সুদি মহাজনদের রমরমা ব্যবসা, নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম | 2023-09-01 23:31:13

অনেক আগে থেকেই গ্রাম গঞ্জ বা শহরে সুদের ব্যবসা করে আসছে সুদখোর মহাজনরা। ব্রিটিশ আমলে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ঋণ সালিশি বোর্ড গঠন করে বাংলার কৃষকদেরকে সুদখোর মহাজনদের শোষণ থেকে রক্ষা করেছিলেন। পরে আবার গোপনে সুদখোর মহাজনরা এ ঘৃণ্য ব্যবসা শুরু করে।

ঝিনাইদহ জেলায় বর্তমানে এ ব্যবসা জমজমাট। এরা মানুষের কাছ থেকে অস্বাভাবিক চড়া সুদ আদায় করছে। এদের খপ্পরে পড়ে মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছে। এছাড়াও এনজিওগুলো ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। প্রত্যন্ত গ্রামেও এখন ব্যাংকের শাখা আছে।

এসব প্রাতিষ্ঠানিক ঋণদান সংস্থার পাশাপাশি ব্যক্তি কেন্দ্রিক ঋণ দান ব্যবসা চলছে। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা যায়, সুদখোর মহাজনরা ঋণ দান করে মাসিক শতকরা ১৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত সুদ আদায় করছে। এরা পাঁচ দশ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ত্রিশ /চল্লিশ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে।

ঋণ দান কালে এরা ঋণ গ্রহণকারীর কাছ থেকে ব্যাংকের খালি পাতার চেকে সই নিয়ে থাকে। এর পাশাপাশি সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে থাকে। টাকা পরিশোধ করতে না পারলে ব্ল্যাংক চেকের পাতায় ইচ্ছামত অংক বসিয়ে নেয়। তারপর মামলা মোকদ্দমার ভয় দেখিয়ে চাপ দিতে থাকে। কোনো কোনো মহাজন আদালতে মামলা ঠুকে দেয়। এরা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে টু শব্দ করতে পারে না।

ঝিনাইদহ শহরের এইচএসএস সড়কের আসাদ মিয়ার জামাই ইউনুস আলী বেসিক ব্যাংকের ব্যাংক চেক দিয়ে সুদের ইমরান শাহর কাছ থেকে অল্প কিছু সুদে টাকা নেয়। পরে টাকা দিতে না পারায় তার নামে ঝিনাইদহ আমলী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার লাখ টাকার মামলা ঠুকে দেয়, মামলা নং ১৭১/১৭।

শহরের কবি গোলাম মোস্তফা সড়কের জনতা ইটভাটার মালিক মফিজুল ইসলাম বাবুল জোয়ারদারের নামে ২৬ লাখ টাকা দাবি করে দুইটি মামলা দায়ের করেছে ইমরান শাহ। যার মামলা নং সিআর ৫২২/১৩ ও সিআর ৩০০/১৩। এছাড়াও টাকা পরিশোধ করতে না পারলে সুদখোররা অনেক সময় বাড়ি এসে টাকার জন্য গালাগালি করে। অপমান করে।

ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঝিনাইদহ শহরে জমজমাটভাবে সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে মহাজনরা, ব্যাপারীপাড়ার টাইগার ও জাহিদ, পবহাটীর সোহরাব, একই গ্রামের আক্তার শাহ, বিশু মোলা, জাহাঙ্গীর, সিরাজুল, বাচ্চু, মিলন, মুক্ত, দিপুল, বছির মোলা, হারেজ মোলা, শহিদুল, মইনুল, উদয়পুরের শামসুল, আনারুল, আমিরুল ইসলাম, টিটো মণ্ডল, তোফাজ্জেল আহমেদ, মিন্টু মণ্ডল, নরু মোল্লা, মোফাজ্জেল লস্কর, লাল মিয়া, আলফা লস্কর, মহসিন বিশ্বাস, খাজুরা গ্রামের আব্দুল জোয়ারদার, হাসিবুল ও আত্তাপ মণ্ডল, কালিকাপুরের আলী আকবর, জিয়া ও ওসমান আলী, ব্যাপারীপাড়ার আব্দুর রশিদ চান, আতিক, হামদহ এলাকার টিপু সুলতান ও দিদার, কলাবাগানের আজিজ, ফিরোজ সরদার, মনা, আনোয়ার, আব্দুল আলীম, শহিদ, ধোপাঘাটার জোমারত, লাভলু, মন্টু বিশ্বাস, রবি হাওলাদার, কাঞ্চননগর মডার্নপাড়ার এরশাদ, ফিরোজ, সাজ্জাদ, মধুপুর দিঘল গ্রামের মিজান, আলমগীর, আব্দুল মান্নান, চাপড়ির মালেক মলিক ও ইরাদ আলীসহ হাজারো সুদখোর গোটা জেলাব্যাপী দাপিয়ে বেড়ালেও তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

এছাড়া বিভিন্ন ভুঁইফোড় সমিতি ও এনজিওর নামে দাদন ব্যবসা চালিয়ে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বলেন, 'এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর