আইপিওর অর্থে বসুন্ধরা পেপারের উৎপাদন বেড়েছে ৩০ হাজার মেট্রিক টন

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 13:54:24

নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ ব্যবহার করেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড।

ফলে এ খাতের শতাধিক কোম্পানির মধ্যে দেশের প্রধান পেপার ও টিস্যু উৎপাদনকারী এ কোম্পানির টিস্যুর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে ৩০ হাজার মেট্রিক টন। দেশীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি পাশ্ববর্তী দেশ ভারতসহ ২৩টি দেশে টিস্যু রফতানি করছে কোম্পানিটি।

১৯৯৫ সালে একটি ইউনিট দিয়ে যাত্রা শুরু হওয়া প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়ীক কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। তারপর ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় বসুন্ধরা পেপার। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ৫২ ধরণের টিস্যু ও পেপার উৎপাদিত হচ্ছে।

কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে পেপারের প্রধান কাঁচামাল পাল্পের দাম দ্বিগুণ (প্রতিটন ৫০০-৯০০ ডলার) বাড়ায় কাগজ তৈরিতে খরচ বেড়েছে।

কিন্তু ক্রেতাদের কথা ভেবে কাগজ কিংবা টিস্যুর দাম সেভাবে বাড়ানো হয়নি। বরং টিস্যু ও কাগজ উৎপাদনের খরচ কমাতে বিদ্যুতের পরিবর্তে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি একই পানি একাধিকবার ব্যবহারের উপযোগী করা হচ্ছে। পরিবেশ দূষণ নিয়েও কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে অবস্থিত বসুন্ধরা পেপারের উৎপাদন কেন্দ্রে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোম্পানিটির এক ইউনিটে প্রায় ১০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। মেশিনটিতে উৎপাদনও শুরু হয়েছে। ফলে কোম্পানিটির বার্ষিক টিস্যু উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়িয়ছে এক লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিক টন।

হেবিওয়েট যন্ত্রের কাজ বলে ইউনিটটিতে মহিলা শ্রমিকদের উপস্থিতি ছিল কম। তবে প্রথমটির তুলনায় নারায়ণগঞ্জের দ্বিতীয় ইউনিটটিতে কিছু মহিলা শ্রমিকদের দেখা গেছে। অপরদিকে নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন এবং গবেষণার জন্য অবস্থিত তৃতীয় ইউনিটে মহিলা শ্রমিকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। মুন্সিগঞ্জে অবস্থিত কোম্পানিতে রয়েছে পরিবেশবান্ধব ময়লা পানি তরল বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) ব্যবস্থা।

সার্বিক বিষয়ে বসুন্ধরা পেপার মিলস ইউনিট-৩-এর হেড অব প্রজেক্ট প্রকৌশলী মো. আবুল হাসান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। তাছাড়া পাল্প তৈরিতে প্রচুর গাছের প্রয়োজন, যা আমাদের এখানে নেই। ফলে পাল্প আমদানি করা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নেই।’

তিনি বলেন, ‘জেনারেটরের তাপ কাজে লাগিয়ে বাষ্প তৈরি করা, যন্ত্রপাতি যথাযথ মেইনটেন্যান্সের মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবহার কমানোসহ কারখানায় ব্যবহৃত পানি পরিশোধনের মাধ্যমে পুনরায় ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছি। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ব্যয় কমানো সম্ভব হয়েছে।’

প্রতিষ্ঠানটির উপ-মহাব্যবস্থাপক এম. মাজেদুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘সরকার গ্যাস, বিদ্যুতের দাম প্রতিনিয়তই বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে কাচাঁমালের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সব মিলিয়ে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। কিন্তু সেভাবে পণ্যের দাম বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে কোম্পানির উৎপাদনের সক্ষমতা যা রয়েছে, তা থেকে বাড়াতে আগামী পাঁচ বছরে রাইট শেয়ার ছেড়ে টাকা উত্তোলন করার কোনো ইচ্ছে নেই।’

কোম্পানির তথ্যমতে, বসুন্ধরা পেপারের তিনটি ইউনিট থেকে বার্ষিক এক লাখ ৪৩ হাজার ৫০ টন টিস্যু ও পেপার, ৩৪ হাজার ৩০৮ টন পেপার, এক কোটি ৮৯ পিস প্রিন্টিং, ১২ কোটি পিস পিপি ওভেন ব্যাগ ও স্যাক ব্যাগ, এক কোটি প্যাকেট স্যানিটারি ন্যাপকিন, পাঁচ কোটি ৩৯ লাখ ১৩ হাজার ৬০০ পিস বেবি ডায়াপার, আট কোটি ১৬ লাখ ৪৮ হাজার পিস ডায়াপ্যান্ট, এক হাজার ৬৬৭ টন স্ল্যাজ বোর্ড ও আড়াই কোটি পিস হ্যান্ডগ্লাভস উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।

২০১৭-১৮ হিসাব বছরে বসুন্ধরা পেপার মিলসের উৎপাদন খাতে ব্যয় হয়েছে ৮৯০ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৮১৭ কোটি টাকা। বিদায়ী বছরে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ৬৯ কোটি টাকা। যা আগের বছর ছিল ৩৮ কোটি টাকা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর