ওষুধনীতি: হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও জাফরুল্লাহ চৌধুরী

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

অ্যাড. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া | 2023-08-30 01:04:58

বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে আশির দশকের কিছু সময় পর্যন্ত এ দেশের ওষুধশিল্প গুটি কয়েক মাল্টিন্যাশনাল ওষুধ কোম্পানির হাতে জিম্মি ছিল। ওষুধের মূল্য, মান ও বাজার একচেটিয়াভাবে ওই কোম্পানিগুলো নিয়ন্ত্রণ করত।

সরকার বা ওষুধ প্রশাসনের তেমন কিছুই করার ছিল না। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ওষুধ উৎপাদন, মূল্য নির্ধারণ, বাজারজাতকরণ ও মান নিয়ন্ত্রণের জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, যা ওষুধনীতি হিসেবে পরিচিত। যার ফলে যেসব দেশ সাধারণ মানের বা কম দামের ওষুধ উৎপাদনে বিদেশি কোম্পানিগুলোর ওপর নির্ভর করত, সেসব দেশ আজ বিশ্বের ৭০টিরও বেশি দেশে মানসম্মত ওষুধ রফতানি করে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আয় করছে।

এই ওষুধনীতি প্রণয়নে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যে ক'জনের সহায়তা নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দানকারী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। যিনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা, স্বাস্থ্যসেবাসহ অনেক ভালো কাজের উদ্যোক্তা, নির্লোভ, সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলা একজন মানুষ।

ওষুধনীতি প্রণয়নের ফলে দেশের ওষুধশিল্পে ব্যাপক উন্নয়ন হয়। এখন এই শিল্পে দেশ-বিদেশে উৎপাদন, বিক্রয়, বিপণন বা বাজারজাতকরণে লাখ লাখ লোক জড়িত। বিশাল কর্মসংস্থান ও দেশ-বিদেশে বাজার পাওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে।

ওষুধনীতি নিয়ে আলোচনা অনেক ব্যাপক, আমি সেদিকে যাচ্ছি না। মূলত তিনটি বিষয়ে আলোচনা করব। এই তিনটি বিষয়ই বাংলাদেশের ওষুধশিল্পকে আজ প্রতিষ্ঠিত করেছে। আজ থেকে ৪০-৪৫ বছর আগে মাল্টিপল কোম্পানি যে দামে সাধারণ বা কমন ওষুধ (যেমন প্যারাসিটামল) বিক্রি করত, দাম বিবেচনায় এখনো এগুলো এত বৃদ্ধি পায়নি শুধু ওষুধনীতির কারণে। ওষুধ নীতির তিনটি বিষয়:
★ ওষুধগুলো বিক্রি হবে জেনেটিক নামে।
★ দাম ও মান নিয়ন্ত্রণে একটি কমিটি হবে, ফলে কোম্পানিগুলো বেশি দামে নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি করতে পারবে না।
★ বিদেশি কোম্পানিগুলো সাধারণ মান বা কম দামের প্রোডাক্ট ও সিরাপ উৎপাদন করতে পারবে না। যেমন-এন্টাসিড সিরাপ, আয়রন সিরাপ,প্যারাসিটামল, মেট্রোনিডাজল, প্যানটোপ্রাজলসহ আরো কিছু প্রোডাক্ট শুধুমাত্র দেশীয় কোম্পানিগুলো উৎপাদন ও বিপণন করতে পারবে। সেই সাথে বিদেশি কোম্পানিগুলোর উৎপাদনের ওপর করারোপ ও দেশি কোম্পানিগুলোর কর রেয়াত ও সহজ শর্তে ব্যাংক লোনের সুবিধা করে দেশি কোম্পানিগুলোকে এগিয়ে নিয়ে আসে।

ফলে উৎপাদন ও বিপণনে দেশি কোম্পানিগুলো এগিয়ে যায় এবং মনোপলি ব্যবসা করা বিদেশিকোম্পানিগুলো পিছিয়ে পড়ে। এজন্য এরশাদকে অনেক বিদেশি রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে হয়েছিল।

আজকের স্কয়ার, বেক্সিমকোসহ সব ওষুধ উৎপাদক কোম্পানি এরশাদের ওষুধনীতির সুফল ভোগ করছে।

এছাড়া এরশাদ ডাক্তারদের জন্য একটি নীতি প্রণয়ন করেছিলেন। ডাক্তার নির্ধারিত ডিউটির বাইরে কত সময় প্রাইভেট চেম্বার করতে পারবেন, রোগীর ফি কত হবে ইত্যাদি। বিসিএস স্বাস্থ্য পাস করা ডাক্তারদের বাধ্যতামূলকভাবে তিন বছর তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করতে হবে।

বর্তমানে ওষুধনীতিতে অনেক কাটছাঁট হয়েছে, যদি ওষুধনীতি পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করা যেত, তাহলে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের আর ডাক্তারদের ভিজিট করতে হতো না।

এরশাদ অনেক সংস্কারমূলক কাজ করেছেন। ওষুধ নীতি তার এমনই একটি সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা, যার ফল এখন দেশের মানুষ পাচ্ছে, আর এই কাজকে বাস্তবে রূপদানের জন্য যিনি নিরলস পরিশ্রম করেছেন বা মূল দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি হলেন একজন যোদ্ধা ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর