সুদ হার কমাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শর্ত!

ব্যাংক বীমা, অর্থনীতি

আসিফ শওকত কল্লোল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 12:22:30

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সব ধরনের ঋণের সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার অঙ্গীকার থেকে সরে এসেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। তবে সরকারি ব্যাংক থেকে কম সুদে ঋণ বা আমানত পেলে শিল্প খাতের মেয়াদী ও চলতি মূলধন ঋণের সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার শর্ত দিয়েছে বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তারা। যদিও ইতোমধ্যে অনেক ব্যাংক শিল্প ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে এনেছে। তবে অন্যান্য খাতের সুদের হার বাজারভিত্তিক হবে।

বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)-এর নেতারা সম্প্রতি নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এসব সিন্ধান্ত নিয়েছেন। তবে এটি বাস্তবায়ন করতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে গত ২০ জুন বিএবি’র সভায় সব ঋণের সর্বোচ্চ সুদ হার ৯ শতাংশ এবং ছয় মাস মেয়াদী আমানতের সুদ হার ৬ শতাংশ করার ঘোষণা দেয়। গত ১ জুলাই থেকে এই সুদ হার কার্যকরের কথা থাকলেও তা করা হয়নি।

জানা গেছে, ৫৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ১০টি ব্যাংক এই অঙ্গিকার বাস্তবায়ন করেছে। ব্যাংকগুলো হলো- সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বাংলাদেশ কৃষি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, আইএফআইসি এবং ঢাকা ব্যাংক। তবে আমানতের সুদের হার কমানোয় জনতা ব্যাংকের আমানত প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা কমে যায়। ফলে জনতা ব্যাংক অর্থমন্ত্রণালয়ে সুদ হার বাড়ানোর আবেদন করে। এছাড়াও সোনালী, রূপালী ও অগ্রণী ব্যাংকেরও আমানত কমে যায়। তবে সোনালী ব্যাংক ছয় মাস মেয়াদী আমানতের সুদের হার অপরিবর্তিত রেখে অন্য আমানতের সুদের হার বাড়িয়ে দেয়।

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সুদ হারের পরিস্থিতি নিয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে। এখন প্রতিবেদন খতিয়ে দেখা হচ্ছে কোন কোন ব্যাংক সুদ হার নির্ধারণের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেনি। যেসব ব্যাংকে ঘোষিত সুদ ও কার্যকর সুদ হারের পার্থক্য পাওয়া যাবে তাদের কাছে ব্যাখ্যা চাইবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাখ্যার জবাব সন্তোষজনক না হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্বাহী পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ঋণের সুদ হারের বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিতভাবে তদারকি করে। ফলে এই হার কমছে। আগামীতে আরো কমে আসবে বলে আশা করছি।’

বিএবি সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আগে তহবিল ব্যবস্থাপনায় ব্যয় কমাতে চায়। পরে সুদ হার কমাবে। কারণ বর্তমানে বাজারে কম সুদে আমানত পাওয়া যাচ্ছে না। বেসরকারি ব্যাংকগুলো মূলত সরকারি ব্যাংক থেকে তারল্য নিয়ে কিছু অংশ ৬ শতাংশ সুদে ঋণ দিত। কিন্তু সরকারি ব্যাংকগুলো এখন আর এই আমানত দিচ্ছে না।

বর্তমানে ৪৭টি বেসরকারি ব্যাংক ৯ শতাংশের বেশি হারে সুদ নিচ্ছে। যার মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক ১১-১২.৫ শতাংশ, মার্কেন্টাইল ৯-১২, সাউথ বাংলা ব্যাংক ১৪, ডাচ-বাংলা ৯-১৩, সাউথ-ইস্ট ৯-১২, সিটি ব্যাংক ৯-১৬, ইউসিবি ১১-১৩, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ৯-১৪.৫, ন্যাশনাল ১২, যমুনা ১২.৫-১৩, মেঘনা ১৪-১৫, বাংলাদেশ কমার্স ৯-১৪, স্ট্যান্ডার্ড ৯-১২, এনসিসি ৯.৫-১৮, প্রিমিয়ার ৯-১৬, ওয়ান ব্যাংক ১০-১৬, পূবালী ৯-১৩.৫, সীমান্ত ব্যাংক ১১-১২, মিডল্যান্ড ৯-১৮, এবি ১৩.৫-১৬ শতাংশে, মধুমতি ৯.৫-১২.৫, ট্রাস্ট ৯.৫-১৩, উত্তরা ব্যাংক ১০-১১ এবং প্রাইম ব্যাংক ৯-১৭ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে।

এছাড়াও তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেশি হওয়ায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো শিল্প খাতে ঋণের সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামাতে পারেনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর