মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে ইসলামী ব্যাংক: মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা

ব্যাংক বীমা, অর্থনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-03-30 15:22:24

প্রতিষ্ঠার প্রথম দশকেই ইসলামী ব্যাংক মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা।

শনিবার (৩০ মার্চ) ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

১৯৮৩ সালের ৩০ মার্চ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে ২০২৪ সালে ৪১ বছর পূর্ণ করেছে।

দীর্ঘ ৪১ বছরের পথচলা সম্পর্কে তিনি বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম সুদমুক্ত ব্যাংক হচ্ছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। ব্যাংকের কার্যক্রম শুরুর দিকে এর পথচলা ছিল চ্যালেঞ্জিং।

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বলেন, প্রচলিত ব্যাংক ব্যবস্থার বিপরীতমুখী কার্যক্রম নিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করা খুব একটা সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু প্রতিষ্ঠার প্রথম দশকেই ইসলামী ব্যাংক গ্রাহকদের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়।

তিনি বলেন, পরের দশকগুলোতে ব্যাংক আরো প্রসারিত হয়েছে। এর মধ্যে আমানত, বিনিয়োগ, আমদানি-রফতানি, রেমিট্যান্স আহরণ, শিল্পায়ন, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নসহ প্রতিটি সূচকে ইসলামী ব্যাংকের অবস্থান এখন সবার শীর্ষে। দেশের মোট ব্যাংক আমানতের ১০ ভাগ এবং বিনিয়োগের ৯ ভাগ এককভাবে ইসলামী ব্যাংক ধারণ করছে।

ব্যাংকটির অর্জন সম্পর্কে জানাতে গিয়ে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা জানান, স্রোতের বিপরীতে দেশের আর্থিকখাতে একটি বিপরীত ধারা সৃষ্টি করা একটি বড় সফলতা।

তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের ব্যাংকখাতের প্রায় ৩০ শতাংশ ইসলামী ধারায় পরিচালিত হচ্ছে। এ ধারায় গড়ে উঠেছে ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক। দেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থায় বিদ্যমান এ জনপ্রিয়তা ইসলামী ব্যাংকেরই অর্জন।

তিনি জানান, ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠার সময় রফতানিখাত ছিল সীমিত। সে সময় পাট, চামড়াসহ অল্প কিছু পণ্য বিদেশের বাজারে রফতানি হতো। তৈরি পোশাক খাতের পরিসরও তখন ছোট। সেই সময় দেশের উৎপাদনমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানও ছিল একেবারে হাতগোনা।

দেশে শিল্প উদ্যোক্তা গড়ে তুলতে ইসলামী ব্যাংকের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, দেশের তৈরি পোশাকখাতের ভিত্তি তৈরি হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগের মাধ্যমে। দেশের তৈরি পোশাকখাতের বিকাশে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্র বা এলসি।

দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যাংকটির ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বর্তমানে দেশের বৃহৎ শিল্প উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত অনেক ব্যবসায়ীই ইসলামী ব্যাংকে এসেছিলেন শূন্য হাতে, হেঁটে কিংবা রিকশায় চড়ে। এ ব্যাংকের সহায়তায় তারা শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন। ইসলামী ব্যাংকের গড়ে তোলা উদ্যোক্তারা এখন দেশের অর্থনীতির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ ব্যাংকের বিনিয়োগে দেশে প্রায় ৮৫ লাখ মানুষের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে। বর্তমানে দেশে ছয় হাজারের বেশি শিল্প-কারখানা এবং দুই হাজারের বেশি কৃষিভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান এ ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে গড়ে তুলেছে প্রায় তিন লাখ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ ব্যাংক প্রায় সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকার আমদানি আর ৪ লাখ কোটি টাকার রফতানি বাণিজ্য করেছে। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক।

রফতানি ও রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রেও ইসলামী ব্যাংকের অবস্থান খুব দৃঢ় জানিয়ে তিনি জানান, শুধু ২০২৩ সালে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ৫৭ হাজার ৩৪১ কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে। ২০২২ সালে ব্যাংকের মাধ্যমে আমদানির পরিমাণ ছিল সাড়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকা।

আমদানির ক্ষেত্রে খাদ্যপণ্য, সার, জ্বালানিসহ অত্যাবশ্যকীয় পণ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

রফতানিতে ব্যাংকের ভূমিকা প্রসঙ্গে মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা জানান, ২০২৩ সালে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ৩৩ হাজার ৮০৬ কোটি টাকার পণ্য রফতানি হয়েছে। ২০২৩ সালে ৫৬ হাজার ৬১২ কোটি টাকার রেমিট্যান্স দেশে এনেছে ইসলামী ব্যাংক, যা দেশের মোট রেমিট্যান্সের প্রায় ২৭ শতাংশ।

ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যা প্রসঙ্গে জানান, ইসলামী ব্যাংক দেশের দুই কোটিরও বেশি গ্রাহকের প্রতিষ্ঠান। এত বড় গ্রাহকভিত্তিক ব্যাংক দেশের অন্য কোনো ব্যাংকের নেই। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকে গ্রাহকদের জমা আমানতের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। এত পরিমাণ আমানত দেশের অন্য কোনো ব্যাংকের নেই।

এ সম্পর্কিত আরও খবর