খেলাপি পাট ব্যবসায়ীদের ব্লক সুবিধায় পরিবর্তন চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

আসিফ শওকত কল্লোল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 17:13:26

ঋণ খেলাপি পাট ব্যবসায়ীদের দেওয়া ব্লক সুবিধায় পরিবর্তন আনতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। তা না হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় পাট ব্যবসায়ীদের খেলাপি ঋণের জন্য ব্লক সুবিধা দেওয়া হলে আবর্তনযোগ্য স্কিমের অর্থ ১০ বছরের জন্য আটকে যাবে, স্কিম অকার্যকর হয়ে পড়বে একং ঋণের অর্থ আদায় করা কঠিন হবে। এছাড়া পাট ব্যবসায়ীদের দেওয়া ৭ শতাংশ হারে স্বল্প মেয়াদী প্রিশিপমেন্ট ঋণ সুবিধার মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি শাখার মহাব্যবস্থাপক আবু ফরাহ মো. নাছের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলামকে এসব কথা জানানো হয়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইতোমধ্যেই পাট রপ্তানি খাতে বিনিয়োগ করা রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ঋণ খেলাপির অভিযোগে অনেক পাট ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে এবং প্রতারণার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা করা হয়েছে। তাই এসব মামলা বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকার-কাস্টমার সর্ম্পকের ভিত্তিতে ঋণের সুদ ও আবশ্যকীয় ক্ষেত্রে আসল বা এর অংশবিশেষ ব্লক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে দুই বছরের মরাটরিয়াম সুবিধাসহ ১০ বছরে পরিশোধের সুবিধা দেওয়া যেতে পারে।

ইতোপূর্বে ব্লক সুবিধা গ্রহণকারী ঋণগ্রহীতারা এবং ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাদের ঋণ অনিয়মিত ও শ্রেণি বিন্যাসিত হয়েছে তাদেরও এ সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। এসব ব্লক ঋণের বিপরীতে প্রথম বছর ঘূর্ণায়মান মূলধন পরিমাণ রাখা হয়েছিল ২০০ কোটি। পরবর্তীতে যা ৩০০ ও ৫০০ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।

এদিকে পাট মন্ত্রণালয় শিল্পের উন্নয়নের জন্য তহবিল গঠনের উদ্দেশ্যে নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) চেয়ারম্যান ড. মো. মাহমুদুল হাসানকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ১০ হাজার কোটি টাকার এ তহবিল থেকে সুদ ভর্তুকির পর আড়াই শতাংশ হারে ঋণ পাবেন পাট চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

গত ২৪ এপিল ২০১৭ সালে কাঁচা পাট রপ্তানিকারদের ঋণ হিসাবের জন্য ব্লক সুবিধার বিষয়টি সার্কুলারে উল্লেখ ছিল। ফলে তা পরিপালনে ব্যাংকগুলোকে সমস্যায় পড়তে হয়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, পাটখাতের জন্য প্রবর্তিত বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় দেওয়া ঋণসহ বিশেষ সুবিধা সম্বলিত ঋণ এই ব্লক সুবিধায় প্রযোজ্য হবে না, সুবিধা সম্বলিত ঋণ বকেয়া থাকা অবস্থায় কারো ঋণের জন্য ব্লক সুবিধা বিবেচনা করা যাবে না এবং ব্লক একাউন্টে স্থানান্তরিত ঋণের ওপর কস্ট অফ ফান্ড হারে সুদ আরোপ করা যেতে পারে। এছাড়া ব্লক সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি সার্কুলার অনুযায়ী প্রযোজ্য ডাউন পেমেন্ট গ্রহণ এবং নতুন ঋণ মঞ্জুরীর ক্ষেত্রে ন্যূনতম জমা গ্রহণের বিষয়টি ব্যাংকার-গ্রাহক সর্ম্পকের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকই নির্ধারণ করতে পারবে। তবে ঋণ ঝুঁকি নিরসন কৌশলের আওতায় ব্যাংকার গ্রাহক সর্ম্পকের ভিত্তিতে জামানত গ্রহণ করার শর্তারোপ করা যেতে পারে।

এছাড়া ব্লক সুবিধা প্রাপ্ত ঋণের পরিশোধসূচি অনুসারে পর পর চারটি কিস্তির অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্লক সুবিধা বাতিল হবে এবং প্রচলিত সুদ হারে ও প্রচলিত নিয়মে ঋণ আদায়যোগ্য হবে মর্মে শর্তারোপ করা যেতে পারে। ঋণ হিসাবগুলো ব্লক একাউন্টে স্থানান্তর হয়ে গেলে বিচারাধীন এ সংক্রান্ত চলমান মামলাগুলো সোলেনামার মাধ্যমে উভয়পক্ষ মাধ্যমে নিস্পত্তি করার বিধান রাখা যেতে পারে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর