এবি ব্যাংক থেকে গ্রাহকের ২০ লাখ টাকার এফডিআর গায়েব

ব্যাংক বীমা, অর্থনীতি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 16:25:00

অনেকের মতোই তিলে তিলে জমানো সঞ্চয় ব্যাংকে রেখে নির্ভার থাকতে চেয়েছিলেন কাজী কাকলী কালাম। এ জন্য এবি ব্যাংকে (আরব বাংলাদেশ ব্যাংক) টঙ্গী শাখায় এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট রিসিপ্ট) করেছিলেন।

টাকা তুলতে গিয়ে যা জানতে পেলেন তাতে তার চোখ কপালে ওঠার অবস্থা। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার পুরো ২০ লাখ টাকা হাপিস করে দিয়েছে। প্রথম প্রথম পাত্তাই দিতে চাচ্ছিলেন না শাখা ম্যানেজার। পরে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে গ্রাহককে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। গ্রাহকের আস্থা অর্জণের জন্য এক সপ্তাহ পরের তারিখ দিয়ে একটি চেক দিয়ে রাখেন। সেই চেকের টাকা তুলতে গেলে বাউন্স করেছে।

গ্রাহক কাকলী কালামের স্বামী আবুল কালাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ১০ লাখ করে দু’টি এফডিআর ছিল। গত আগস্ট মাসের ২০তারিখে টাকা তুলতে গিয়ে দেখি এফডিআর দু’টি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। আর টাকাটা তুলে নিয়েছেন শাখা ম্যানেজার মাহমুদুল হাসান।

শাখা ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলতে গেলে প্রথমে পাত্তাই দিতে চাচ্ছিলেন না। পরে যখন বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন করাই তখন বাধ্য হয়ে টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেন। টাকা দেওয়ার জন্য ম্যানেজার তার ব্যাক্তিগত একাউন্টের একটি চেক দেন। ৫দিন পরে টাকা উত্তোলন করার অনুরোধ করেন। যথারীতি টাকা তুলতে গেলে এবি ব্যাংকের সেই চেকটি বাউন্স করে। এরপর ২৮ আগস্ট অগ্রণী ব্যাংকের একটি শাখায় জমা দিলেও চেকটি বাউন্স করেছে। এরপর ম্যানেজারের কাছে টাকার জন্য চাপ দিলে ১২ অক্টোবর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তারপর থেকেই টালবাহানা করে যাচ্ছেন। টাকা পাওয়া নিয়ে ভীষণ শঙ্কার মধ্যে রয়েছি।

তিনি বলেন, এ রকম একটি ব্যাংক যদি গ্রাহকের টাকা হাওয়া করে দেয় তাহলে যাবো কোথায়। ব্যাংককে যদি বিশ্বাস করতে না পারি তাহলে বিশ্বাস করবো কাকে। মানুষের ইমোশনের বিষয়টি ব্যবহার করার জন্য নামের আগে সুন্দর করে আরব শব্দে জুড়ে নিয়েছেন। কোন ব্যাংক এমন জালিয়াতি করতে পারে আমার বিশ্বাসই হতে চাচ্ছে না। আমার এফডিআর ভাঙ্গা হলো, আমার স্বাক্ষর ছাড়াই, এটা ব্যাংক না অন্য কিছু।

এ বিষয়ে ম্যানেজার মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিষয়টি আমাদের হেড অফিস দেখছেন, আমাকে কোন কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। আমি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে পারবো না।

টঙ্গী শাখা ম্যানেজারের কাছে প্রশ্ন ছিল, অভিযোগ তো আপনার বিরুদ্ধে। গ্রাহক দাবি করেছে, আপনি তাদের ২০ লাখ টাকার এফডিআর আত্মসাৎ করেছেন। জবাবে ম্যানেজার বলেন, বিষয়টি আসলে তেমন না, গ্রাহকের অনুমতি সাপেক্ষেই টাকাটি একটি জায়গায় বিনিয়োগ করা হয়েছে।

পাল্টা প্রশ্ন ছিল, গ্রাহক অভিযোগ করছে কেনো, আর আপনিই বা নিজের একাউন্টের চেক দিতে গেলেন কেনো? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি আপনাকে আগেই বলেছি বিষয়টি হেড অফিস দেখছেন, আপনি হেড অফিসে যোগাযোগ করেন তারা ভালো বলতে পারবে।

এবি ব্যাংকের ডিএমডি কেএম মহিউদ্দিন আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমি বিষয়টি ভালো জানি না, ফাইন্যান্স বিভাগ দেখি। এখন (২৪ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টা) যেহেতু ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেছে, আমাকে সময় দেন আমি খবর নিয়ে আপনাকে জানানোর চেষ্টা করবো।

মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সকাল ৯টায় কেএম মহিউদ্দিনকে ফোন দিলে ‘একই মন্তব্য করে’ তিনি  বলেন, খোঁজ নিয়ে জানাব। 

ব্যাংক সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, এবি ব্যাংকের টপ ম্যানেজমেন্ট এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তাদের পরামর্শেই এমন ঘটনা ঘটেছে। যদি নাই হবে, তাহলে ম্যানেজার এখনও বহাল থাকে কি করে।

সূত্রটি দাবি করেছে, কাকলী কালাম ব্যাংকে গিয়ে জানতে পেরেছেন, আরও অনেক ঘটনা রয়েছে ভেতরে। মালিক পক্ষের যোগসাজসেই অনেকের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। নিজের দিকের স্টাফরা হুকুমের গোলাম মাত্র।

এ সম্পর্কিত আরও খবর