টাকা দরে দুই কোটি আট লাখ ৩৩ হাজার শেয়ার বিক্রি করে পুঁজিবাজার থেকে ৮০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে আমান কটন ফাইবার্স লিমিটেড।

কোম্পানির লেনদেন শুরু হয় গত বছরের ১৫ মে। মাত্র ১০ মাসের ব্যবধানে কোম্পানির শেয়ারের দাম কাট-অব প্রাইসের নিচে অর্থাৎ ৪০ টাকা থেকে নেমে ২১ মার্চ ৩৭ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। অর্থাৎ মাত্র ১০ মাসের ব্যবধানে কাট অব প্রাইস থেকে শেয়ারের দাম কমেছে তিন টাকা।

গত বছরের ৫ জুলাই তালিকাভুক্ত হওয়া বসুন্ধরা পেপার মিলসের শেয়ারে কাট-অব প্রাইস ছিলো ৮০ টাকা। ২৩ মার্চ পর্যন্ত শেয়ারটি লেনদেন হয়েছে ৭৩ টাকায়। অর্থাৎ এ কোম্পানির শেয়ারে দাম কাট অফ প্রাইসের চেয়ে সাত টাকা কমেছে। কোম্পানিটি বাজার থেকে ২০০ কোটি টাকা উত্তোলন করে।

ওষুধ খাতের কোম্পানি একমি ল্যাবরেটরিজের কাট-অব প্রাইস ছিল ৮৫ দশমিক ২০ টাকা। ২৩ মার্চ শেয়ারটির সর্বশেষ দাম ছিল ৮০ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা পাঁচ টাকা করে হারিয়েছে। ২০১৬ প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজার থেকে ৪০৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা সংগ্রহ করে।

২০১১ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া এমজেএলের কাট-অব প্রাইস ছিল ১৫২ দশমিক ৪০ টাকা। সেখান থেকে প্রতিটি শেয়ারের দাম ৬০ টাকা কমে ২৩ মার্চ লেনদেন হয়েছে ৯২ টাকায়।

একই বছর তালিকাভুক্ত হয় সিমেন্ট খাতের আরেক কোম্পানি এম আই সিমেন্ট। সেই সময় শেয়ারটির কাট-অব প্রাইস ছিল ১১১ দশমিক ৬০ টাকা। ২৩ মার্চ শেয়ারটি সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৭৪ দশমিক ১০ টাকায়। অর্থাৎ ২৬ টাকা কম।

এছাড়াও ২০১০ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া আরকে সিরামিকের শেয়ারের কাট-অব প্রাইস ছিল ৪৮ টাকা। শেয়ারটির দাম ২৩ মার্চ ছিল ৩৫ দশমকি ৯০ টাকা। অর্থাৎ ১২ টাকা করে নেই বিনিয়োগকারীদের।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে আসার সময় কোম্পানিগুলো ওভার ভ্যালুয়েশন করেছে। কাট-অব প্রাইসে অতিরঞ্জিত করেছে। তার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা দায়ী।’

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইফুল ইসলাম মজুমদার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘বুক বিল্ডি সিস্টেমে বেশকিছু দুর্বলতার কারণে কারসাজি চক্ররা এসব কোম্পানির কাট-অব প্রাইসে ম্যানিপুলেট করেছে। ফলে এখন বিনিয়োগকারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’

সার্বিক বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘বুক বিল্ডিং পদ্ধতির বেশকিছু নিয়ম কানুন সংশোধন করা হচ্ছে। যারা ফাউল প্লে করছে, তাদের খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু দুটি কোম্পানির শেয়ারের ওভার প্রাইসিংয়ে জড়িত থাকায় মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর