বাণিজ্য মেলায় শিশুদের দিয়ে চুরি, মূল হোতা ‘বড় ভাই’

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 03:18:25

বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণ, বিকেল চারটা। প্রথমে ডানে-বামে তাকিয়ে আশপাশের এলাকা ভালো করে দেখে নেয় ১০ বছরের এক শিশু। মূল ফটকের সামনে থেকে সালোয়ার কামিজ পড়া ৩৫-৪০ বছর বয়সের একজন নারী মেলার ভিতরে প্রবেশের জন্য পা বাড়ান। দূর থেকে এই নারীকে টার্গেট করে এগুতে থাকে শিশুটি। দেখা যায়, শিশুটিও চুপি চুপি এই নারীর পাশে হাঁটছে। তখনো বোঝা যাচ্ছিল না সামনে আসলে কি ঘটতে যাচ্ছে।

কিছুক্ষণ হাঁটার পর হাতিল ফার্নিচারের প্যাভিলিয়নের সামনে পৌছা মাত্রই শিশুটি ওই নারীর ব্যাগে হাত ঢুকানোর চেষ্টা করে। এবার বোঝা গেল শিশুটি টাকা চুরি করার জন্য এই নারীর পিছু নিয়েছে। তৃতীয়বারে সফল হয় এবং ব্যাগ থেকে টাকা চুরি করে সে। তবে আশ্চর্য বিষয় হলো, ২০ মিনিট ধরে শিশুটি পিছু নিয়ে ব্যাগ থেকে টাকা চুরি করে, কিন্তু এই নারী তার কিছুই টের পাননি।

এদিকে প্রথমে থেকেই এই দৃশ্য দেখে বার্তা২৪.কমের ফটো করেসপন্ডেন্ট সুমন শেখ, শিশু ও  নারীর পিছু নেন। যখন ব্যাগ থেকে টাকা চুরি করে তখনই হাতেনাতে তাকে ধরে ফেলেন সুমন শেখ। ঐ নারী বিষয়টি বুঝতে পারলে তিনি রীতিমত অবাক হয়ে যান।  পরে তার হাতে চুরি হওয়া ২ হাজার টাকা ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয় শিশুটি।

ভুক্তভোগী সুমি রহমান নামে ওই  নারী বার্তা২৪.কমকে বলেন, এইটুকু  ছেলে ব্যাগ থেকে টাকা চুরি করবে তা চিন্তাও করা যায়না। সে যে অনেকক্ষণ ধরে আমার পিছু নিয়েছে তা বুঝতেই পারিনি।

বুহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণে অভিনব এই চুরির ঘটনা ঘটে। চুরির সঙ্গে জড়িত এই কিশোরের নাম  কাউসার।

বাণিজ্য মেলায় এ ঘটনার শেষ এখনেই নয়। এটি কোনো হঠাৎ ঘটে যাওয়া  ঘটনা নয়। একটি সংঘবদ্ধ চক্র কাউসারদের মতো কোমলমতি শিশুদের প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় এই চুরির চক্র চালাচ্ছে।

কাউসারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেসহ আরও দশজন শিশু বাণিজ্য মেলায় প্রতিদিন দর্শনার্থীদের ব্যাগ থেকে এভাবে টাকা, মোবাইল ফোন চুরি করে। তবে তাদের এক বড় ভাই আছে, যে কিনা এই চক্রের প্রধান। প্রতিদিন বাণিজ্য মেলা থেকে যা টাকা পয়সা বা মোবাইল কাউসাররা চুরি করে তা দিন শেষে তুলে দিতে হয় ঐ বড় ভাইয়ের কাছে। সেই টাকা থেকে ২০০-৩০০ টাকা কাউসারদের দেয়  চক্রে মূলহোতা ঐ বড় ভাই।

কাউসার বার্তা২৪.কমকে বলে, আমি মা বাবার সঙ্গে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে থাকি। সজীব নামে এক বড় ভাই মেলা উপলক্ষে আমাকে এখানে আনছে। ভাই আমারে বলছে মানুষের ব্যাগ থেকে টাকা চুরি করতে। হের কথায় আমি চুরি করি। সারাদিন যা চুরি করি তা ভাইয়ের কাছে দেই। পরে হে আমারে কোন দিন ২০০ আবার কোনো ৩০০ টাকা দেয়। আমরা মতো আরও দশ জন আছে।

পুলিশের ভয় করে না এমন প্রশ্নের জবাবে কাউসার বলে, বড় ভাই কইছে পুলিশের কোনো ভয় নাই। আমরা কাজ করলে পুলিশ কিছু কইব না। ভাইরে দেখি মেলায় মাঝে মধ্যে পুলিশের লগে কথা কয়।

তার সঙ্গী বা বড় ভাইয়ের কাছে নিয়ে যেতে পারবে কিনা এমন প্রশ্ন করলে কাউসার উত্তর দেয় পারুম। পরে এই করেসপন্ডেন্ট কাউসারের পিছনে বাণিজ্য মেলার ফুড কর্নারের টয়লেটের সামনে গেলে কাউসারের মতো কয়েকজনকে দেখা যায়। তাদের এ বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা কোনো উত্তর  না দিয়ে দৌঁড়ে চলে যায়।

তবে ঘণ্টাখানেক খোঁজাখুঁজির পরও সেই কথিত বড় ভাইয়ের দেখা মিলেনি। তখন কাউসার বলে, ভাই মনে হয় মেলা থেকে চলে গেছে।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মেলায় দায়িত্বরত পুলিশের এসআই জলিল বার্তা২৪.কমকে বলেন, মাঝে মধ্যে এমন কিছু ঘটে যায়। তবে আমরা এ বিষয়ে সজাগ আছি।

এই পুলিশ সদস্যের কাছে সন্তুষ্টজনক উত্তর না পেয়ে বাণিজ্য মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, পুলিশকে বার বার করে বলে দেওয়া হয়েছে যে মেলা প্রাঙ্গণে যেন কোনো ধরনের হকার, বা এ ধরনের শিশু না থাকতে পারে বা তাদের যেন ঢুকতে দেওয়া না হয়। কিন্তু তারপরেও তারা মেলা প্রাঙ্গণে রয়ে গেছে। তবে আমরা এই চুরির বিষয়টি দেখছি। চক্রটির বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে যাতে করে দর্শনার্থীরা নির্বিঘ্নে মেলায় ঘুরতে পারেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর