বাড়তি বরাদ্দ থেকে ফরাসি কোম্পানির পাওনা পরিশোধের নির্দেশ

বিবিধ, অর্থনীতি

আসিফ শওকত কল্লোল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 02:44:32

পরিকল্পনা কমিশনের বাড়তি বরাদ্দ থেকে জাতীয় স্মার্ট আইডি কার্ড উৎপাদন ও বিতরণ কাজে নিয়োজিত ফরাসি ওবারথার টেকনোলজিস কোম্পানির পাওনা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঐ ফরাসি কোম্পানির পাওনা পরিশোধ করতে অর্থ বিভাগের কাছে ২২০ কোটি ২১ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দেয়।

এরই প্রেক্ষিতে গত ১৩ নভেম্বর অপর এক চিঠিতে পরিকল্পনা কমিশনকে এ অর্থ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ফরাসি ঐ কোম্পানির পাওনা পরিশোধ করার কথা রয়েছে।

অর্থ বিভাগকে পাঠানো ইসি’র ঐ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ)’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের আওতায় স্মার্ট আইডি কার্ড তৈরি ও বিতরণ সংক্রান্ত চুক্তি (জি-৪ প্যাকেজ) অনুযায়ী ওবরাথার টেকনোলজির পাওনা পরিশোধের জন্য ২৬ মিলিয়ান মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি  মুদ্রায় ২২০ কোটি ২১ লাখ টাকার সমপরিমাণ বিশেষ বরাদ্দ প্রদানের জন্য গত ১৬ অক্টোবর প্রথমবার অর্থ বিভাগে চিঠি দেয় ইসি।

চিঠির প্রেক্ষিতে অর্থ বিভাগ জানায়, আইডিইএ প্রকল্পটি এখনও চলমান, যার মেয়াদ আগামী ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে। ফলে প্রস্তাবিত উক্ত দায় প্রকল্পের আওতায় পরিশোধ হওয়ায় নিয়মসিদ্ধ। তাই অর্থ বরাদ্দ পেতে পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগের নিদের্শনা দেওয়া হয়।

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, অর্থ বিভাগ আইডিএ প্রকল্পের অনুকূলে ২২০ কোটি ২১ লাখ টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ পরিকল্পনা কমিশনকে প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে।

এর আগে অর্থ বিভাগের কাছে চলতি অর্থ বাজেটের (২০১৮-১৯) অপ্রত্যাশিত ব্যবস্থাপনা খাত থেকে এ অর্থ বরাদ্দ চায় কমিশন। কিন্তু এ খাতে অর্থ ফুরিয়ে শেষ হয়ে গেছে বলে নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছিল।

জানা গেছে, গত ১০ অক্টোবর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা ও ফরাসি রাষ্ট্রদূত মেরি আনিক বুখডা ফরাসি কোম্পানির পাওনার বিষয়টি সুরাহা করতে বৈঠক করেন। বৈঠকে কোম্পানির পাওনা ৩২ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার থেকে কমিয়ে ২৬ মিলিয়ন ডলার করা হয়।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক ২০১৮ সালের ফেরুয়ারি পর্যন্ত এই প্রকল্পে সহযোগিতা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পটির গতি কম হওয়ায় অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হয়নি। পরে সহায়তা বাতিল হয়ে যায়। ফলে সরকারকে প্রাফমেন্ট গ্যারান্টি বাবদ ৬ দশমিক ৩৮ মিলিয়ন ডলার বিশ্বব্যাংককে ফেরত দিতে হবে।

সূত্র জানায়, আইডিইএ প্রকল্পের আওতায় নয় কোটি স্মার্ট কার্ড পারসোনালাইজেশন, মুদ্রণ ও বিতরণের জন্য ফরাসি প্রতিষ্ঠান ওবারথার টেকনোলজিসের সাথে চুক্তি করে ইসি। কিন্তু কোম্পানিটি নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মাত্র এক কোটি নয় লাখ স্মার্ট কার্ডের কাজ সম্পন্ন করে। ফলে শর্ত অনুযায়ী চুক্তি বাতিল করে ইসি। পরে নিজস্ব জনবল ব্যবহার করে স্মার্ট কার্ড  বিতরণের কাজ শুরু করে সংস্থাটি।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, কয়েক ধাপে বেড়ে বর্তমানে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮৮৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। যদিও প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৩৭৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। মূল প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পায় ২০১১ সালের ৪ অক্টোবর। ২০১১ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়ে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের জুন মাসে। পরবর্তীতে প্রকল্পটির মোট ব্যয় অপরিবর্তিত রেখে বাস্তবায়নকাল ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

প্রকল্পের প্রধান কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- ৯০ মিলিয়ন স্মার্ট কার্ড পারসোনালাইজেশন, মুদ্রণ ও বিতরণ; ১০ মিলিয়ন লেমিনেটিং আইডি কার্ড মুদ্রণ ও বিতরণ; সব উপজেলায় ইন্টারনেট সংযোগ ও ম্যানেজমেন্ট চার্জ; ডেটা সেন্টার (ডিসি) ও ডিজাস্টার রিকভারি সিস্টেম (ডিআরএস) সফটওয়ার ও সাপোর্ট সার্ভিস ব্যয়; কম্পিউটার ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ব্যয়; পরামর্শক সেবা ক্রয় এবং জনবলের বেতন ভাতা বাড়ানো।

এ সম্পর্কিত আরও খবর