বাজেটে তামাক কর  কিশোর-তরুণদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি 

বাজেট, অর্থনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 15:54:10

বাজেটে তামাকের কর কাঠামোর প্রস্তাব তামাক কোম্পানিকে নতুন ধূমপায়ী সৃষ্টি এবং পুরনো ধূমপায়ীকে উৎসাহী করতে সহযোগিতা করবে উল্লেখ করে তামাক বিরোধী সংগঠনের নেতা রা বলেন, কিশোর -তরুণদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি বয়ে আনবে এই প্রস্তাব। 

বৃহস্পতিবার (৩ জুন) প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যত সংগঠন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা), বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) ও তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ)- এ আশংঙ্কা প্রকাশ করেছ।

সংগঠনের নেতারা বলেন, তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকের ব্যবহার ৫% এ কমিয়ে আনার লক্ষ্য মাত্রা থাকলেও, প্রস্তাবিত বাজেটের কর কাঠামো তামাক ব্যবহার কমাতে কোন ধরনের ভূমিকা রাখবে না।  বাংলাদেশে প্রায় ৭২ ভাগ মানুষ নিম্নস্তরের সিগারেট সেবন করে। নিম্ন ও মধ্যমস্তর মিলে ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৮৮ ভাগ। এই দুই স্তরের সিগারেটের মূল্য না বাড়ায় ব্যবহারের পরিমাণ বাড়বে এবং সিগারেট সহজলভ্য হওয়ায় কিশোর-তরুণরা ধূমপান শুরু করতে উৎসাহিত হবে। একইসাথে জর্দা, গুল ও বিড়ির মূল্য অপরিবর্তিত থাকায় এগুলোর ব্যবহারকারীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক হুমকি বয়ে আনবে।

তারা আরও বলেন, কর বৃদ্ধি তামাক ব্যবহার ত্যাগে কার্যকর ব্যবস্থা হলেও এ বাজেটে বিষয়টি উপেক্ষিত হয়েছে। বিশেষ করে কভিড মহামারীকালে এটি মূখ্য বিবেচ্য হলেও সকারের কাছে তা গুরুত্ব পায়নি।

এই প্রতিক্রিয়ায় তারা তামাকজাত দ্রব্যের ওপর এই মূল্য ও কর প্রস্তাব হতাশাজনক উল্লেখ করে বলেছে, এর ফলে তামাক ব্যবহারজনিত অসুস্থ্যতা ও মৃত্যু মারাত্বক আকার ধারণ করবে একইসাথে সুনির্দিষ্ট করারোপ পদ্ধতির প্রবর্তন না করায় সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে, কিন্তু তামাক কোম্পানি লাভবান হবে। 

তামাক বিরোধী সংগঠনসমূহের মতে, নিম্ন স্তরের সিগারেট, জর্দা, গুল ও বিড়ির মূল্যে কোন পরিবর্তন না করায় বিশেষকরে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যঝুঁকি ভয়াবহভাবে বেড়ে যাবে। একইসঙ্গে তাদের তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হারও বাড়বে। তামাক ব্যবহারজনিত রোগ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার ফলে দেশ বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে। 

তারা আরো বলেন, বাংলাদেশে সিগারেটের অধিকাংশ বিক্রি হয় খুচরা শলাকা হিসাবে। সিগারেটের উচ্চ স্তরে ১০ শলাকার মূল্য মাত্র ৫ টাকা ও প্রিমিয়াম স্তরের মূল্য মাত্র ৭ টাকা বৃদ্ধিতে খুচরা শলাকার দামে কোন পরিবর্তন আসবে না। এবং এই বৃদ্ধি এক বছরে মূল্যস্ফীতি ও মানুষের ক্রয়-স্বামর্থ বৃদ্ধির চেয়ে কম হওয়ায় এখানেও ব্যবহারকারি বাড়বে। সার্বিকভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের লক্ষ্যও বাধাগ্রস্ত হবে।

প্রতিক্রিয়ায় তারা বলেন, দেশের তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপের দাবীসহ মূল্য ও কর প্রস্তাব সকারের কাছে পেশ করে। তারা বলেন, প্রস্তাবিত পরিমাণে মূল্য ও কর নির্ধারণ, সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করা হলে ১১ লক্ষ প্রাপ্ত বয়স্ক ধূমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দেবে এবং ৮ লক্ষ তরুণ নতুন করে ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে। পাশাপাশি ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। এতে দীর্ঘ মেয়াদে ৮ লক্ষ মানুষের জীবন রক্ষা হবে। একইসঙ্গে রাজস্ব আয় প্রায় ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবে তার কোনো প্রতিফলন নেই। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বিএনটিটিপি এর কনভেনর ড. রুমানা হক বলেন, বাজেট প্রস্তাবে নিম্নস্তর ও মধ্যম স্তরের সিগারেটে কোনো ধরনের মূল্য পরিবর্তন না করে এই দুই স্তরের ১০ শলাকা সিগারেটের দাম আগের বছরের মতোই ৩৯ টাকা ও ৬৩ টাকা বহাল রাখা হয়েছে এবং জর্দা, গুল ও বিড়ির মূল্যেও কোন পরিবর্তন আনা হয়নি। অথচ একইসময়ে মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি এবং নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য দ্রব্যের মূল্যও বেড়েছে। সেই বিবেচনায় মূল্য না বাড়ানোর ফলে এসব তামাকজাত দ্রব্য আগের বছরের তুলনায় আরো সহজলভ্য হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, করারোপে অ্যাডভেলোরেম পদ্ধতি বহাল থাকায় উচ্চ স্তরের মূল্য বৃদ্ধি থেকে তামাক কোম্পানি লাভবান হবে। একটি বহুজাতিক তামাক কোম্পানির নিজস্ব হিসাব মতে ২০১৮ সালে তারা ২৮% মুনাফা অর্জন করে। যা অন্য কোন ব্যবসাতেই সম্ভব না। ওই একই তামাক কোম্পানির নিজস্ব নথিতে দেখা যায়, ২০০৯ থেকে ২০১৮ এই ১০ বছরে তাদের উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণ কিন্তু একই সময়ে তাদের মুনাফা বেড়েছে পাঁচ গুণ। আমাদের ত্রুটিপূর্ণ কর ব্যবস্থার কারণে এটি হচ্ছে।

বৃহত্তর জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও রাজস্ব আয় বৃদ্ধি বিবেচনায় মাননীয় অর্থমন্ত্রীর এই প্রস্তাব প্ররিবর্তন করে মহান জাতীয় সংসদে আমাদের প্রস্তাব অনুসারে সুনির্দিষ্ট করারোপ পদ্ধতির প্রবর্তন ও সকল তামাকজাত দ্রব্যের ওপর যৌক্তিক পরিমানে মূল্য ও কর নির্ধারণ করা হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর