একীভূত হচ্ছে না ইসলামী ব্যাংক, তালিকায় রয়েছে অন্য ৯টি

, অর্থনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-04-09 19:44:39

দেশের দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতিমধ্যে স্বেচ্ছায় একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ধুঁকতে থাকা পদ্মা ব্যাংক। আরও বেশ কয়েকটি ব্যাংক একীভূত করার চূড়ান্ত একটি লিস্ট তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এর মধ্যে কোনো ইসলামি ব্যাংকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়নি।

জানা যায়, দুর্বল যেসব ইসলামি ধারার ব্যাংক রয়েছে এসব ব্যাংক মালিকরা নিজেদের উদ্যোগেই ব্যাংকগুলোর স্বাস্থ্য ভালো করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে গভর্নরের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংকের মালিকানায় থাকা পরিচালক ও চেয়ারম্যানরা বৈঠক করেন। বৈঠকে ১০টি দুর্বল ব্যাংককে বিভিন্ন সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে পদ্মা ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, বিডিবিএল, বেসিক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এবং আইসিবি ইসলামি ব্যাংক।

যদিও আইসিবি ইসলামি ব্যাংকের একীভূত হওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। কারণ আইসিবি ইসলামি ব্যাংকের শেয়ার ওরিয়ন গ্রুপ কিনে নেয়ার বিষয়ে কথা হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে। এর আগে আইসিবি ইসলামি ব্যাংকটির নাম ছিল দ্য ওরিয়েন্টাল ব্যাংক। সে সময় ব্যাংকটি ওরিয়ন গ্রুপের মালিকানায় ছিল। তবে দেউলিয়াপ্রায় অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে তা মালয়েশিয়াভিত্তিক আইসিবি ইসলামি গ্রুপ ব্যাংকটির অধিকাংশ শেয়ার কিনে নেয়। তবে নাম, মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনলেও আইসিবি ইসলামি ব্যাংক আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।

এদিকে ইসলামি ধারার কয়েকটি ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিভিন্ন সময় আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এসব ব্যাংক নিয়ে নিউজও হয়। তবে এসব ব্যাংক এখনই একীভূত হচ্ছে না বলেই জানা গেছে।

সূত্রমতে, গত মার্চ মাসে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চুক্তি করেছে পদ্মা ব্যাংক। এর মধ্য দিয়ে ব্যাংক একীভূত করার ধারা শুরু হয়। এছাড়া রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে (রাকাব) কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে (বিডিবিএল) সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে সরকারি মালিকানাধীন সমস্যাগ্রস্ত বেসিক ব্যাংক।

এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত সূত্র জানায়, সম্প্রতি আর্থিক খাতের নীতিনির্ধারকদের এক বৈঠকে ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে আলোচনা হয়। কোন ব্যাংক কার সঙ্গে একীভূত করা যায়, তা নিয়ে সেখানে অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তার একটি খবরের পর আলোচনা ব্যাপক মাত্রা পেয়েছে।

এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোকে একীভূত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কেউ একীভূত না হলে আগামী বছর মার্চ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংককে মিলিয়ে দেয়া হবে।

ইতিমধ্যে গত বৃহস্পতিবার স্বেচ্ছায় একীভূত হওয়ার একটি নীতিমালা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘একীভূতকরণের পর যে ব্যাংক বিলীন হয়ে যাবে, সেই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন বছরের আগে ছাঁটাই করা যাবে না। তবে ওই ব্যাংকের বড় কর্তারা (এমডি, ডিএমডি) থাকতে পারবেন না।’

এ ছাড়া একত্রীকরণের অনুমোদন হওয়ার পর হস্তান্তরকারী ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংকের কর্মকর্তা হতে না চাইলে তাঁদের ক্ষতিপূরণ, পেনশন, গ্র্যাচুইটি, ভবিষ্য তহবিল ও অন্যান্য অবসরজনিত সুবিধা দেওয়া বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে গ্রহীতা ব্যাংক-নীতিমালায় এ বিষয়েও নির্দেশনা দেয়া আছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে ব্যাংক একীভূতকরণের ‍উদাহরণ খুব একটা নেই। বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থাকে একীভূতকরণ করে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক গঠন করা হয়েছিল ২০০৯ সালে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর