ঐতিহ্যের খাদিতে ফিরছে প্রাণ, খুশি বিক্রেতারা

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

আবদুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুমিল্লা | 2023-08-31 18:40:22

কুমিল্লা’র নামের সঙ্গে খাদি কাপড়ের নামটি অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। খাদি কাপড়কে বলা হয়ে থাকে কুমিল্লার ঐতিহ্যের স্মারক। দেশ-বিদেশে এখনো খাদি কাপড়ের চাহিদা ব্যাপক। কিন্তু গত বছর দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হলে ভাটা পড়ে খাদি কাপড় বিক্রিতে। এছাড়া গত ঈদুল ফিতরে লকডাউনের কারণে দোকানপাট বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েন কুমিল্লার ঐহিত্য খাদি শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। এরপর দোকানপাট চালু হলেও খাদি কাপড় বিক্রি ও উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে।

এদিকে, খাদি কাপড় ব্যবসায়িদের প্রত্যাশা ছিলো, এবারের ঈদুল ফিতরে তাদের বেচাকেনা হবে জমজমাট। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ তাঁদের সেই প্রত্যাশাকে অনেকটাই অনিশ্চিত করে তোলে। অবশেষে সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট চালু রাখার অনুমুতি দিলে স্বস্তি ফিরে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে চাহিদা বেড়েছে কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী খাদি কাপড়ে। আর এর মধ্য দিয়েই প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে ঐতিহ্যের খাদিতে। এতে বিক্রেতারাও বেশ খুশি।

রোববার (৯ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কুমিল্লা নগরীর খাদি দোকানগুলোতে ঘুরে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে। বর্তমানে ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে খাদি পাঞ্জাবি। প্রায় প্রতিটি দোকানেই বিক্রেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন খাদি কাপড় বিক্রিতে। কম দামের মধ্যে ভালো খাদি কাপড় কিনতে পেরে খুশি ক্রেতারাও।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লা জেলায় খাদি কাপড় বিক্রির অন্তত চার শতাধিক দোকান রয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র কুমিল্লা নগরীতেই রয়েছে তিন শতাধিক দোকান। ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে সমগ্র ভারতবর্ষে অসহযোগ আন্দোলনের সময় কুমিল্লায় খাদি শিল্প প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সেই সময় বিদেশি পণ্য বর্জন করার জন্য ডাক ওঠে। সর্বত্র এক আওয়াজ ‘মোটা কাপড়-মোটা ভাত’। সেই মোটা কাপড় এখন মিহি হয়েছে। কাপড়ে লেগেছে নান্দনিকতার ছোঁয়া। বর্তমান খাদির পাঞ্জাবি, শার্ট, প্যান্ট, ফতুয়া, চাদর ও থ্রিপিস বিক্রি হচ্ছে পুরো দেশেই। কুমিল্লার ঐতিহ্যের খাদি কাপড় যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও।

রোববার (৯মে) সরেজমিনে নগরীর কান্দিরপাড় এলাকার (লাকসাম রোড) খাদি জ্যোৎস্না স্টোরে গিয়ে দেখা গেছে, ক্রেতারা ভিড় করছেন খাদি কাপড় কিনতে। তাঁরা দরদাম করে স্বস্তিতে খাদি কাপড় কিনে বাড়ি ফিরছেন।  

খাদি জ্যোৎস্না স্টোরের মালিক রতন পাল জানান, আমরা বেশিরভাগ খাদি কাপড় বিক্রি করি রমজানের ঈদকে (ঈদুল ফিতর) কেন্দ্র করে। অতীতে শুধুমাত্র রমজানের ঈদেই কুমিল্লায় প্রায় শত কোটি টাকার খাদি কাপড় বিক্রি হতো। ব্যবসায়ীদের পুরো বছরের ঘাটতি পুষে যেতো রোজার ঈদে।

কিন্তু গত বছর লকডাউনে দোকান বন্ধ থাকায় আমরা ক্ষতির মুখে পড়ি। এ বছরও দোকান খোলা নিয়ে প্রথমে অনিশ্চয়তা ছিলো, কিন্তু অবশেষে দোকান চালু করায় আমরা এখন স্বস্তিতে আছি। অতীতের মতো না হলেও এ বছর বিক্রি বেশ ভালোই হচ্ছে। মানুষ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খাদি কাপড় কিনতে আসছেন। করোনাকালের এই বিক্রিতে আমরা বেশ খুশি। আশা করছি আসন্ন ঈদে ভালোই লাভ হবে খাদি ব্যবসায়ীদের।

একই এলাকার খাদি শিল্প ভবনের মালিক মেহেরাজ হোসেন বলেন, খাদি কাপড় কুমিল্লার ঐতিহ্যের প্রতীক। এক সময় খাদির সকল পণ্যেরই ব্যাপক চাহিদা ছিলো দেশ-বিদেশে। কিন্তু বর্তমানে ভারতীয় কাপড়ের আগ্রাসনে খাদির থ্রিপিসসহ অন্যান্য কাপড়ের আগের মতো চাহিদা নেই। তবে এখন মানুষের চাহিদা বেশি খাদি পাঞ্জাবিতে। আমরা ক্রেতাদের কাছে বেশি পাঞ্জাবি বিক্রি করছি। এরপরও বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্যান্য পণ্যও ভালোই বিক্রি হচ্ছে।

কুমিল্লা নগরীতে খাদি কাপড় কিনতে আসা পারুল বেগম বলেন, আমাদের পরিবারের সদস্যলা নিয়মিত খাদির কাপড় পরেন। এ বছরও ঈদ উপলক্ষে পরিবারের সদস্যদের জন্য খাদি কাপড় কিনেছি। ছেলেদের জন্য খাদি পাঞ্জাবি কিনেছি। এছাড়া খাদি কাপড়ের দামও মানুষের সামর্থের মধ্যে বলে জানান তিনি।

আরেক তরুণ ক্রেতা জাকির হোসেন বলেন, প্রতি বছরই ঈদে খাদির পাঞ্জাবি পরিধান করি। ৫-৬’শ টাকার মধ্যে খাদির ভালোমানের পাঞ্জাবি পাওয়া যায়। এছাড়া খাদির পাঞ্জাবি দেখতেও বেশ সুন্দর, আর পরতেও আরাম লাগে। তাই তরুণরা ঈদে খাদির পাঞ্জাবি বেশি কিনছেন বলে জানান তিনি।   

এ সম্পর্কিত আরও খবর