বীমার আওতায় আসছেন প্রবাসী শ্রমিকরা

ব্যাংক বীমা, অর্থনীতি

আসিফ শওকত কল্লোল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 05:04:50

প্রবাসী শ্রমিকদের বাধ্যতামূলক বীমার আওতায় আনতে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা বিদেশি বীমা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সফর শুরু করবেন।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অজিত কুমার পাল বার্তা২৪.কম’কে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ প্রবাসী শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে থাকেন। প্রবাসী শ্রমিকরা সেখানে বীমা করলে অনেক সুবিধা পাবেন। বিশেষ করে বিদেশে মারা যাওয়ার পর মরদেহ দেশে নিয়ে আসতে সহজ হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রবাসী শ্রমিকদের শতভাগ বীমার আওতায় আনতে কাজ করছে। আশা করছি, শিগগিরই একটা সমাধান আসবে। তাছাড়া আমরা এখন মধ্যআয়ের দেশ। ফলে সবাইকে বীমার আওতায় আনার বিকল্প নেই।’

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভাগ্য ফেরানোর আশায় বিদেশ গিয়ে অনেকে লাশ হয়ে দেশে ফেরেন। অনেকে কোম্পানি বন্ধ বা লে-অফ হয়ে যাওয়ায় চাকরি হারান। এতে অসহায় হয়ে পড়েন তারা ও তাদের পরিবার। এক পর্যায়ে শূন্য হাতে ফিরতে হয়। এসব বিবেচনায় প্রবাসী শ্রমিকদের শতভাগ বীমার আওতায় আনতে নীতিমালা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। নীতিমালায় ৩ ধরনের বীমার বিধান রেখে খসড়া তৈরি করেছে আইডিআরএ।

নীতিমালা অনুযায়ী, বিদেশ যাত্রার পরবর্তী এক মাস কর্মীরা স্বাস্থ্য বীমার সুবিধা পাবেন। চাকরি হারানো, বাফার টাইম, লে-অফ বা কোম্পানি বন্ধের জন্যও পাবেন বীমা সুবিধা। এ ছাড়া প্রবাসে কর্মকালীন সময়ের জন্য পাবেন জীবন বীমা সুবিধা। এছাড়া প্রাথমিকভাবে তাদের কর্মমেয়াদের জন্য জীবন বীমা পলিসি ক্রয় করতে পারবেন। জীবন বীমার অঙ্ক ২-১০ লাখ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৮-৫৮ বছর বয়স পর্যন্ত যে কোনো প্রবাসী শ্রমিক এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন।

নীতিমালায় আরো উল্লেখ করা হয়েছে, বীমা চলাকালীন সময়ে বীমা গ্রহীতার মৃত্যু অথবা অঙ্গহানি হলে বীমা দাবি পরিশোধ করা হবে। মৃত্যুর ক্ষেত্রে শতভাগ এবং চাকরি হারানো, কোম্পানি লে-অফ বা বন্ধের জন্য সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকার বীমা সুবিধা পাওয়া যাবে। বীমার মেয়াদ হবে এক বছর। তবে এনডোর্সমেন্টের মাধ্যমে দুই বছর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো যাবে। যদি বীমা গ্রহীতা কর্মে নিয়োগের এক মাসের মধ্যে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত হন তবে ক্ষতিপূরণ হবে বীমা অঙ্কের ৮০ শতাংশ, তিন মাসের মধ্যে চাকরিচ্যুত হলে বীমা অঙ্কের ৭০ শতাংশ, পাঁচ মাসের মধ্যে চাকরিচ্যুত হলে ৬০ শতাংশ, ৭ মাসের মধ্যে ৫০ শতাংশ, ৭ মাস থেকে ৯ মাসের মধ্যে চাকরিচ্যুত হলে ৪০ শতাংশ এবং ৯ মাসের অধিক সময়ের মধ্যে চাকরিচ্যুত হলে ক্ষতিপূরণ হবে বীমা অঙ্কের ২৫ শতাংশ। তবে নিজ ইচ্ছায় চাকরি থেকে ইস্তফা দিলে, অদক্ষতা, শারীরিক অক্ষমতা বা স্বাস্থ্যগত কারণে চাকরি থেকে অব্যাহতি পেলে এবং বীমা গ্রহীতা নিজের অসদাচারণ-অনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে চাকরিচ্যুত হলে, নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে বা মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে বীমার ক্ষতিপূরণ পাবেন না।

নীতিমালায় উল্লেখ আছে, বিদেশে কর্মরত এবং বিদেশে কাজ করতে যাবে এমন দক্ষ, অদক্ষ ও সেমি দক্ষ শ্রেণির শ্রমিকরা এই বীমা সুবিধা পাবেন। তবে যারা ফ্রি ভিসায় বিদেশে যাবেন, তাদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বীমা ব্যতীত অন্য কোনো বীমা সুবিধা প্রযোজ্য হবে না। বিদেশ যাওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর হতে এ সংক্রান্ত ছাড়পত্র সংগ্রহের আগেই এককালীন প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে হবে।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো প্রবাসী বীমা অনুমোদনের উদ্যোগ নেয় সরকার।

এ সম্পর্কিত আরও খবর