৩২ বিলিয়ন ডলার লোকসানেও কেন টিকে আছে বোয়িং!

, অর্থনীতি

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-05-08 07:37:30

 

পরিস্থিতি যেন কোনোভাবেই অনুকূলে আসছে না বিশ্বখ্যাত উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের। একের পর এক দুর্ঘটনায় নাকাল প্রতিষ্ঠানটি ভাবমূর্তি যেমন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে, তেমনি আর্থিক অবস্থায় শোচনীয় পর্যায়ে গিয়েছে।

এক একটি দূর্ঘটনার পর বোয়িংকে বিপুল পরিমান আর্থিক ক্ষতির সম্মূখীন হতে হচ্ছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিগত ৫ বছরে প্রতিষ্ঠানটি ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লোকসান দিয়েছে। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, বোয়িং না হয়ে যদি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান এই লোকসানে পড়তো তাহলে ওই কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যেতো। বোয়িং বলেই এটি এখনো টিকে আছে।

সূত্র বলছে, এই পরিমান লোকসান সত্বেও বোয়িংয়ের ৫,৬০০টি উড়োজাহাজ বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ সরবরাহ করতে পারেনি, যার আর্থিক মূল্য ৫২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এত বিপুল সংখ্যক উড়োজাহাজের অর্ডার থাকা সত্ত্বেও কেন বোয়িং উড়োজাহাজ নির্মাণ কমিয়ে দিয়েছে। সমস্যা তাহলে কোথায়? খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, উড়োজাহাজের গুণগত মান নিশ্চিত করতেই তারা এই সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। শুধুমাত্র লাভের জন্য তারা ইচ্ছেমতো উড়োজাহাজ নির্মাণের দিকে নজর দিচ্ছে না।

মার্কিন অ্যারোস্পেস বিশেষজ্ঞ রন ইপেস্টিন বলেন, এই অবস্থা চিরদিনের জন্য চলতে পারে না। কারণ তাদের সামান্য বিচ্যুতি রয়েছে। কিন্তু এজন্য তারা আগামীকাল নতুন করে সমস্যায় পড়তে চাইছে না।

ঋণে নিমজ্জিত বোয়িং: 

বোয়িং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা মুনাফার থেকে নিরাপত্তা ও গুণগত মানের দিকে বেশি মনোনিবেশ করছে। যেমন নাটবল্টু হয়তো নাই – এমন সব বিষয়ে সতর্ক থাকছি। কারণ এ ধরনের নাটবল্টু যদি না থাকে তাহলে আকাশে উড়োজাহাজের কাঠামো খুলে যেতে পারে। যেমনটি আলাস্কা এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজের ক্ষেত্রে ঘটেছিল গত জানুয়ারিতে। 

বোয়িংয়ের সদ্য বিদায়ী সিইও ডেভ ক্যালহাউন বলছেন, বোয়িংয়ের আর্থিক অবস্থা যতটা খারাপ মনে হচ্ছে ততটা নয়। বরং আমাদেও কাছে এটি বুঝতে পারা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদেও কর্মী ও স্টেকহোল্ডাররা বোয়িংয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে কতটা আশাবাদী হচ্ছে। বরং আমাদেও পোর্টফোলিও জুড়ে চহিদা অবিশ্বাস্যভাবে শক্তিশালী রয়েছে। আমাদেও কর্মীরা বিশ্বমানের। আমাদেও সামনে অনেক কাজ আছে। তবে আমাদেও কর্মীদেও নিয়ে আমরা গর্বিত এবং আমাদেও ভবিষ্যতের ব্যাপাওে সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী।

তার মানে এই না যে, বোয়িং তার সমস্যাগুলোর বিষয়ে সিরিয়াস না। গুণমান ও নিরাপত্তার বিষয়টি আকাশপথে ভ্রমণকারীদের আস্থা নষ্ট করেছে। তাছাড়া আলাস্কা এয়ারলাইন্সের ওই ঘটনার আগে ও পরেও বোয়িংয়ের অর্ডারের পতন হয়। কারণ বোয়িং প্রতিদ্বন্দ্বী এয়ারবাসের চেয়ে অনেক পিছিয়ে পড়েছে।

২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ার ও ২০১৯ সালে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের দুর্ঘটনায় ৩৪৬ জন যাত্রী নিহত হন। ২০১৯ সালের দ্বিতীয় কোয়ার্টারে বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স এ ভয়াবহ দুর্ঘটনা সব থেকে বেশি বিক্রিত উড়োজাহাজটিকে ২০ মাস গ্রাউন্ডেড করে রাখতে হয়েছে। ম্যাক্স ৭৩৭ দুর্ঘটনার পর ২০১৮ সালের শেষে বোয়িংয়ের ঋণের পরিমান ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

যেখানে বোয়িং এগিয়ে: 

বোয়িং কোম্পানির দুটি সুবিধা রয়েছে, যা অন্য কোম্পানিগুলোর নেই। প্রথম, কোম্পানিটির সব গ্রাহক যদি বোয়িং থেকে এয়ারবাসে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলেও এয়ারবাসের ৮,০০০ এর বেশি বাণিজ্যিক উড়োজাহাজের অর্ডার রয়েছে এবং এ বছর প্রায় ৮০০টি উড়োজাহাজ সরবরাহ করার টার্গেট করেছে তারা। তার মানে যেসব এয়ারলাইন্স বোয়িংয়ের অর্ডার দিয়েছে তা বাতিল করার সম্ভাবনা নেই। যদি নতুন কোনো উড়োজাহাজ নির্মাতা এই ব্যবসায় শুরু করতে চায়, তবে তাদের একটি প্রতিযোগী মডেলের উড়োজাহাজ নিয়ে আসতে কয়েক বছর এবং বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ লাগবে।

এয়ারলাইন্সের বৈমানিকেরা শুধুমাত্র একটি সুনির্দিষ্ট মডেলের উড়োজাহাজ উড়ানোর জন্য সার্টিফিকেট পান। তারা চাইলেই প্রতিযোগী মডেলের কোনো উড়োজাহাজে সুইচ করতে পারেন না। এছাড়াও এয়ারলাইন্সগুলোকে তাদের নিজস্ব উড়োজাহাজের পরিষেসা নিশ্চিত করতে খুচরা যন্ত্রাংশের সরবরাহ সরবরাহ রাখতে হবে। তাই একবার একটি এয়ারলাইন্স ৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজ বেছে নিলে তার প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য মডেলে যাওয়া খুবই ব্যয়বহুল।

তবে অন্য একটি দিকও রয়েছে। বোয়িং তার সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে না পারলে এয়ারবাসের নেতৃত্ব স্থায়ী হয়ে যেতে পারে। তাহলে বোয়িংকে দীর্ঘমেয়াদে সমস্যায় পড়তে হতে পারে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর